Advertisement

Uttarakhand Trip: আহা! কী দেখিলাম... দেবভূমে কোথায় কোথায় ঘুরলাম?

বরাবরই পাহাড় আমায় বেশি টানে। সমুদ্র ভালবাসি ঠিকই তবে পাহাড়ের সৌন্দর্য আর আকর্ষণ নীল জলরাশির থেকেও বেশি আমার কাছে। তাই উত্তরাখণ্ড বেড়াতে যাওয়ার আনন্দটা আমার কাছে একটু বেশিই স্পেশাল ছিল। টিকিট কাটার পর থেকেই উত্তেজিত ছিলাম।

উত্তরাখণ্ডের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন।
সৌরদীপ সামন্ত
  • কলকাতা,
  • 15 Dec 2023,
  • अपडेटेड 3:54 PM IST
  • বরাবরই পাহাড় আমায় বেশি টানে।
  • উত্তরাখণ্ড বেড়াতে যাওয়ার আনন্দটা আমার কাছে একটু বেশিই স্পেশাল ছিল।
  • সে এক বিরাট অভিজ্ঞতা।

বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে দিন কয়েকের জন্য কোথাও বেড়াতে যাব বললেই তো আর যাওয়া হয় না! অফিস থেকে ছুটি মিলবে কি না, এই নিয়ে দোলাচলে তো থাকতেই হয়। আবার, খরচেরও তো একটা ঝক্কি থাকে নাকি! তবে সে যাই হোক, মাস ছয়েক আগেই বসের কাছে লম্বা ছুটির অনুমতি আদায় করে নিয়েছিলাম। সেই মতো টিকিট কেটে বেড়ানোর পরিকল্পনা আগেভাগেই সেরে ফেলেছিলাম। গন্তব্য, দেবভূমি।

বরাবরই পাহাড় আমায় বেশি টানে। সমুদ্র ভালবাসি ঠিকই তবে পাহাড়ের সৌন্দর্য আর আকর্ষণ নীল জলরাশির থেকেও বেশি আমার কাছে। তাই উত্তরাখণ্ড বেড়াতে যাওয়ার আনন্দটা আমার কাছে একটু বেশিই স্পেশাল ছিল। টিকিট কাটার পর থেকেই উত্তেজিত ছিলাম। দিন গোনা শুরু হয়েছিল। মনে মনে কাউন্ট-ডাউনও চলছিল। ১ নভেম্বর ২০২৩- অবশেষে এল সেই মাহিন্দ্রক্ষণ। বাবা-মার সঙ্গে সেজেগুজে পাড়ি দিলাম পাহাড়ি রাজ্যে।

মন কাড়বে সত্তাল।

একটি ট্যুরিস্ট এজেন্সির সঙ্গে আমরা উত্তরাখণ্ড ঘুরতে গিয়েছিলাম। তাই লাগেজ নিয়ে ঝক্কি পোহাতে হয়নি। প্রথম গন্তব্য ছিল লখনউ। কলকাতা থেকে ভোরের বিমানে উড়ে গেলাম 'নবাবের শহরে'। দেড় ঘণ্টার বিমান সফর সেরে যখন লখনউতে নামলাম তখন সকাল। তার পর হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সেরে ঘোরাঘুরি করলাম লখনউয়ের আনাচেকানাচে। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ডিনার সেরে রওনা দিলাম লখনউ জংশন রেলওয়ে স্টেশনে। সেখান থেকে রাতের ট্রেন ধরলাম। গন্তব্য কাঠগুদাম স্টেশন। রাতে ট্রেন ওঠার পরই ঘুমোলাম। এ যেন ছিল ক্লান্তির ঘুম। ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভাঙল। বাইরে দিয়ে দেখলাম তাকে। দূর থেকে উঁকি মারছে সেই পাহাড়। চোখেমুখে সে কী আনন্দ! সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে মোবাইল বার করে ক্লিক ক্লিক হল। তার পরে সকাল ৮টা নাগাদ নামলাম কাঠগুদাম স্টেশনে। ট্রেন থেকে নামতেই ঠান্ডার চোরাস্রোত বয়ে গেল শরীরে। জ্যাকেট, টুপি পরে এক কাপ চা খেয়ে উঠলাম গাড়িতে। এ বার গন্তব্য,  নৈনিতাল।

Advertisement
নৈনিতালের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে যাবেন।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে তখন ছুটছে আমাদের গাড়ি। চারপাশে প্রকৃতির সে কী রূপ! আহা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। সূর্যের আলো পাহাড়ের গায়ে মাখামাখি হয়ে গিয়েছে। সবুজ গাছপালা যেন রোদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। ঠান্ডা হাওয়ায় সে এক মনোরম পরিবেশ। কয়েক ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছলাম নৈনিতালে। পাহাড়ের কোলে শান্ত সবুজাভ জল। তাতে এসে পড়েছে রোদের ঝিলিক। প্রকৃতির এমন মোহময়ী রূপ দেখে আমি তখন আহ্লাদে আটখানা। আমাদের হোটেলটি ছিল একেবারে লেকের ধারে। দারুণ ব্যাকগ্রাউন্ড। ছবি তো বনতাই হ্যায়। সঙ্গে সঙ্গে নৈনিতালের নানা ছবি ধরা পড়ল আমার সাধের ফোনের ক্যামেরায়।

কৌশানিতে গান্ধীজির আশ্রম থেকে হিমালয় দর্শন।

নৈনিতালের হোটেলে ফ্রেশ হয়ে কাছাকাছি দোকানে পা বাড়ালাম। নানা ধরনের শৌখিন সব জিনিসের পসরা সাজানো সে সব দোকানে। টুকটাক কেনাকাটা করলাম। দাম তেমন একটা নয়। আবার দরদামও ভাল করা যায়। মোদ্দা কথা, সস্তায় পছন্দের নানা জিনিস মিলবে ওই বাজারে। দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা গেলাম নৈনিতালের আশপাশ ঘুরে দেখতে। দেখলাম, নয়না দেবীর মন্দির, হিমালয়ান ভিউ পয়েন্ট (যদিও মেঘের জন্য দুর্ভাগ্যক্রমে হিমালয় দর্শন হয়নি), চিড়িয়াখানা ইত্যাদি। পর দিন গেলাম ভীমতাল, সত্তাল-সহ বিভিন্ন লেক দর্শনে। মধ্যিখানে আবার নৈনিতালে বোটে চড়ে ঘুরলাম। তবে সময়াভাবে রোপওয়েতে  আর চড়া হয়নি। সে যাক গে! নৈনিতালে কিন্তু বেশ ঠান্ডা ছিল। প্রায় ৫-৬ ডিগ্রির শীতে কাঁপছিলাম। তবে বেশ মজাই লাগছিল।

কেঁইচি ধাম।

দু'দিন নৈনিতালে কাটানোর পর আমরা গেলাম রানিখেত হয়ে কৌশানি। যাওয়ার পথে দেখলাম বেশ কয়েকটি মন্দির। যার মধ্যে অন্যতম কেঁইচি ধাম। বিরাট কোহলিও নাকি এই মন্দিরে প্রায়ই যান। মন্দিরের পাশাপাশি কৌশানি যাওয়ার পথে প্রকৃতির সৌন্দর্য তো সঙ্গে ছিলই। কৌশানি যখন পৌঁছোলাম, তখন সূয্যিমামা ঘুমের দেশে প্রায়। সূর্যাস্তের লাল আভায় পাহাড়ের বুকে সে কী শোভা! পর দিন ভোরে উঠে গেলাম গান্ধীজির আশ্রমে। ওই আশ্রমে গান্ধীজি এসেছিলেন। সেখান থেকে দর্শন করলাম হিমালয়। ধবধবে সাদা বরফে মোড়া হিমালয়ের চেহারা দেখে আমি তখন বাক্যহারা। অপলক দৃষ্টিতে বেশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম চুপচাপ। তার পরে ছবি তো তুললামই। সঙ্গে ঘুরে দেখলাম আশ্রম। এই পালা চোকার পর হোটেলে ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়ে পরলাম চকৌরির উদ্দেশে। যাওয়ার পথে ঢুঁ মারলাম কৌশানির চা বাগানে। মনে পড়ে গেল দার্জিলিঙের কথা। গেলাম শালের কারখানায়। দেখলাম, সেখানে শাল তৈরি করছেন কারিগররা। চকৌরি পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। পরের দিন ভোরে হোটেলের ছাদ থেকে আবার দেখা দিল হিমালয়। সূর্যোদয়ের সাক্ষী হলাম তো বটেই, পাশাপাশি রোদের ঝিলিকে হিমালয় তখন আরও মোহময়ী রূপে সামনে দাঁড়িয়ে। না চোখে দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। সে যতই আপনি ছবি তুলুন না কেন!

এই পথ দিয়েই যেতে হয় পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দির।

চকৌরি থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দির। সে এক বিরাট অভিজ্ঞতা। ৯০ ফুট নীচু গর্তের মধ্যে ঢুকতে হবে। ওই গর্তে নামা মোটেই সহজ নয়। চেন ধরে ধরে ট্রেকিংয়ের কায়দায় নামতে হবে সন্তর্পণে। আবার কখনও শুয়ে পড়ে, কখনও হাঁটু মুড়ে নামতে হবে। ইউটিউবের দৌলতে আগেভাগেই মন্দিরে প্রবেশের ভিডিয়ো দেখেছিলাম।  নামব কী ভাবে, এই ভেবে ভয়ও পেয়েছিলাম। মন্দিরের কাছে গিয়ে গর্তের মুখটা দেখে সাত পা পিছিয়ে গেলাম। সাহস জোগাল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমার বাবা। তার পর আমি আর বাবা নামলাম সেই গর্তের মধ্যে। তার পর পাতালে প্রবেশ করে মহাদেবের পুজো দিলাম। মন্দিরের নানা পৌরাণিক কাহিনি শোনালেন গাইড। ৪০ মিনিট পর পাতাল-গর্ভ থেকে বেরোলাম আমরা। বেরোনোর পর সে কী উত্তেজনা! যেন এভারেস্ট জয় করেছি।

Advertisement
জিম করব্যাটে হরিণের দেখা পাওয়া গেল।

এর পর আমরা গেলাম আলমোরায় বিবেকানন্দ আশ্রম দর্শনে। ঘুরে দেখলাম নন্দা দেবীর মন্দির। আলমোরায় এক রাত কাটিয়ে গেলাম জিম করবেটে। জঙ্গল সাফারি করলাম। সেটাও বেশ দারুণ অভিজ্ঞতা। যদিও বাঘের দেখা না পাওয়ায় কিছুটা মুখভার হয়ে ছিল। জিম করবেট ঘোরার পরের গন্তব্য ছিল ঘরে ফেরা। সাত দিনের বেড়ানোর সফর কী ভাবে যে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। হাল্কা মন খারাপ তো ছিলই আবার ঘরে ফেরার উত্তেজনাও ছিল। তবে যা চোখে দেখলাম তা কী আর ভোলা যাবে কখনও! এই সুখস্মৃতি অমলিন থাকুক। মনে মনে ভাবলাম, আবার কবে যাব বেড়াতে? গন্তব্য কোথায় হবে এ বার? 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement