হিংসা ও রিগিং ছাড়া ভোট করালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামানত জব্দ হবে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নেতাজি ইন্ডোরে বিজেপির কর্মীসভায় এই মন্তব্য করেন তিনি। তাঁকে পাল্টা জবাবও দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে জোর জবরদস্তি করে সরকার গড়ার চেষ্টা করছে বিজেপি।
নরেন্দ্র মোদীর পরে রবিবার নেতাজি ইন্ডোর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দেন অমিত শাহ। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেন, আপনার সময় শেষ। ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতা দখল করবে, বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেবেন। শাহ আরও বলেন, 'বহু বছর বাংলা কমিউনিস্টদের হাতে ছিল। তার পর মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দিয়ে সরকার গড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মহান বাংলাকে মমতা দিদি অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, অপরাধ, বোমা বিস্ফোরণ ও হিন্দুদের উপর অত্যাচারের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। গোটা দেশে নির্বাচনী হিংসা বন্ধ হলেও, বাংলায় আজও নির্বাচনী হিংসা চলে, বিজেপ কর্মীদের ধরে ধরে খুন করা হয়।এই বাংলায় ২০২১ সালে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা হয়েছে। অনেক বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছিল দিদির শপথের পরে। ওদের কতদিন বাঁচাবেন। আপনার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। ২৬ সালে বিজেপি সরকার গড়বে। আমি সবাইকে বলতে চাই, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে এখানে তৃণমূল সরকার গেলেই বিজেপি কর্মীদের খুনীদের পাতাল থেকে তুলে শাস্তি দেওয়া হবে।' এরপরেই অমিত শাহ বলেন, 'দিদি হিম্মত থাকলে হিংসা, র্যাগিং বাদ দিয়ে নির্বাচন করে দেখান। আপনার নিজেরই জামানত জব্দ করে দেবে বাংলার মানষ।'
পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, 'বাংলায় আসছেন, রাজ্য সরকারের স্টেডিয়ামে কর্মীসভা করেছেন। রাজ্যের অডিটোরিয়ামে সভা করার অনুমতি সরকার দিয়েছে।এরম কী হত তৃণমূল যদি এন্য রাজ্যে যেত, গুজরাতে যেত। এই রাজ্যের সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিশ্বাস করেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে। তাতে আমাদের আদর্শে মিল থাকুক বা না থাকুক। কী বোঝেন অমিত শাহ মহাশয়? নির্বাচনটা কে করবে, জাতীয় নির্বাচন কমিশন তো আপনার হাতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিংসা করান বলেছেন। এটা কার ব্যর্থতা? অপারেশন সিঁদুরের নাম নিয়ে কিছু বলিনি। যখন এটা বাস্তব সত্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৫ টি দেশে ঘুরেছেন, দেশের কথা বলেছেন। আপনাদের সেই সময়টাই হল মেয়েদের সঙ্গে অপমান সূচকের খেলা খেলতে। প্রধানমন্ত্রীর সভায় অপারেশন বেঙ্গলের কথা উঠেছিল। আজও বলেছে। কীসের অপারেশন? এর মানেটা কী? আপনারা জোর জবরদস্তি করে চেষ্টা করছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে। মেয়েদের কাছে পবিত্র সিঁদুর নিয়ে রাজনীতি করছেন।'
আরজি কর নিয়েও শাহকে জবাব দিয়েছেন চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, 'আরজি করে অপরাধীকে আমরা ধরেছি। রাজ্য সরকারের পুলিশ ধরেছে। কিন্তু উন্নাও, হাথরসে কী হয়েছে? আপনাদের ভাবতে হবে। মেয়েদের নিয়ে খেলা করবেন না।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি করেন, বাংলা দিয়েই অনুপ্রবেশ হয়। এর পিছনে সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জন্য জমি না দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। অমিত শাহ বলেন, 'মমতাদি বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য খুলে দিয়েছেন। মমতা দিদি বেড়া দেওয়ার জন্য জমি দেননি। জমি পেলেই একটা পাখিও ঢুকবে না।' জবাবে চন্দ্রিমা বলেন, 'অনুপ্রবেশ রোখার দায়িত্ব কার। বিএসএফ কার। ব্যর্থতা প্রমাণ করছেন অমিত শাহ মহাশয়। আপনার পদত্যাগ করা উচিত। নিজেই একথা বলছেন। পহেলগাঁওয়ে আপনার কাছে খবর ছিল না। আর ওখানে যারা ছিল তারা কী করল? কাশ্মীর পুলিশ কাদের অধীনে। আপনাদের উদাসীনতায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জঙ্গি ধরতে পারেননি। আমরা দেশের স্বার্থে রাজনীতির কথা বলি না। বাংলার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছেন না। আমরা টাকা তুলে দিচ্ছি। এমন ভাব করছেন যে আপনারা গোটাটা করছেন। ধিক্কার জানায়। মাছের তেলে মাছ ভাজছেন। কেন আবাস যোজনার টাকা আসছে না। ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছেন না। কুমীরের কান্না কাঁদছেন।'