ভরা বর্ষার মরশুম চলছে। এই সময় ভোজন রসিক বাঙ্গালির ধ্যান-জ্ঞান বলতে জলের রুপোলি শস্য ইলিশ। কিন্তু এবার বাজারে জোগান তেমন নেই। যেটুকু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা মূলত দীঘা-ডায়মন্ড হারবার বা কোলাঘাটের। এক কথায় স্থানীয় ইলিশ। কিন্তু স্বাদে-গন্ধে-আকারে অতুলনীয় বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ এখনও অমিল। তাহলে কি এবার পাতে পদ্মার ইলিশ পড়বে না? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এপার বাংলার ইলিশপ্রেমীদের মনে। তাঁদের জন্য এবার আশার খবর শোনা গেল। গত দু'বছরের মত এবারও পুজোর আগে ওপার বাংলা থেকে আসতে পারে বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় পদ্মার ইলিশ।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসার বিষয়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন ফিশ ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং হাওড়া হোলসেল ফিশ মার্কেটের সেক্রেটারি আনোয়ার মাসুদ। তিনি জানিয়েছেন,“ আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বরের শেষেই রাজ্যে আসতে পারে বাংলাদেশের ইলিশ। গত একমাস ধরে এই নিয়ে দিল্লির বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও ক্রমাগত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
এই বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বাজারগুলিতে যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তা মূলত স্থানীয় মাছ। শ্রাবণ শেষ হয়ে গেলেও বাজারে এখনও তেমন সাপ্লাই নেই ইলিশের। আর যেটুকু মিলছে তার দাম বেশ চড়া। একেবারে ছোট ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল কয়েকদিন আগেও। এখন ২০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মাছের ওজন দেড় কেজির কাছাকাছি হলে তার দাম দু'হাজার পার করে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশের। তা সত্ত্বেও গত বছর জামাইষষ্ঠীর সময়ে পশ্চিমবঙ্গে দু’হাজার টন ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দিয়েছিল হাসিনা সরকার। কিন্তু এ বছর পশ্চিমবঙ্গের পাতে পড়েনি পদ্মার ইলিশ। ইতিমধ্যে আম কূটনীতি করতে দেখা গেছে হাসিনা সরকারকে। তাতেই আশা বাড়ছে এবার ইলিশ কূটনীতিতেও এগোবে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে ভারতে ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ। তবে নয় বছরে পরিস্থিতি বদলেছে অনেকটাই। পুজোর আগে গত দু'বছর বাংলাদেশ থেকে এসেছে ইলিশ। ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জিতে সাড়া দিয়ে কয়েকশো টন পদ্মার ইলিশ রফতানিতে সায় দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কূটনৈতিক মহলের মতে, তিস্তার জলবন্টন নিয়ে ভারতের টালবাহানার প্রতিবাদে ইলিশ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল ঢাকা। তবে ২০১৯ সালে দীর্ঘ সাত বছর পরে ফের কলকাতার পাতিপুকুর বাজার হয়ে বাঙালির পাতে পৌঁছায় রুপোলি মাছ। গতবারও বিশেষ অনুমতি ক্রমে প্রায় দেড় হাজার টন ইলিশ সেপ্টেম্বরে ঢুকেছিল রাজ্যে। যা হাসিনা সরকারের তরফে বাংলার মানুষকে ছিল পুজো উপহার।
বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ এবং এ পার বাংলায় তার কদর নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। পদ্মার ইলিশের জন্য একাংশের ক্রেতার চাহিদা এতটাই, যে কোনো মূল্যে তা হেঁশেলে ঢোকাতে উদগ্রীব। গত দু'বারের মত এবারও বাংলাদেশ থেকে দেরিতে হলেও ইলিশ ঢুকবে বলেই আশায় এখন দিন গুনছেন ভোজন রসিক বাঙালি। যদিও এবার বাংলাদেশেই এখনও তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। তবে অগাস্টের শেষে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে বলেই আশা সে দেশের মৎস্য বিশেষজ্ঞদের। গত বছর দুর্গাপুজোর আগে শেখ হাসিনা ভারতে ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা সাময়িক ভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এবারও তাঁর গ্রিন সিগন্যাল মিললেই বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়বে বাঙালির সাধের ইলিশ।