বর্তমানে বহু মহিলারা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের (Urinary Tract Infection/ UTI) সমস্যায় ভোগেন। মুত্রাশয়ে জীবণু সংক্রমণের ফলে এই রোগ দেখা দেয়। এর ফলে কিডনি, ব্লাডার এবং এর সংযোগকারী টিউবগুলিতেও প্রভাব পড়ে। এই রোগ অবহেলা করলে কিডনির গুরুতর সংক্রমণ সহ আরও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইউটিআই-র লক্ষণ
কোমরে ব্যথা, প্রস্রাবের হার কমে যাওয়া, গা ঝিমঝিম, ক্লান্ত ভাব, প্রস্রাব করতে সমস্যা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, প্রস্রাবের রং হলুদ হওয়া এবং মাঝেমাঝে সঙ্গে রক্ত পড়া এই সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই গাফিলতি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সংক্রমণে ঝুঁকি বাড়লে কোমরে ও পিঠের নীচের দিকে ব্যাথা, জ্বর, এমনকি বমি পর্যন্ত হতে পারে।
ইউটিআই-র সমস্যা
ঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা না করলে, মূত্রাশয় বা মুত্রথলির সমস্যা, এমনকি কি দুটো কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া পর্যন্ত গুরুতর সমস্যা হতে পারে। যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে তাঁদের এই রোগের ঝুঁকি আরও বেশি। সেক্ষেত্রে কিডনি একেবারে বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয় অনেক সময়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ইউটিআই।
কীভাবে হয় এই রোগ?
এই সমস্যাটি মহিলা ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে দেখা গেলেও মহিলাদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। জল কম খেলে, নোংরা বাথরুম ব্যবহার করলে, ঘামে ভেজা বা অপরিষ্কার অন্তর্বাস পরে থাকলে, মূলত ইউটিআই হতে পারে। এছাড়াও যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, রক্তশূন্যতায় ভোগেন যাঁরা, তাঁদেরও ইউটিআই হতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশী?
যেই মহিলাদের সক্রিয় যৌন সম্পর্ক রয়েছে, যারা খুব কম জল খান বা দিনে অনেকবার স্নান করেন তাঁদের ইউটিআই সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। এমনকি যারা দীর্ঘক্ষণ ইউরিন চেপে রাখেন, কিডনিতে পাথর রয়েছে তাঁদের সাবধান থাকা উচিত। প্রস্বাব পরীক্ষা অর্থাৎ ইউরিন কালচার করলে এই রোগ ধরা পড়ে।
ইউটিআই-র চিকিৎসা
একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলেই এই রোগ সেরে যায়। তবে ঝুঁকি না নিয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইউটিআই ও ডায়বেটিস
যাঁদের ডায়বেটিস আছে, তাঁদের ইউটিআই হওয়ার ঝুঁকি প্রবল। ডায়বেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, এছাড়া তাঁদের ইউরিনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্ত রোগীদের ইউটিআই-র সামান্য লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইউটিআই রোধের উপায়
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন নিয়মিত। যৌন মিলনের আগে ও পড়ে অবশ্যই গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করা জরুরী। বাজারজাত হাইজিন স্প্রে কম ব্যবহার করাই ভাল। বাথ টাবে স্নান এড়িয়ে চলা ভাল। দীর্ঘক্ষণ প্রস্বাব চেপে রাখবেন না। বিশেষত প্রেগন্যান্ট, বয়স্ক এবং ডায়বেটিক রোগীরা ইউটিআই-র সামান্য লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।