এইডস সেই বিপজ্জনক রোগগুলির মধ্যে একটি, যার আজ পর্যন্ত কোনও টিকা তৈরি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি এবং ওষুধের মাধ্যমে এইডসের প্রভাব কমানো যেতে পারে তবে সংক্রমণ রুখতে পারে এমন কোনও এইচআইভি ভ্যাকসিন নেই। ১৯৮০ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম এই রোগটি সম্পর্কে জানতে পারেন।
১৯৮৪ সালে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছিল যে তারা এইডস ভ্যাকসিনটি দুই বছরের মধ্যে প্রস্তুত করবে। তবে সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ব্যর্থ হতে হয়েছিল। তাই কোনও ভ্যাকসিন নেই এই রোগের। তবে এইডস প্রতিরোধের মাধ্যমে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে রোগটিকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এইডস ভ্যাকসিনে বিজ্ঞানীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জগুলি কী কী
এইচআইভিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীরা বলেছেন যে মানবদেহকে রক্ষা করে দেহের এমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা HIV (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সসি ভাইরাস) ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায় না। রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তৈরি করে ঠিকই তবে সংক্রমণের গতি কমিয়ে দেয়, কিন্তু থামাতে পারে না।
এইচআইভি সংক্রমণের পরে রোগীর পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব। এইচআইভি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে একবারে নষ্ট করে দেয়। ফলে বিজ্ঞানীরা এমন ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবেন না যা দেহে অ্যান্টিবডিগুলির উৎপাদন প্রক্রিয়াটিকে অনুকরণ করতে পারে।
দেহে এইচআইভি সংক্রমণ বহু সময় ধরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই সময়ে, ভাইরাসটি মানুষের ডিএনএতে লুকিয়ে থাকে। ডিএনএতে লুকানো ভাইরাস খুঁজে পাওয়া এবং এটি ধ্বংস করা মানবদেহের পক্ষে কঠিন। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। তাই এই রোগ নির্মূল করা যায়নি।
বেশিরভাগক্ষেত্রে ভাইরাসকে দুর্বল বা ধ্বংস করে তা ভ্যাকসিন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। তবে এইচআইভির ক্ষেত্রে, তা সম্ভব হয়নি। কারণ এই ভাইরাসের যে কোনও রূপ ব্যবহার করাও খুব বিপজ্জনক।
যেসব ভাইরাস শ্বাসযন্ত্র এবং গ্যাস্ট্রো-অন্ত্রের সিস্টেমে প্রবেশ করে তাঁদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে থামানো যায়। কিন্তু এইচআইভি সংক্রমণ যৌনাঙ্গের বা রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাণীদের উপর পরীক্ষা করার পর ট্রায়াল চলে। ভ্যাকসিন প্রস্তুত হয় এভাবেই। তবে এইচআইভির জন্য এমন স্বেচ্ছাসেবক পাওয়া সম্ভব নয় যার ভিত্তিতে এইডস ভ্যাকসিন মানুষের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে।
এইচআইভি হল আরএনএ ভাইরাস। তাই খুব দ্রুত পরিবর্তন হয় জেনেটিক কাঠামোর। ভ্যাকসিন ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট কাঠামোকে নিয়ে তৈরি হয়। ভাইরাসটি তার রূপ পরিবর্তন করার সঙ্গে সঙ্গে তার উপর ভ্যাকসিনের প্রভাব কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই সমস্ত কারণেই আজ অবধি এইচআইভি ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা যায়নি।