মা হওয়া কম-বেশি সব নারীরই স্বপ্ন। বর্তমান জীবনযাপনে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হয় সব মহিলাকেই। অফিস সামলেই মা হন তাঁরা। আবার অনেকে বিয়ের পর জীবন উপভোগ করতে চান। সঙ্গে সঙ্গে মা হতে চান না। মহিলারা যখন গর্ভবতী হতে চাইলে সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ খান। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য শুধুমাত্র ওষুধই একমাত্র বিকল্প নয়। বরং গর্ভাবস্থা রোধে প্রাকৃতিক পদ্ধতিও ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণ রোধের এই পদ্ধতিকে বলা হয় 'রিদম মেথড' বা 'ছন্দ পদ্ধতি'।
রিদম মেথড কী?
একে ক্যালেন্ডার পদ্ধতিও বলা হয়। গর্ভধারণ প্রতিরোধের একমাত্র প্রাকৃতিক উপায়। এই পদ্ধতিতে মহিলাদের মাসিক চক্র এবং ফার্টিলিটির সময় ট্র্যাক করতে হয়। মাসের কয়েক দিন মহিলারা সবচেয়ে বেশি ফার্টাইল হন। অর্থাৎ সেই সময়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। গর্ভবতী হতে না চাইলে ফার্টিলিটির সময় যৌন মিলন এড়ানো উচিত। যাঁরা ফার্টিলিটির সময় সঙ্গম করেন তাঁদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেতে হয়। রিদম মেথডে নিজের ওভুলেশন সম্পর্কে জানা দরকার মহিলাদের। মাসিক চক্রে ওভুলেশন হল সেই সময় যখন আপনার ডিম্বাশয় থেকে এগ বের হয়। এই সময়ে সহবাস করলে শুক্রাণু কর্তৃক নিষিক্ত হতে পারে ডিম্বাণু। যে কারণে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কীভাবে রিদম মেথড কাজ করে?
প্রতি মাসে এমন কিছু দিন থাকে যে সময়ে মহিলারা ফার্টাইল হন। এমন অবস্থায়সমস্ত মহিলারা রিদম পদ্ধতির আশ্রয় নেন তাঁরা আগের মাসিকের সময় মনে রাখেন। যাতে বুঝতে পারেন মাসের কোন দিনগুলিতে তিনি ফার্টাইল থাকবেন। ফার্টাইল দিনগুলি জানার পর এই সময়ে মিলন করবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেন। যাঁরা গর্ভবতী হতে চান না, তাঁরা এই সময়ে কন্ডোম ব্যবহার করতে পারেন।
এমন অনেক উপায় রয়েছে যেগুলির মাধ্যমে মহিলারা তাঁদের ফার্টাইল দিনের বুঝতে পারেন। সাধারণত মহিলাদের ২৮ দিনের ব্যবধানে মাসিক হয়। তবে কখনও কখনও এই সময়কাল ২১ থেকে ৩৫ দিন হতে পারে। অনেক মহিলার ২৮ দিনের ব্যবধানে প্রতি মাসে মাসিক হয়। অনেকের আবার প্রতি মাসের বিভিন্ন সময়ে মাসিক হয়।
অনেক মহিলার ওভুলেশনের পর ১৪ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে মাসিক শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে আপনি যদি জানতে চান আপনার ওভুলেশন কখন হয় তাহলে আপনার মাসিক শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে গণনা করুন। এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন প্রতি মাসে কখন আপনার ওভুলেশন হয়।
ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হওয়ার পর মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে ডিম নিষিক্ত হতে পারে। মহিলাদের শরীরে শুক্রাণু কয়েকদিন জীবন্ত থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে রিদম পদ্ধতি ব্যবহার করে মহিলাদের ওভুলেশনের ৩ দিন আগে এবং তার ৩ দিন পরে সঙ্গম করা উচিত নয়।
রিদম পদ্ধতি সেই সব মহিলাদের জন্য খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয় যাঁদের প্রতি মাসে নিয়মিত মাসিক হয়। এর ফলে তাঁরা ওভুলেশনের বা ডিম্বস্ফোটন এবং ফার্টিলিটির সময়কালের হিসাব রাখতে পারেন। এজন্য একাধিক অ্যাপ রয়েছে। যেমন- মাই ক্যালেন্ডার, পিরিয়ড ট্র্যাকার এবং ওভুলেশন ক্যালকুলেটর।
রিডম মেথডের সুবিধা
এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এজন্য ডাক্তার দেখানোর বা কোনও ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়া ভবিষ্যতে গর্ভবতী হওয়ার কথা ভাবলেও কোনও সমস্যা হবে না। এছাড়া এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
অন্যান্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
-মেজাজ পরিবর্তন
- ক্লান্তি
- বমি
- মাথাব্যথা
- হাড়ে ব্যথা
- ওভারিয়ান সিস্ট
- রক্তচাপ বৃদ্ধি
- যোনি স্রাব এবং চুলকানি
-অ্যালার্জি
- ভবিষ্যতে গর্ভবতী হওয়ায় বাধা
রিদম মেথডের অসুবিধা
জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম কার্যকর। ছন্দ পদ্ধতির ব্যর্থতার হার অনেক বেশি। কখনও কখনও ঠিকঠাক ফার্টিলিটির সময় নির্ধারণ করতে ভুল হতে পারে। যৌনরোগের থেকে সুরক্ষা দেয় না। সেই সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত যাঁদের শুধুমাত্র একজনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। এই পদ্ধতিতে প্রথম কয়েক মাস পিরিয়ড সাইকেল, দিন, ডিম্বস্ফোটন এবং ফার্টিলিটির উইন্ডোতে নির্ধারণে অনেক মনোযোগ দিতে হয়।
কোন মহিলারা উপযুক্ত?
- যাঁদের মাসিক চক্র নিয়মিত হয়, তাঁরা এতে উপকৃত হতে পারেন।
-যে মহিলারা মাসিক চক্র, ওভুলেশন এবং ফার্টিলিটির দিনগুলি ভাল করে ট্র্যাক করতে পারেন, তাঁরা এই পদ্ধতিতে উপকারী হতে পারে।
- যে মহিলারা গর্ভবতী কিনা তা নিয়ে চিন্তা করেন না, এই পদ্ধতি তাঁদের জন্যও ঠিকঠাক।
গর্ভধারণ রোধে ছন্দ পদ্ধতি কতটা কার্যকর
- গর্ভধারণ রোধে রিদম মেথড কতটা কার্যকর হবে তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর যেমন-
- পিরিয়ড প্রতি মাসে নিয়মিত তারিখে হয় কিনা
- আপনি ডিম্বস্ফোটনের ভবিষ্যদ্বাণী কতটা সঠিক করতে পারেন।
- ওভুলেশনের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে হিসাব করেছেন তা কতটা সঠিক পদ্ধতি।
আরও পড়ুন- মমতার উপোস-টিপস, এই ডায়েটে কতক্ষণ, কীভাবে অভুক্ত থাকলে ওজন কমে?