লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যা শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে দূরে রাখে। লিভার গ্লুকোজও তৈরি করে। কার্বোহাইড্রেট ভেঙ্গে গ্লুকোজ গঠন করে। এটি খাবার হজমে সাহায্য করে। শরীরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সুস্থ রাখা খুবই জরুরি। এই অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গটির কাজে সামান্য ব্যাঘাত ঘটলেই স্বাস্থ্যের বিবিধ সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। ফ্যাটি লিভার হল লিভারের অন্যতম বড় সমস্যা। বর্তমান অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রায় যা সাধারণ অসুখ হয়ে উঠেছে। অনেকেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় জেরবার। কীভাবে এ থেকে মুক্তি মিলবে?
লিভারে চর্বি বা ফ্যাট জমলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। লিভার ফ্যাটি হওয়ার জন্য রয়েছে একাধিক কারণ। যেমন- অ্যালকোহল সেবন, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়া, বিশেষ ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ যেমন হেপাটাইটিস সি। ডাক্তাররা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যাটি লিভারের জন্য অতিরিক্ত ওজন এবং বেহিসেবি জীবনযাত্রা। খাওয়াদাওয়ার ঠিক নেই। শরীরচর্চাও নেই। তখনই লিভার ফ্যাটি হয়ে ওঠে।
ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় পেটের উপরের দিকে ব্যথা হয়। কমে রোগীর খিদে।ফ্যাটি লিভারের প্রভাব স্থূলতার উপরও পড়ে। যাঁদের ফ্যাটি লিভার আছে, তাঁদের ওজন দ্রুত কমতে শুরু করে। লিভার ফ্যাটি হলে প্রভাব চোখ ও পায়ে দেখা দিতে শুরু করে। চোখের রং হলুদ হতে শুরু করে। পায়ে দেখা দেয় হালকা ফোলাভাব।
আরও পড়ুন- সকালে উঠেই বুক ধড়ফড়? প্রেসার কমিয়ে দেবে দুই জিনিসের ঘরোয়া পানীয়
কী কী করবেন?
১। দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুম
২। রোজ ৩ লিটার জল পান।
৩। খুব বেশি ব্যবধানে খাওয়া নয়। পরিমাণ কম হবে, তবে ঘনঘন খান।
৪। ভাজাভুজি, ঘি, মাখন, চিজ, রেড মিট, চিনি, ময়দা বাদ। মদও খাওয়া চলবে না।
৫। দিনে এক ঘণ্টা শরীরচর্চা।
পুষ্টিবিদরা এমনই কিছু খাবারের সন্ধান দিয়েছেন যে গুলি খেলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কিছু খাবার আছে যা পাতে রাখলে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। চলুন জেনে নিই এমনই ৪টি খাবারের কথা-
বিটরুট- বিটরুট ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দারুণ কার্যকর। বিটরুটে থাকে বেটালাইন নামক নাইট্রেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা লিভারে অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বিটরুটের রস শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। লিভারের চর্বি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
আঙুর- লাল এবং কালো আঙুরে রয়েছে একাধিক উপকারী যৌগ। যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়ায় এবং প্রদাহ কমায়।
আরও পড়ুন- গরম আরও বাড়ার পূর্বাভাস, পেট ও মগজ ঠান্ডা রাখতে খান এই ৫ খাবার
আখরোট- ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি দিতে আখরোটের জুড়ি নেই! অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ আখরোট খেলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারকে সুস্থ রাখে।
অ্যালোভেরা ও আমলার জুস- অ্যালোভেরা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। অ্যালোভেরা লিভারে জমে থাকা নোংরা চর্বি দূর করে। যাঁরা ঘন ঘন জন্ডিসে আক্রান্ত হন বা আগে জন্ডিসে ভুগছিলেন তাঁদের জন্য এটি অব্যর্থ দাওয়াই। আমলার রস- ফ্যাটি লিভার বা জন্ডিসের মতো গুরুতর রোগে ভুগলে প্রতিদিন আমলার রস পান করুন। অ্যালোভেরা এবং আমলা জুস জলে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান। উপকার পাবেন।
গমঘাস- গমঘাস ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ। যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সক্ষম। সুস্থ লিভারের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে গমঘাসের রস করে খেতে পারেন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং প্রদাহবিরোধী গুণ রয়েছে।
ডায়েটে বদল
ফ্যাটি লিভার থেকে সুস্থ হতে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। খিদে লাগলেই খেতে হবে। রাতে ভারী খাবার খাবেন না। খাওয়ার পর ঘুমোবেন না। লিভারকে সুস্থ ও সবল করতে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ১-২ গ্লাস হালকা গরম জল খেতে পারেন। এছাড়া নিয়মিত আধ ঘণ্টা হলেও শরীরচর্চা মাস্ট।