বাড়িতে লক্ষ্য করেছেন বাবা-মা বা পরিবারের বয়স্করা গাঁটের ব্যথা কাতর হয়ে উঠেছেন? পায়ের আঙুল, গোড়ালি এবং হাঁটুতে ব্যথা এবং ফোলাভাব অনুভব করেন। এমনটা হলে, সতর্ক হোন। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ এগুলি। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা 7mg/dl-এর হলে বুঝবেন মাত্রাতিরিক্ত। তা কমানোর দরকার। অতিরিক্ত পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড শরীরে নানা ধরনের রোগ ডেকে আনে। কীভাবে বাগে আনবেন ইউরিক অ্যাসিড?
গাঁটের ব্যথা বিপজ্জনক। শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়লে এটা হয়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায় হল খাদ্যাভ্যাস বদল। ওষুধ খেয়ে এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেও নিরাময় করা যেতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট ধরণের খাবারের কারণে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হতে পারে। পারবারিক কারণেও বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিড। স্থূলতা বা পেটের চর্বি বৃদ্ধির কারণেও ইউরিক অ্যাসিড ভোগাতে পারে। অত্যাধিক মানসিক চাপও আর একটা কারণ।
আর কী কী কারণে বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড?
-কিডনির রোগ
-ডায়াবেটিস
-হাইপোথাইরয়েডিজমও
-ক্যান্সার বা কেমোথেরাপি
- চর্মরোগ
কী খাবেন না?
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করুন। মাংস,মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন। যা ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। অস্থিসন্ধিতে অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড জমা হলে গাঁটের ব্যথা হয়। তাই মাছ বিশেষ করে ইলিশ খাবেন না। বাদ দিন মাংস। তবে নিরামিষ খাবেন এমনটা নয়। মাংস ও মাছ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন। যা খাবেন না
- মুরগি
- রেড মিট
- গলদা চিংড়ি
-চিংড়ি
- ইলিশ
অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডযুক্ত শাকসবজি, ফল এবং লেবু খাওয়া উচিত নয়। অনেক নিরামিষ খাবারেও উচ্চ পরিমাণে পিউরিন থাকে। যা খাবেন না
- মাশরুম
- মটরশুটি
-মটর
- ডাল
-কলা
-অ্যাভোকাডো
-আনারস
প্রতিদিনের খাবারে চর্বিজাতীয় খাবার কম খান। বেশি পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে শরীরের ইউরিক অ্যাসিড হজম করার ক্ষমতা কমে যায়। ভাজা খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
ইউরিক অ্যাসিড কমাবেন কীভাবে?
ডায়েট চাট মেনে খান। প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। ডায়েটে যা রাখবেন-
১। আপেল সিডার ভিনেগার- ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে দুর্দান্ত উপকারি আপেল সিডার ভিনেগার। এক গ্লাস জলের সাথে ৩ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খান নিয়মিত।
২। চেরি- শুধুমাত্র কেক সাজানোর জন্যই ব্যবহার করা হয় না বরং চেরি শরীরের জন্য কার্যকর। এতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান। যা ইউরিক অ্যাসিড জমতে বাধা দেয়। ব্যথা এবং ফোলাভাব কমায়।
৩। বেরি- চেরি ছাড়াও স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি এবং জামে প্রদাহ-বিরোধী গুণ রয়েছে। উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড নিরাময়ে কার্যকর।
৪। লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত পণ্য- দুগ্ধজাত পণ্য শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায় বলে মনে করা হয়। দুধের পরিবর্তে সয়া বা বাদাম দুধ বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন। যা প্রোটিন সমৃদ্ধ। পনীরের বিকল্প হিসেবে সয়ার চাঙ্ক খেতে পারেন।
৫। অলিভ অয়েল- অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করুন। ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান।
৬। গ্রিন টি- ক্যাটেচিন গ্রিন টি-তে মেলে। এটি এক ধরনের প্রোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে এমন এনজাইমগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রিন টি খেলে ইউরিক অ্যাসিড যেমন কমে, তেমন গাঁটের ব্যথার উপশমও হয়।
৭। লেবু- লেবুতে থাকে ভরপুর সাইট্রিক অ্যাসিড। যা ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন জলে লেবুর রস দিয়ে খান। উপশম পাবেন।
৮। প্রচুর জল- প্রচুর জল খান। শরীরকে যতটা সম্ভব হাইড্রেটেড রাখুন, যাতে সহজেই আপনার শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বেরিয়ে যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর জল খেতে থাকুন।
৯। ফ্রেঞ্চ বিনস- এটি সবচেয়ে কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। দিনে দু'বার ফ্রেঞ্চ বিনসের রস খেলে ইউরিক অ্যাসিড কমে যায়।