সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা। এর জেরে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবাও। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শহরে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর খবরও মিলেছে। প্রবল বৃষ্টিতে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ,যাদবপুর, পার্কসার্কাস, তারাতলা, একবালপুর, ভবানীপুর-সহ সর্বত্র যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর জল। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বেরনোই কাল হল ফল বিক্রেতা বাবু কুণ্ডুর। জানা যাচ্ছে, এদিন সকালে নেতাজিনগর এলাকা দিয়ে সাইকেলে যাচ্ছিলেন তিনি। কোনও কারণে বিদ্যুতের খুঁটিতে হাত দেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তড়িদাহত হয়ে ছিটকে পড়েন রাস্তায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। একবালপুরে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধের। তাঁর নাম জিতেন্দ্র সিং। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এছাড়াও কালিকাপুর, গড়িয়াহাট, বেনিয়াপুকুর থেকেও মৃত্যুর খবর মিলেছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মোট মৃতের সংখ্যা ৭। তবে তা বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
কলকাতা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫ জন থেকে বেড়ে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকার হরিদেবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাস্তায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা
পরিস্থিতি সামাল দিতে সিইএসসি-র কর্মী-আধিকারিকেরা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। সংস্থা সূত্রের খবর, যেসব এলাকার পরিস্থিতি জটিল, সেখানে আগে গিয়ে দেখা হচ্ছে। বহু এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধও করে রাখা আছে। পরিস্থিতি বুঝে তার পর সংযোগ আবার চালু করা হবে। অন্য দিকে, রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের এলাকার পরিস্থিতি মোটের উপর নিয়ন্ত্রণে। তবে সব এলাকার উপর কড়া নজর রাখা হয়েছে। ছোট দল তৈরি করে সমস্যা মেটানো হচ্ছে। আপাতত সাবধানতার কারণে সল্টলেকের সেক্টর ৩ এবং সেক্টর ৫-এর সাবস্টেশন বন্ধ রাখা আছে। ফলে সেই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। পরিস্থিতির উন্নতি হলে দ্রুত তা চালু করা হবে।
তুমুল বৃষ্টি
রাতভর তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতা, সল্টলেক, হাওড়া এবং লাগোয়া এলাকা বানভাসি পরিস্থিতি। নিচু এলাকাগুলিতে জল দাঁড়িয়ে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। কলকাতা এবং শহরতলির নীচু এলাকাগুলিতেও জল জমেছে। পাশাপাশি কলকাতার অধিকাংশ রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে পড়ায় যানবাহন চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। প্রভাব পড়েছে ট্রেন চলাচলেও। বহু জায়গায় লাইনে জল দাঁড়িয়ে পড়ায় একাধিক শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত। হাওড়া, শিয়ালদা, চিৎপুরে কারশেডে জল জমে গেছে। জল জমার কারণে শিয়ালদার মেন, বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত। দমদম স্টেশনেও ট্রেন আসতে পারছে না। সেখানে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে, যখন ট্রেন ঢুকতে পারবে, তখন তা শিয়ালদহের দিকে যাবে। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না। হাওড়াতেও বৃষ্টির কারণে ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। কলকাতা মেট্রো রেলের কয়েকটি স্টেশনে জল ঢুকে গেছে। ফলে মেট্রো চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।