বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। তার মধ্যে সরস্বতী পুজোর জন্যে বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন সকলে। বিশেষত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে এই পুজো খুবই স্পেশাল। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী (Vasant Panchami) বা সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) হয়। সকাল থেকেই উপোস থেকে সকলে বাগদেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের প্রার্থনা করেন সরস্বতী মায়ের কাছে। ধরে নেওয়া হয়, এদিন থেকেই সূচনা হয় বসন্ত ঋতুর।
সরস্বতী পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রীতি। যুগ যুগ ধরে পালন হয়ে আসছে এই সব আচার। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির চাপে অনেক নিয়ম-আচার বাদ যাচ্ছে সেই তালিকা থেকে। তার সঙ্গে রয়েছে ব্যস্ততা। পুজো সারলেও কিছুটা বাধ্য হয়েই কাট-ছাট হচ্ছে এই সমস্ত নিয়ম। চলুন দেখা যাক সরস্বতী পুজোর কোন নিয়মগুলি এক আর দেখা যায় না বা অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে।
* দোয়াত কলম
সরস্বতী পুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দোয়াত ও খাগের কলম। দুধ ও সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে দোয়াতের মধ্যে রেখে, তার মধ্যে একটি খাগের কলম ও কুল রাখার নিয়ম এই পুজোয়। পঞ্চমী তিথি ছেড়ে গেলে সরস্বতী পুজোর পরের দিন স্নান করে একটি কলাপাতায় সেই দুধ ও খাগের কলম দিয়ে লিখতে হয় , ' ওঁ নমোঃ সরস্বতী মাতা নমোঃ' এবং তারপর কুল খেতে হয়। সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। তাই এই কুল সকলে আনন্দে সহকারে খান। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে এই নিয়ম প্রায় উঠেই যাচ্ছে। পুজোর সামনে দোয়াত রাখা হলেও পরের দিন খুব কম ছেলে-মেয়েই লেখেন তাতে।
* কাঁচা হলুদ
সরস্বতী পুজোর সঙ্গে হলুদ বা বাসন্তী রঙের প্রত্যক্ষ যোগ আছে। বসন্ত পঞ্চমীতে অনেক বাড়িতেই স্নানের আগে গায়ে কাঁচা হলুদ মাখার চল আছে। এর পিছনে রয়েছে একটা বৈজ্ঞানিক কারণও। এই ঋতু বদলের সময়ে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, আর কাঁচা হলুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক। তবে এখন অনেকেই এই নিয়ম আর পালন করতে পারেন না। অনেক সময়ে হলুদের দাগ থেকে যায় গায়ে। তাই যারা কর্মরত তাঁদের আরও অসুবিধা।
* জোড়া ইলিশ
সরস্বতী পজোয় জোড়া ইলিশ কেনা খুব শুভ লক্ষণ হিসেবে মনে করা হয়। তাই অনেক বাঙালি হিন্দু পরিবারে জোড়া ইলিশ আনা হয় সরস্বতী পুজোর দিন যা সাধারণত বসন্ত কালের শুরুতে হয়। আগেকার দিনে এই জোড়া ইলিশ আবার রান্না করার আগে বিয়ে দেওয়া হত ঘটা করে। তবে এখন কর্ম ব্যস্ততায় এই নিয়ম রক্ষা করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। আবার অনেকে নিয়ম রক্ষা করতে জোড়া পুঁটি মাছ ঘরে নিয়ে আসেন।
* হাতে খড়ি
বাঙালি হিন্দুদের এই নিয়ম রয়েছে। কোনও শিশুর 'হাতে খড়ি' দিয়ে তবেই সে স্কুলে ভর্তি হতে পারে। আসলে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর কাছে বিশেষ পুজো দেওয়া হয় এদিন। পুরোহিত স্লেট ও চক দিয়ে হাতে ধরে শিশুদের 'অ আ ক খ' ইত্যাদি লিখিয়ে দেন। অনেকটা প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে এই নিয়মও। অতি আধুনিক মনস্করা আজকাল ঝামেলা এড়াতে এই নিয়মও বাদ দিয়ে দেন বলে শোনা গেছে।
* কুল
কুলের সঙ্গে সরস্বতী পুজোর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা সকলেরই জানা। টক-মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট এই ফল কুল প্রায় সবারই খুব প্রিয়। ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। বাড়ির বড়রা, ছোটদের বলেন পুজোর আগে কুল খেলে দেবী সরস্বতী খুব রেগে যান। পরীক্ষায় পাশ করা কিংবা ভালো নম্বর পাওয়া তান প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। তবে এর কারণ অনেকেরই অজানা। এর পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। তবে এই নিয়ম আজকাল খুব কম মানুষই মানেন। কাঁচা কুল খাওয়া ছাড়াও কুলের আচার অনেকেই খান সরস্বতী পুজোর আগেই।
আরও পড়ুন: হলুদ শাড়ি-পাঞ্জাবি সরস্বতী পুজোর 'মাস্ট'! কেন হলুদ? জানুন
বসন্ত পঞ্চমীর মাহাত্ম্য
শিক্ষা বা শিল্পকর্মের সূচনার জন্য এই দিনটি অত্যন্ত শুভ বলে মানা হয়। অনেকে এই দিনে গৃহ প্রবেশও করেন। কথিত আছে এই দিন কামদেব কামদেব ও তাঁর স্ত্রী রতির পুজো করলে তাঁদের বৈবাহিক জীবন সমস্যাবিহীন হয়। কেউ কেউ আবার এই দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীরও পুজো করেন।