বছরের নতুন ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা হাতে পেলেই বাঙালিরা যেই দিনগুলিতে সবার আগে চোখ বোলায়, তার মধ্যে দুর্গা পুজো (Durga Puja) একটি। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে উমা কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান শ্বশুর বাড়ি। আর ঘরের মেয়েকে আদরে যত্নে ভরিয়ে, জাকজমকপূর্ণ ভাবে সেই উদযাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্বের বাঙালিরা।
শুরু হয়ে গেছে দুর্গা পুজোর কাউন্টডাউন। তিলোত্তমার বিভিন্ন প্রান্তর ইতিমধ্যে সেজে উঠেছে পুজোর আবহে। পুজোর বেশ কিছু মাস আগে থেকেই শুরু হয় যায় প্যান্ডেল তৈরি কাজ। গত কয়েক বছর ধরে থিম পুজোর (Theme Pujo) প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে বেশীরভাগ ক্লাবগুলি। সেরার সেরা লড়াইয়ে জোড়দার টেক্কা চলে ক্লাবে -ক্লাবে। দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় পুজো ভবানীপুর ৭৫ পল্লী (Bhowanipur 75 Palli)। কীভাবে সেজে উঠছে এবারের মণ্ডপ। এবছরের থিমই বা কী? আসুন খুঁটিনাটি জানা যাক...
বিগত কয়েক বছর ধরে অবিরাম ভাবে ভবানীপুর ৭৫ পল্লীর পুজো একের পর এক নতুন থিম উপস্থাপন করে। যা, বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন জয় করেছে। এবারের শারদোৎসবে ভবানীপুর ৭৫ পল্লীর থিম -'ঐতিহ্য বেঁচে থাকুক' (Let the Heritage Live)। বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে উপস্থাপিত করা হবে এই থিমের মাধ্যমে। ৫৮ বছর বয়সী শিল্পী প্রশান্ত পালের সুযোগ্য নেতৃত্বে গড়ে উঠবে এই থিম।
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার সংস্কৃতি তার বিভিন্ন চিত্রকলা ও শিল্পকলার মাধ্যমে সব সময় অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে নারী- পুরুষ পটশিল্পের (Pot Shilpa) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এতে যেমন মিটত তাদের আর্থিক চাহিদা, তেমন সমৃদ্ধ হত বাংলার সংস্কৃতি। নিজেদের কর্মশালা নিয়ে উপস্থিত থাকবেন পটশিল্পী লালন। বাংলা মানেই সর্ব ধর্মের পিঠস্থান। এই প্রচ্ছন্ন বার্তাই দিচ্ছে ভবানীপুর ৭৫ পল্লী পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা।
ভবানীপুর ৭৫ পল্লীর আহ্বায়ক সায়ন দেব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, "এটি একটি বড় সম্মান যে ইউনেস্কো বাংলার দুর্গা পুজোকে একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি পটশিল্পের এই বিলুপ্তপ্রায় শিল্প রূপটি এবছর আমাদের পুজো উপস্থাপনার মাধ্যমে তার হারানো গৌরব ও খ্যাতি ফিরে পাবে। মেদিনীপুর জেলার পিংলা ও নয়াগ্রাম গ্রামের পটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা পুজো মন্ডপের পাশে স্টলে তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন।"
তিনি আরও যোগ করলেন, "এই শিল্পীদের যাতায়াত, খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সমস্ত খরচ সম্পূর্ণরূপে পুজো কমিটি বহন করবে। যেভাবে আমরা গত বছর ছৌ এবং ঝুমুর শিল্পীদের জন্য করেছিলাম। তারা লাইভ পারফর্ম করেছিলেন এবং পুরুলিয়া জেলার মুখোশ শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন ও বিক্রি করেছিলেন। আমরা আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত। তাই এই শিল্পীদের মধ্যে অন্তত কিছুকে সাহায্য করার জন্য আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করব।"