Relationship Tips: তুই, নাকি তুমি? দাম্পত্যে কোন সম্বোধন সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করে? মনস্তত্ত্ব কী বলছে জানেন? বাংলা ভাষায় তুই বা তুমি দু’টিই কাছের জনকে সম্বোধন করার চেনা ভাষা। ইংরেজিতে আবার সবই ‘ইউ’।
বাঙালি সমাজে কে কাকে তুই আর কখন কাকে তুমি বা আপনি বলবে তা কিন্তু নির্দিষ্ট। আমাদের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, বয়সে ছোট হলেই কাউকে তুই বলা যায়। আবার ভাই বোনদের মধ্যে ‘তুই’ চললেও বাবা-মা, দাদা-দিদিকে তুই বলা যাবে না।
বর্তমান প্রজন্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহপাঠী বা প্রায় সমবয়সীকে বিয়ে করেছে। স্কুল-কলেজের ‘তুই’ ডাকটা সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার পরেও তুই-ই রয়েছে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অফিসের সহকর্মীকে বিয়ে করলেও পারস্পরিক সম্বোধন ‘তুই’ থেকে যাচ্ছে।
আসলে দাম্পত্য অনেকটাই পারস্পরিক সম্মানের উপর টিকে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হওয়া পরিবর্তনেই স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে এই ‘তুই’ সম্বোধন ঢুকে পড়েছে। দু’জনেই সমান, দু’জনেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু— এই তত্ত্বের উপরে নির্ভর করেই বাঙালির দাম্পত্যে ওখন তুই-এর অবাধ বিচরণ।
তবে মানুষের মন ও তার পরিচর্যা করতে করতে দেখা গিয়েছে, এই তুই বলার মধ্যে ‘দু’জনেই সমান’ বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের ইঙ্গিত থাকলেও পারস্পরিক সম্মান আর সমীহ অনেক ক্ষেত্রেই কম। তুই বলতে বলতে বাঙালির দাম্পত্যে এক অপরকে অনেকটা ‘হালকা’ করে ফেলছেন!
তুই সম্বোধনে অভ্যস্ত কোনও দাম্পতির মধ্যে পারস্পরিক সমস্যা দেখা দিলে তাঁদের তুমি সম্বোধনে অভ্যাস করালেই অবিশ্বাস্য উপকার মিলেছে। সম্পর্কের মনস্তত্ত্ব নিয়ে যাঁরা দীর্ঘদিন কাজ করছেন, যাঁরা সম্পর্কের সমস্যায় যুগলকে সুপরামর্শ দিয়ে সমাধান খুঁজে দিয়ছেন, এমন নজিরও রয়েছে।
শুরুতেই হয়তো তুই থেকে তুমি বলতে অনেকের অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু তুমি সম্বোধনে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উপকৃতই হয়েছেন অনেকে। আসলে যে কোনও শব্দই আসে মস্তিষ্ক থেকে। এর সঙ্গে নানা পারিপার্শ্বিক শর্ত যুক্ত হয়।
যে সকল সন্তান বড় হওয়ার সময় তার বাবা-মাকে ‘তুমি’ বলতেই দেখেছে-শুনেছে, সে তার সঙ্গীকেও ‘তুমি’ বলার সময় প্রচ্ছন্নভাবে বন্ধুত্বের পাশাপাসি সম্মানবোধও লালন করবে। তার মানে এই নয় যে তুই যাঁরা বলছেন, তাঁরা একে অপরকে সম্মান করেন না। কিন্তু শব্দের প্রকাশে সম্মান ও সমীহ বোঝাতে ‘তুমি’-র প্রভাব অনেক বেশি।
মনোবিদদের পরামর্শ, দাম্পত্য কোনও সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেলে তুই ছেড়ে তুমি সম্বোধনে অভ্যস্ত হতে পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপকার মেলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে কোনও সম্পর্কেই একটু দূরত্ব আর জায়গা ছাড়তে লাগে। তাই নড়বড়ে সময়ে ‘তুমি’ বললে সম্পর্কের মধুরতা বাড়ে। সম্পর্কের দূরত্ব ঘুচাতেও সুবিধে হয়।