ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এঅ জন্য তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ তাতে রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখতে সহায়তা করে। যাইহোক, ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, তাই খাবার ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
গ্রীষ্মের মরশুমে তরমুজ প্রচুর বিক্রি হয়। তবে অনেকেই এই ভেবে তরমুজ এড়িয়ে যান যে তাতে প্রচুর পরিমাণে ন্যাচরাল সুগার রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের কি তরমুজ খাওয়া উচিত? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
Diabetes And Watermelon
প্রতিটি খাবারের একটি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) থাকে যা বলে দেয় যে খাবারটি কত দ্রুত ব্লাড সুগারকে প্রভাবিত করবে। সহজ কথায়, কাবারের গ্লাইসেমিক সূচক যত কম হবে, তত ধীরে ধীরে এটি রক্তে শর্করায় শোষিত হবে। GI এর পরিমাপ ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত হয়। এই পরিসংখ্যান যত বেশি, চিনি তত দ্রুত রক্তে প্রবেশ করবে। তরমুজের জিআই প্রায় ৭২। সাধারণত ৭০ বা তার বেশি জিআইযুক্ত খাবারকে হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের শ্রেণীভুক্ত করা হয়।
ডায়াবেটিসে তরমুজ খাওয়ার সুবিধা
যদি তরমুজের কথা বলা হয়, তাহলে ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে, তরমুজে খুব বেশি পরিমাণে জল রয়েছে। ১২০ গ্রাম তরমুজে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্রায় ৫। তাই তাজা তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। তবে তরমুজের রস খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল বলে বিবেচিত হয় না। কারণ রসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হতে পারে।
অনেক গবেষক মনে করেন, যে কোনও কিছুর গ্লাইসেমিক লোড (GL) বিবেচনা করা উচিত। গ্লাইসেমিক লোড গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং কার্বোহাইড্রেট সামগ্রী পরীক্ষা করে পরিমাপ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও কিছু খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কতটা বাড়বে, সেই বিষয়ে গ্লাইসেমিক লোড থেকেই সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। যেসব খাবারের গ্লাইসেমিক লোড ১০-এর কম, সেগুলিকে কম, ১০-১৯-কে মাঝারি এবং ১৯-এর বেশিকে উচ্চ বলে মনে করা হয়। তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭২-এর কাছাকাছি। কিন্তু 100 গ্রাম তরমুজের গ্লাইসেমিক লোড হল ২। তাই তরমুজ যদি সঠিক পরিমাণে খাওয়া হয়, তবে সেটি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতি করবে না।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম খেতে পারেন। এ ধরনের খাবার খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং রক্তে সুগার পৌঁছানোর প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে যায়।
তরমুজে থাকে এই ভিটামিন ও মিনারেল
তরমুজে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফলটিকে খুবই উপকারী করে তোলে। যেমন
ভিটামিন এ
ভিটামিন B1 এবং B6
ভিটামিন সি
পটাসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম
ফাইবার
আয়রন
ক্যালসিয়াম
লাইকোপেন
টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে কীভাবে খাবেন তরমুজ? (Best ways to eat watermelon with type 2 diabetes)
যাঁদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে এবং তাঁরা অন্যান্য ফলের মতো তরমুজও সকালের জলখাবারের সঙ্গে বা অন্য কোনও খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি তরমুজ খান, তাহলে তাঁদের উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। বরং তাঁরা তরমুজের সঙ্গে বাদাম, স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
তরমুজের পরিবর্তে খেতে পারেন এই ফল
ডায়াবেটিস রোগীদের সর্বদা সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত যার মধ্যে ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত। ফলের মধ্যে ন্যাচরাল থাকে। তরমুজ ছাড়াও কমলা, জাম, আপেল, পিচ, কিউই, নাশপাতির মতো ফলও খেতে পারেন তাঁরা।
আরও পড়ুন - 'পুলিশে বেশি করে আসুক মেয়েরা, বড় ভূমিকা নিক', বার্তা মমতার