বুধবার মহেশতলার রবীন্দ্র নগর থানার সামনেই পুলিশের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় বাড়িগুলিতে। পাথর ছুড়ে ভাঙা হয় পুলিশের গাড়ির কাচও। বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে নাগাড়ে ইটবৃষ্টি হতে থাকে পুলিশের উপর। রাস্তার একপার থেকে পুলিশের দিকে বড় বড় পাথর ছুড়তে থাকে দুষ্কৃতীরা। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের তরফে টিয়ার গ্যাস অর্থাৎ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। তাতেও প্রথমে লাভ হয়নি কিছু। উল্টে পুলিশকে নতুন উদ্যমে আক্রমণ করতে শুরু করে উন্মত্ত দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনার পর কেয়কঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেও থমথমে পরিবেশ মহেশতলার রবীন্দ্রনগর এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন সেক্টর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে থানার সামনে ও সংলগ্ন এলাকায়। অলিগলিতে চলছে পুলিশের রুট মার্চ।
বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তপ্ত হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনগর এলাকা। আক্রান্ত হন একাধিক পুলিশকর্মী। ইটের আঘাতে আহত হতে হয় মহিলা পুলিশকর্মীকেও। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বন্ধ রয়েছে একাধিক দোকানপাট। রাস্তায় মানুষের আনাগোনা খুবই কম। বলাই যায় এখনও চাপা আতঙ্ক রয়েছে গোটা এলাকাজুড়ে। জারি রয়েছে ১৬৩ ধারা।
জানা যাচ্ছে বুধবার দোকান বসানো নিয়ে শুরু হয়েছিল সমস্যা। আর তার থেকেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মহেশতলা। কার্যত বেশ কিছুক্ষণ সময়ের জন্য দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয় মহেশতলার রবীন্দ্র নগর থানা সংলগ্ন এলাকা। দুষ্কৃতীদের ইটবৃষ্টি, পাথর ছোড়ার সামনে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে পুলিশকে। প্রথমদিকে খুব বেশি সংখ্যক পুলিশ এলাকায় না থাকার ফলে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছুটা সময় লেগে গিয়েছে। তবে বিরোধীরা বলছেন, পুলিশ কার্যত শাসকের মদতে নিষ্ক্রিয় থেকেছে মহেশতলায়।
বুধবার সন্ধেয় ওই এলাকা পরিদর্শনে যান কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। মহেশতলার পরিস্থিতি নিয়ে শাসক দলকে কটাক্ষ করেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এই ঘটনার পরই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। এদিকে গতকাল মহেশতলা কাণ্ডের জেরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ বৃহস্পতিবার বিধানসভা অচল করার ডাক দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ভবানীভবনের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন—“মহেশতলায় চরম নৈরাজ্যের ছবি ধরা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এসি ঘরে বসে আছেন, রাজ্যের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পুলিশের ৩০- ৩৫ জন সদস্য আহত, ১২টি গাড়ি জ্বালানো হয়েছে।” শুভেন্দু আরও দাবি করেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হোক। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করায় তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
এদিকে মহেশতলার ঘটনা নিয়ে বুধবার সন্ধেয় দুঃখপ্রকাশ করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। 'দুর্ভাগ্যজনক' উল্লেখ করে এক্ষেত্রে পুলিশের দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, 'কখনও কখনও এ ধরনের ঘটনা হয়, পুলিশ প্রশাসন যতেষ্ট সংবেদনশীলতার সঙ্গে কড়া মনোভাব নিয়ে গোটা বিষয়টা দেখছে। পুলিশ আধিকারিক জখম হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন এখানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। এমন কিছু করেনি যাতে পরিস্থিতি আরও বেড়ে যায় বা জটিল হয়ে যায়।' এরপরই ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগ তোলেন তিনি এবং এমন একটি ঘটনা আর না বাড়ানোরও অনুরোধ জানান। কুণাল বলেন, 'এটাকে প্ররোচনা দিয়ে, নানা বিবৃতি দিয়ে, অকারণ সেসব নিয়ে ঝামেলা করা তো ঠিক নয়। উত্তেজনা ছড়ানোর তো কোনও মানে নেই। এটা তো নতুন না। দুটো গোষ্ঠী, একটা পাড়াতে, ক্লাবে, মত পার্থক্য হয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা। সেটা আরও বাড়াব না পুলিশের ওপর ছেড়ে দেব!'