লাস্যময়ী রূপ এবং ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্য বরাবরই লাইমলাইটে থাকেন সচিন তেন্ডুলকরের কন্যা সারা। মাঝে মধ্যে চর্চায় আসে তাঁর লাভ লাইফও। ইনস্টাগ্রামে ভক্তের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। এই সারা তেন্ডুলকর সম্প্রতি ভোগ-কে দেওয়া একটি ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণরূপে PCOS মুক্ত হয়েছেন তিনি। কীভাবে এই রোগ সারিয়ে তুললেন সচিন কন্যা? সেকথাও জানিয়েছেন নিজেই। কী খাবার খান, ত্বকের যত্নের জন্য কী উপায় অবলম্বন করেন, এই সকল জিনিস তাঁর অনুরাগীদের বললেন সারা তেন্ডুলকর। নজরকাড়া রূপের রহস্যও ফাঁস করেছেন সেই ইন্টারভিউতে। কী কী নিয়ম মেনে চলতে হয়েছে সারাকে?
ছেলেবেলায় সারা তেন্ডুলকর পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই রোগ আজকাল ৯০ শতাংশ মহিলার শরীরে দেখা যায়। সারাও সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েননি। তাঁরও হয়েছিল এই লাইফস্টাইল ডিজিস। তবে এখন সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। যদি এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে তাঁকে বছরের পর বছর বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়েছে। কী সেই নিয়মগুলি? ইনটারভিউতে জানিয়েছেন সচিন কন্যা। তাঁর দেওয়া টিপস মেনে PCOS মুক্ত হয়ে উঠতে পারেন অনেকেই।
সারার মা অঞ্জলি তেন্ডুলকর একজন চিকিৎসক। তাই মেয়ে যাতে দ্রুত PCOS-এর মতো রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য নিরন্তর চেষ্টা করেছেন তিনি। মেয়েকে সঠিক ডায়েট, শরীরচর্চার নিয়ম সেট করে দিয়েছিলেন সচিন পত্নী। মেয়ের কোনও আবদার পূরণ করতেন না তিনি। কড়া নজর রাখতেন তাঁর উপর। তাঁর লাইফস্টাইল ঠিক করে তুলতে কঠোর রুটিন তৈরি করে দিয়েছিলেন সারাকে। সেগুলি মেনে, মায়ের কথা শুনে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন সারা তেন্ডুলকর। ইন্টারভিউতে সেই নিয়মই তুলে ধরেন মা-মেয়ে।
সারা তেন্ডুলকর ছেলেবেলায় PCOS-এর কারণে ত্বকে ব্রণের সমস্যায় ভুগতেন। তাই ছেলেবেলায় যখনই কোথাও বাড়ির বাইরে সারা যেতেন, মেক আপ দিয়ে ব্রণ ঢাকার বায়না করতেন মায়ের কাছে। অঞ্জলি তা করতে দিতেন না। সেটাই সারার ত্বককে অনেকটা সুস্থতার দিকে নিয়ে গিয়েছিল। সাধারণত PCOS-এর সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, ব্রণ তাঁদের নিত্যসঙ্গী। দোসর হয় ফেশিয়াল হেয়ার গ্রোথ। এগুলি ঢাকার জন্য মেক আপের ব্যবহার করা অনুচিত বলেই জানাচ্ছেন সারা তেন্ডুলকর। তবে অনুরাগীরা প্রশ্ন করছেন, প্রসাধনী দ্রব্যের ব্যবহার না করেও কীভাবে এত লাস্যময়ী সচিন কন্যা?
মাঝে মধ্যে অঞ্জলি তেন্ডুলকর অল্প কমপ্যাক্ট পাউডার মাখিয়ে দিতেন মেয়ে সারাকে। তিনি বরাবর সারাকে সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দিতেন। সেই পরামর্শই PCOS-এ আক্রান্ত সকলকে দিয়েছেন সারা।
পাবলিক হেলথ নিয়েই সারা তেন্ডুলকর পড়াশুনা করেছেন। তাঁর দিন শুরু হয় ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিয়ে। তবে একটা সময় সকাল সকাল ডিটক্স ওয়াটার মুখে দিয়ে রাখতেন সারা। বছরের নানা সময়ে নানা রুটিন মেনে চলেন তিনি। ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস জল, বাদাম এবং তারপর ব্ল্যাক কফি খান নিয়মিত। এই রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করেন সারা। আর এতেই তাঁর ত্বকের জেল্লা বেড়েছে।
শরীরচর্চাতেও মন দিয়েছেন অনেক ছেলেবেলা থেকেই। কোনও হাই-ফাই স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করেন না সচিন কন্যা। অত্যন্ত সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলেন সারা। ত্বক পরিষ্কার করেন নিয়মিত। তারপর ময়েশ্চরাইজার লাগান। অ্যাসিড বা রেটিনল থাকা কোনও প্রসাধনী লাগান না তিনি। সারার ত্বক সংবেদনশীল। তাই সহজ সরল উপায়ে নিজের ত্বক উজ্জ্বল রাখার চেষ্টা করেন। অনুরাগীদেরও পরামর্শ দিয়েছেন তেমনটাই।
সাক্ষাৎকারে সারা জানান, PCOS থাকলে দেহে অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, এর জেরে ত্বকে রোমের আধ্যিক বাড়ে, ব্রণ হয়, ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায় এবং ওজন বাড়তে থাকে, এর ফলে তাঁর আত্মবিশ্বাস কমে গিয়েছিল। সারার মতো বিশ্বজুড়ে বহু তরুণী এই একই সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকদের মতে, PCOS বা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হল এমন এক ধরনের শারীরিক অবস্থা, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে লাইফস্টাইলই ভরসা। স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চললে এই সমস্যাকে সহজেই বশে রাখা সম্ভব। আর ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন সচিন কন্যা।
সারা জানিয়েছেন, অ্যাসিড স্কিন কেয়ার, রেটিনল, টপিক্যাল ও ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক, এমন কোনও জিনিস ছিল না, যার সাহায্য তিনি নেননি। শেষ অবধি তাঁকে বদলাতে হয় তাঁর লাইফস্টাইল। একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট তাঁকে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এবং ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন। আর এটাই কাজে আসে সারার।
সারার মা ওই সাক্ষাৎকারেই জানিয়েছেন, সারা প্রোটিন গ্রহণ ও ওজন কমানোর মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলছিল, এর জন্য তাঁর হরমোনের ভারসাম্যও স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল এবং এখন তিনি সম্পূর্ণরূপে পিসিওএস মুক্ত জীবন কাটাচ্ছেন। তবে এখনও তিনি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলই মেনে চলেন।