বছরের নতুন ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা হাতে পেলেই বাঙালিরা যেই দিনগুলিতে সবার আগে চোখ বোলায়, তার মধ্যে দুর্গা পুজো একটি। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ (Bengali Festivals) এই দুর্গা পুজো (Durga Puja)। জাকজমকপূর্ণভাবে পুজোর উদযাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্বের বাঙালিরা (Bangali)।
শুরু হয়ে গেছে দুর্গা পুজোর (Durga Puja 2022) কাউন্টডাউন। তিলোত্তমার (Kolkata Durga Puja) বিভিন্ন প্রান্তর ইতিমধ্যে সেজে উঠেছে পুজোর আবহে। পুজোর বেশ কিছু মাস আগে থেকেই শুরু হয় যায় প্যান্ডেল (Puja Pandals) তৈরি কাজ। গত কয়েক বছর ধরে থিম পুজোর (Theme Pujo) প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে বেশীরভাগ ক্লাবগুলি। সেরার সেরা লড়াইয়ে জোড়দার টেক্কা চলে ক্লাবে -ক্লাবে। দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় পুজো হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব (Hazra Park Durgotsav)। কীভাবে সেজে উঠছে এবারের মণ্ডপ? এবছরের থিমই বা কী? আসুন খুঁটিনাটি জানা যাক...
আরও পড়ুন: ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান ভবানীপুর ৭৫ পল্লীর! এবারের পুজোয় থাকছে বিশেষ চমক
হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের এবছর ৮০ তম বর্ষ। এবছরের বিষয় ও উপস্থাপনা 'তান্ডব' (Tandav)। বিজ্ঞান বলে হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত আছে সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী তান্ডবের সেই বৈজ্ঞানিক সত্য যা প্রতিদিন অনবরত ঘটে চলেছে সৃষ্টির অগোচরে। মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্তরে ঘটে চলা পারমানবিক অস্থিরতায় তৈরি হয় ধ্বংস আর সৃষ্টির রোজনামচা। ডমরুর ধ্বনিতে ত্বরান্বিত মহাশক্তির কয়ান্টারা স্তরে স্তরে তরঙ্গায়িত হয়ে পৌঁছে যায় মানব শরীরে। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড হয়ে যায় এক একক শক্তি আধার। আবার সেই একক শক্তি রূপান্তরিত হয় বহুমাত্রিক সমূহে। অর্থাৎ তান্ডব কোনও বিশেষ মুহূর্তে ঘটা একটা ঘটনামাত্র নয়, প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্বের এক নিরন্তর প্রক্রিয়া যা, আমরা সচরাচর জেনে থাকি ঐশ্বরিক প্রেক্ষিতে।
অবাধ বৃষ্টি যখন ধুয়ে দিয়ে যায় বিরাট স্থলভূমি, তার উন্মত্ত মত্ততায় হেরে যাওয়া, ঘরছাড়া আধমরা প্রাণগুলোর আশ্রয় হয় পুনর্বাসন কেন্দ্র। প্রচন্ড ঝড়ের দাপটে আছড়ে পড়া গাছেদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রকৃতি দেখে প্রশ্বাসের ভীষণ অবক্ষয়। অবক্ষয়িত গোটা মানব সমাজ। শুরু হয় আদিম বনাম সভ্যতার লড়াই। আঙুলের একটা ইশারায় শেষ হতে বসে একটা গোটা রাষ্ট্র। বেয়োনেটের আগ্রাসন লুপ্ত করে আদিমতা। মাইক্রোস্কোপিক ভাইরাসের কাছে আত্মসমর্পণ করে গোটা বিশ্ব। লড়াইয়ের তীব্রতা আর আশার দ্বন্দ্ব চালায় পুরুষানুক্রম।
আরও পড়ুন: পিতৃ শ্রাদ্ধে কেন কাককে খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন? জানুন আসল কারণ...
বিভেদ আর বিচ্ছেদের ফলাফল চলতে চলতে পার হয় দেশ থেকে দ্বেষ। কালক্রমে তা প্রবাহিত হয় সর্বত্র। খেলায় ব্যস্ত শরীরে অবকাশহীন যাপন। ভিন গ্রহ অবধি পৌঁছে যাওয়া প্রযুক্তি ও ব্যর্থ হয় নিজের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে । অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের পথ ধরে স্বপ্ন। অর্ধমৃতপ্রায় স্বপ্নগুলো বুক বাধে নতুন ভাবে। আবার স্বপ্ন ভাঙে। সমুদ্রের ঢেউ যেমন প্রতিনিয়ত ব্যস্ত রাখে বালির চর, মানুষের জীবন তেমনই ভাঙাগড়ার পাকচক্রে আটকে থাকে। তান্ডব তো কোনও বিশেষ মুহূর্ত নয়, একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। নোনা ধরা প্যালেস্তারা থেকে খসে পড়া চুনের আস্তরন দেখায় ইটের গঠন। তার ওপারে শুধুই শূন্যতা। রাত্রি -দিনের নৈমিত্তিক ওঠানামা জানান দেয় পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবনার কথা।
আরও পড়ুন: কলকাতার পুজোয় রসনা বিলাশ হবে না? বিরিয়ানি খেতে ক্লিক করুন...
প্রসঙ্গত, কলকাতার হেভিওয়েট পুজোর মধ্যে হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব অন্যতম। এই দুর্গোৎসব কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা, রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদের চট্টোপাধ্যায়। সভাপতি বিনোদ কুমার, যুগ্ম সম্পাদক সায়ন দেব চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া পৃষ্ঠপোষক পদে রয়েছে সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম, দেবাশীষ কুমার সহ অন্যান্যরা।