দুনিয়ায় ভারতীয় খানার ভক্ত প্রচুর। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ চেখে দেখেন ভারতীয় খাবার। আর ভারতীয় খাবার তেল ছাড়া জমে না। বাঙালি পদ তো নয়ই! মাটন বা চিকেন কষায় ভাসে সর্ষের তেল। আগে ডালডা দিয়ে ভাজা হত লুচি। এখন সাদা তেলই সবাই ব্যবহার করেন। তবে সাদা তেল ব্যবহার করে যদি ভেবে থাকেন শরীরের জন্য উপকারী, তাহলে আপনি ভুল করছেন। কারণ অনেকেই লুচি ভেজে একটা ভুল করে ফেলেন, যা শরীরে নানা অসুখ বাঁধিয়ে ফেলে। কী রকম? সেটাই জানব এই প্রতিবেদনে।
বাঙালির উৎসব, পার্বণে লুচি ছাড়া চলে না বাঙালি। সাদা তেলে ফুলকো লুচি, আর আলুর তরকারি বা ছোলার ডালে জমে ওঠে রসনা। কড়াইয়ে লুচি ভাজতে পাম বা সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করা হয়। আর সেই তেলেই বিপত্তি! আসলে বেশিরভাগ বাড়িতেই লুচি ভাজার পর অবশিষ্ট তেল রেখে দেওয়া হয়। সেই তেলেই ভাজা হয়েছিল লুচি। তার পর সেই তেল ফের গরম করে রান্না করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, লুচি ভাজার পর ওই তেল পরে ব্যবহার করা হলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষের ক্ষতিকর। তাই রাস্তার তেলেভাজা খেতেও বারণ করেন পুষ্টিবিদরা। কারণ ওই তেল বারবার গরম করে ভাজা হয়।
কোলেস্টেরল বাড়ায়- তেল বারবার গরম করা হলে বাড়ে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল। যা বাড়িয়ে দেয় হৃদরোগ, ট্রোক এবং বুকে ব্যথার ঝুঁকি। আসলে এই তেলের থাকে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট যা কোলেস্টেরল বাড়ানোর অনুঘটক হয়। তাই বারবার গরম করা তেল ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
অ্যাসিড বৃদ্ধি- তেল বারবার গরম করা হলে তা শরীরে গিয়ে বিক্রিয়া করে। বাড়ায় অ্যাসিডের পরিমাণ। পেট ও গলা জ্বালা করে। তাই জাঙ্ক ও ডিপ ফ্রাই খাবার এড়িয়ে চলেন অনেকে। যাঁদের পেটের সমস্যা রয়েছে তাঁদের এই তেল এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
আরও পড়ুন- ওজন থেকে সুগার নিয়ন্ত্রণ, ময়দা-আটা ছেড়ে গরমে খান এই ৫ রুটি
শরীরে টক্সিন বৃদ্ধি- উদ্ভিজ্জ তেল যেমন- পাম, সূর্যমুখী বা ভুট্টার তেল গরম করা হলে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা সোজা চলে যায় শরীরে। ফলে হৃদরোগ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ডিমেনশিয়া এবং পারকিনসনের মতো ভয়ানক রোগবালাই হতে পারে। উদ্ভিজ্জ তেল বারবার গরম করলে ৪-হাইড্রক্সি-ট্রান্স-২-নমিনাল (HNE) নামে একটি বিষাক্ত পদার্থ। যা শরীরে প্রোটিনকে সঠিকভাবে কাজ করতে দেয় না।
ট্রান্স ফ্যাট বৃদ্ধি- রান্নার তেলে থাকে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড। গরমে তা বৃদ্ধি পায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের চেয়েও খারাপ ট্রান্স ফ্যাট। কারণ এটা কেবল খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা তো বাড়ায়, পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায়। পারকিনসন্স, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যানসার-সহ লিভারের অসুখের ঝুঁকি থাকে।
ক্যানসার- তেল ফের গরম করলে হতে পারে কার্সিনোজেনিক। যা ক্যানসার বাঁধাতে পারে শরীরে। বারবার গরম করা তেলে তৈরি হয় অ্যালডিহাইড নামে বিষাক্ত উপাদান। সেই তেলে তৈরি খাবার খেলে শরীরে ঢোকে টক্সিন। শরীরে টক্সিন বাড়লে স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস হতে পারে।
আরও পড়ুন- ৫০-র পরেও যৌবন, এখন থেকে খান এই ৫ পুষ্টিকর খাবার
কীভাবে লুচি-ভাজাভুজি ভাজবেন?
তেলে বারবার গরম করবেন না। লুচি করার পর সেই তেল সেদিনের রান্নায় কাজে লাগাতে পারেন। তবে তেল খুব বেশি পোড়া হলে ফেলে দিন। দুটো টাকা বাঁচাতে গিয়ে স্বাস্থ্যের সঙ্গে হেলাফেলা করা ঠিক নয়।