ভারতের সাহায্যেই গড়ে উঠেছিল একটি আস্ত দেশ। সেই বাংলাদেশের সঙ্গেই আজ ভারতের সম্পর্ক তিক্ততায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন আসছে। অনেক সংশয়ের মধ্যেও জাতীয় নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের জনতা। যদিও যে পরিমাণ অরাজকতা চলছে দেশটিতে, তাতে জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বিশেষ চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, এহেন পরিস্থিতিতে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে যদি শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন হয়, তারপর একটি স্থায়ী সরকার গঠন হয়, তাহলে কি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে। সার্বিক পরিস্থিতি যা চিত্র তুলে ধরছে, তাতে ভাল সম্পর্কের আশার আলো বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। যে ভারত স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে দিয়েছিল, সেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকারই এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টায় রত।
কট্টরপন্থী জামাত ই ইসলামিদের যেভাবে তোষণ চলছে বাংলাদেশে
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের একবছরের বেশি সময় কেটে গেল। এই সময়কালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে বৈঠক হয়েছে হাতে গোনা। এমনকী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি একবারই মিটিং হয়েছে ইউনূসের। মোদ্দা বিষয় হল, ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিষয় ছাড়া, দ্বিপাক্ষিক উষ্ণতা আপাতত নয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে, যে ভাবে হত্যালীলা চলছে, কট্টরপন্থী জামাত ই ইসলামিদের যেভাবে তোষণ চলছে বাংলাদেশে, তাতে এই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার কোনও যুক্তি দেখছে না ভারত, এমনই মনে করছেন বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞরা।
কেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতেও ভারতের শীতল সম্পর্ক চলতে পারে?
এর কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করতে হলে একাধিক বিষয় উঠে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (যদিও হাসিনার দাবি তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে এখনও ইস্তফা দেননি) ভারতেই রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। ভারত ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে, হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত নেই ভারতের। একইসঙ্গে বাংলাদেশে যেভাবে হিন্দু নিধন চলছে, তাতেও তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মোদী সরকার। ইউনূসের সঙ্গে যে দিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর মিটিং হল, সে বার মিটিংয়ে মোদীর সঙ্গে ইউনূসের একটি পুরনো ছবি মোদীকে গিফট করেছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন কেনার চেষ্টা করেও সফল হননি ইউনূস। একদিকে বন্ধুত্বের বার্তা, অন্যভারত-বিরোধী অ্যাজেন্ডাকে লালনপালন করা, হিন্দু নির্যাতন, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। যে জামাত ই ইসলামি হাসিনার সময়েও জঙ্গি সংগঠনের তকমায় নিষিদ্ধ ছিল, সেই জামাতদের বাড়বাড়ন্তও বেড়েছে দৃশ্যতই। তার সাম্প্রতিকতম নিদর্শন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাতের ছাত্র সংগঠনের জয়।
যদি খালেদা জিয়ার BNP ক্ষমতায় আসে
খালেদা জিয়া অতীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। খালেদার আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভাল ছিল না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রক গত ২০ অগাস্ট জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও ইনক্লুসিভ নির্বাচন চায় ভারত। যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে তাঁদের রায় দিতে পারেন। অর্থাত্ আওয়ামী লিগকে যেভাবে নিষিদ্ধ করে নির্বাচনে লড়তে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, তাকে আর যাই হোক, ইনক্লুসিভ নির্বাচন বলা যায় না। তবে এটাও ঠিক, প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব ভীষণ জরুরি। তাই সম্পর্ক যতই শীতল হোক, ভারত চাইবে বাংলাদেশে স্থির সরকার তৈরি হোক। এখনও পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে, পাল্লা ভারী খালেদার বিএনপি-র দিকেই। কারণ, এনসিপি নতুন দল, প্রথমবার ভোটে লড়েই ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ভীষণ কম। আবার জামাত কট্টরপন্থী। জঙ্গি সংগঠন বললেও অত্যুক্তি হয় না।
১৯৯৬ সালে যে পরিস্থিতি ছিল, তার থেকে কিন্তু এবারের নির্বাচনী পরিস্থিতি অনেক আলাদা। আওয়ামী লিগ নেই। সে ক্ষেত্রে পড়ে রইল জামাত ও বিএনপি। সে ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক বাংলাদেশে, ভারতকে ব্যালেন্স করতেই হবে। কিন্তু এখানে সেই একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, হিন্দু সহ সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার কি বন্ধ হবে বাংলাদেশে? বন্ধ হবে ভারত বিরোধী অ্যাজেন্ডা? পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ভাবে সখ্য গড়ে উঠেছে, তাও তো চিন্তার।
পদ্মার ইলিশ আসছে মানেই সব মধুর হয়ে উঠছে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কিছু অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতাও থাকে। এটা ভুললে চলবে না, বাংলাদেশের ইলিশের একটি বড় বাজার পশ্চিমবঙ্গ।