বয়স যাই হোক না কেন, প্রত্যেক মানুষেরই নিজেদের ফিটনেসের দিকে নজর দেওয়া উচিত। শরীর ফিট থাকলে দেহে রোগ বাসা বাঁধবে না, আর রোগ না থাকলে দৈনন্দিন কাজও খুব সহজে করা যাবে। বর্তমান সময়ে ওজন বৃদ্ধি একটি বড়সড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়ার কারণে ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল, কিডনির রোগ, হার্ট ফেলিওর, স্ট্রোকের মতো অনেক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেজন্য প্রত্যেকের উচিত দেহের সঠিক ওজন বজায় রাখা এবং বেড়ে গেলে তা কমানো।
ব্যস্ত জীবনযাপন এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে প্রায়শই মানুষের ওজন বেড়ে যায় এবং তারপর তা কমাতে শারীরিক পরিশ্রম ও খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দিতে হয়। এমন এক আইএএস অফিসার আছেন, যিনি সমস্ত ব্যস্ততা সামলেও নিজেকে ফিট রাখার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার জন্য নিজের ওজন প্রায় ১৩-১৪ কেজি কমিয়ে ফেলেন। Aajtak.in-এর সঙ্গে কথা বলার সময়, নিজের ফিটনেস জার্নি শেয়ার করেন ওই আইএএস, এবং জানান কেউ জিমে না গিয়েও নিজেকে কীভাবে ফিট রাখতে পারেন।
কে এই IAS অফিসার?
এই আইআএর অফিসারের নাম সোনাল গোয়েল (IAS Sonal Goel)। ২০০৮ সালে UPSC পরীক্ষায় সফল হয়ে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল ত্রিপুরায় সহকারী কালেক্টর হিসেবে। বর্তমানে তিনি দিল্লির ত্রিপুরা ভবনে আবাসিক কমিশনারের পদে রয়েছেন।
কেমন ছিল ফিটনেস জার্নি?
আইএএস সোনাল গোয়েল জানাচ্ছেন, সুস্থ থাকা প্রত্যেকের জন্যই, বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার পরে মহিলাদের ওজন বেড়ে যায়, যা তাঁর সঙ্গেও হয়েছিল। তিনি ২০০৯ সালে বিয়ে করেন। তারপর থেকেই তাঁর ওজন বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালে যখন তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়, তখন তিনি ত্রিপুরায় ছিলেন। সেসময় তাঁর ওজন অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কারণ গর্ভাবস্থা, সন্তান প্রসব এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক ছিল। এরপর তিনি হালকা ব্যায়াম শুরু করেন। ২০১৬-র জুলাই মাসে হরিয়ানা ইন্টার ক্যাডার ডেপুটেশনে পোস্টিং করা হয় তাঁকে। তারপর, ২০১৭ সালের শেষের দিকে ঝাজ্জারে পোস্টিং থাকার সময় বাড়িতে অ্যারোবিক্স, জুম্বা, যোগ এবং কিছু ব্যায়াম শুরু করেন তিনি। যার জেরে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর ওজন ১৩-১৪ কেজি কমে যায়।
সোনাল গোয়েল আরও জানাচ্ছেন, ওজন কমানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি খুব এনার্জিটিক বোধ করতে থাকেন। এরপর ২০১৮ সালে যখন তিনি দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হন, তখন ডাক্তারের পরামর্শেই যোগব্যায়াম করেন। তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর, তিনি ফের আগের মতো ফিটনেস ফিরে পাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং অনেক প্রচেষ্টার পরে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যান।
ডায়েট ও শারীরিক কার্যকলাপ
আইএএস সোনাল গোয়েল জানাচ্ছেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল ওজন কমানো নয়, ফিট হওয়া। বাড়ির দায়িত্ব ও কর্তব্যের পর নিজের জন্য সময় বের করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে সোনাল খুশি যে তিনি নিজেকে ফিট করতে পেরেছেন। ভবিষ্যতেও তাঁর এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ওজন কমানোর জন্য, তিনি ডায়েট করেননি। কিন্তু খাদ্যাভাসে পরিবর্তন করেছিলেন। ফিট হওয়ার জন্য, তিনি ডায়েট থেকে জাঙ্ক এবং ফাস্ট ফুড বাদ দেন। অফিস মিটিংয়ে তিনি চা, কফি, স্ন্যাকস খাওয়া কমিয়ে দেন এবং বাড়িতে রান্না করা খাবারের উপর জোর দেন। এছাড়া শরীরের প্রয়োজনে স্যালাড, মুসুর ডাল, রুটি ও ভাত খেতেন। সঙ্গে প্রচুর জলও পান করতে শুরু করেন। পাশাপাশি হাঁটার উপরে জোর দেন তিনি। একইসঙ্গে জুম্বা, যোগব্যায়াম, প্রাণায়ামের মতো শরীরচর্চার জন্য সকালে সময় বের করেন। তারপর ওজন কমানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হারানো ফিটনেস ফিরে পান।
সবাইকে ফিট থাকার বার্তা
আইএএস আরও বলেন, তিনি আগে ফিটনেস নিয়ে এত কিছু জানতেন না। কিন্তু যখন ইন্টারনেটে পড়াশোনা শুরু করেন, তখন অনেক তথ্য পান। এক্ষেত্রে সবাইকেই ফিটনেস এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তাঁর মতে, কেউ যদি কাজ, পড়াশুনা বা পারিবারিক কাজের চাপে জিমে যাওয়ার জন্য সময় বের করতে না পারেন, তাহলে তিনি বাড়ির পাশের পার্কে হেঁটে বা সময় পেলে বাড়িতেই অ্যারোবিক ব্যায়াম করতে পারেন। তৈলাক্ত এবং প্রসেসড ফুড কম খাওয়া এবং শাকসবজি ও ফল অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলছেন তিনি। এই সহজ উপায়গুলির মাধ্যমে, যে কেউ নিজের হারানো ফিটনেস ফেরৎ পেতে পারেন বলে মনে করেন সোনাল গোয়েল।
যদি কেউ ফিট থাকেন তাহলে তিনি আরও বেশি এগিয়ে যেতে এবং সবকিছু করতে সক্ষম হবেন। তাই সবসময় সামগ্রিক ফিটনেসে ফোকাস করার পরামর্শ দিচ্ছেন এই আইএএস অফিসার। তাঁর মতে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার দিকেও নজর দিতে হবে। যদি নিজে ফিট থাকা যায়, তবেই পরিবার এবং বন্ধুদেরও ফিট থাকতে অনুপ্রাণিত করা যাবে।
আরও পড়ুন - নৌসেনায় নয়া যুদ্ধবিমান, সাবমেরিনকেও ছাড়বে না!