রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) ৩ মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। মহামান্য আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, ডিএ সরকারের দান নয়, কর্মচারীদের অধিকার। এর আগে মহামান্য হাইকোর্ট ১৯ অগাস্টের মধ্যে বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর রাজ্য সরকার সেই রায় পুনর্বিবেচনার দাবি করে। গত ২২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদনও খারিজ করে দেয় আদালত। এরই মধ্যে আদালত রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
যে সব সংগঠন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ডিএ মামলা লড়ছে তাদের অনেকেরই আশা ৪ তারিখ শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব হাইকোর্টে জানাতে পারে, সরকার ডিএ দেবে। কিন্তু, এখন প্রশ্ন কীভাবে সরকার তা দেবে? সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন? ডিএ দিতে খরচ কত হবে? সেই অঙ্কের টাকা কি এখন রাজকোষ থেকে দেওয়া সম্ভব?
এই আলোচনার প্রথমেই যেটা জানাব সেটা হল, বকেয়া ডিএ আছে তা দিতে রাজ্য সরকারের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। তবে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কারণ, এই সরকারের ঋণের পরিমাণ হল ৩৪ শতাংশ। ভারতে যতগুলো ঋণগ্রস্ত রাজ্য আছে তাদের মধ্যে অন্যতন হল পশ্চিমবঙ্গ। ২০২২-২৩ এ সরকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, ২.২৬ লাখ কোটি টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ২.৬১ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারের অর্থের ঘাটতিও রয়েছে। অঙ্কটা প্রায় ৬২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গকে বলা হয় কনজিউমিং স্টেট। প্রোডিউসিং স্টেট একে বলা হয় না। সেই কারণে রাজস্ব আদায়ের থেকে খরচা অনেক বেশি।
৪ তারিখে যে ডিএ মামলাটা কোর্টে উঠবে সেখানে রাজ্য সরকার এই যুক্তিগুলো দিতেই পারে। তবে মহামান্য হাইকোর্ট সেই যুক্তি কতটা মানবে সেটাই দেখার। তারা বলতে পারে যে, সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। কারণ ঋণের বোঝা অনেক। খরচা অনেক বেশি।
কিন্তু ঘুরে ফিরে যে প্রশ্নটা বারবার আসছে তা হল রাজ্য এই অর্থনৈতিক দশা থেকে কবে বেরোতে পারবে। রাজ্যের কোষাগারকে চাঙ্গা করার জন্য যেটা সবথেকে বেশি এখন প্রয়োজন তা হল রাজস্ব বাড়ানো। রাজস্ব না বাড়লে ঋণ মেটানো অসুবিধাজনক। বকেয়া ডিএ মেটানোর প্রসঙ্গ তো আছেই আবার রাজস্ব না বাড়লে সরকারের যে অন্য জনমুখী প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো মার খাবে।
তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, মহামান্য আদালত বারবার বলেছে ডিএ সরকারি অনুদান নয়, এটা সরকারি কর্মীদের অধিকার। তাই সরকারকে দিতেই হবে।
এই প্রসঙ্গে আরও বলব যে, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হল বড় শিল্প নেই। রাজ্যে ভারী শিল্পের প্রয়োজন আছে, তা অনস্বীকার্য। কিন্ত তা যে হবে, আপাতত তেমন কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকারি কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন সরকার ডিএ নিয়ে কী অবস্থান নেবে, বকেয়া মেটালেও কীভাবে মেটাবে তা দেখার জন্য ৪ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
এই বক্তব্যের দায় লেখিকার নিজস্ব। আজতক বাংলা এর দায় নেবে না।