তোমার অশোকে কিংশুকে/অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে। সত্যিই তাই, বসন্তের রঙ এবার লাগল বলে। চারদিকে পলাশ ফুলের লাল আভা জানিয়ে দিচ্ছে আর কিছুদিন পরই মনে রঙ লাগবে। সকলের প্রিয় উৎসব হোলি বা দোল আসতে চলেছে। এ রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশে এই দোল উৎসব বা হোলি পালন করা হয়। আট থেকে আশি সকলেই এই রঙের উৎসবে মেতে ওঠে। বলা হয়, হোলি বা দোল এমন এক উৎসব যেখানে শত্রুতাকে মিত্রতায় পরিণত করতে শুধু সেই ব্যক্তির গালে রঙের ছোঁয়া দিয়ে দিন। বিশ্বাস করুন সেইদিন আপনাকে সে কিছুই বলতে পারবেন না। আসুন জেনে নিই এই দোল উৎসব বা হোলি সম্পর্কে যাবতীয় সব তথ্য।
কবে দোল উৎসব ও হোলি
রঙের উৎসব হোলি, প্রতি বছর চৈত্র কৃষ্ণ প্রতিপদে পালিত হয়, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের পূর্ণিমার পরের দিন এবং হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া ফাল্গুন পূর্ণিমায় প্রদোষ কাল মুহুর্তে করা হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, এই বছর দোল পূর্ণিমা পড়েছে ৭ মার্চ, বাংলায় ২২ ফাল্গুন, মঙ্গলবার। ৬ মার্চ অপঃ ৪/ ১৮/ ৪৭ মিনিট থেকে ৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬/ ০/ ৪০ মিনিট পর্যন্ত এই বছর পূর্ণিমা থাকবে। এই দিনটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। হোলি সাধারণত দোলের পরের দিন পালিত হয়। এবছর হোলি পড়েছে ৮ মার্চ, বাংলায় ২৩ ফাল্গুন বুধবার।
হোলিকা দহন বা ন্যাড়া পোড়া
উত্তর ভারতে খুব বড় করে হোলিকা দহন পালন করা হয়। তবে বাংলাতেও দোলের আগের দিন ন্যাড়া পোড়া করার রেওয়াজ রয়েছে। হোলির আগের দিন হয় হোলিকা দহন। এবছর দিনটি পড়েছে ৭ মার্চ। এবার হোলিকাদহনের শুভ সময় - ৬ মার্চ, বিকাল ৪.১৭ থেকে ৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬.০৯ পর্যন্ত। হোলির ৮ দিন আগে থেকে হয় হোলাষ্টক, যা শুরু হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে।
হোলিকা দহনের গুরুত্ব
কথিত আছে যে, ফাল্গুন পূর্ণিমার রাতে হোলিকা ভক্ত প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন, তাই প্রতি বছর ফাল্গুন পূর্ণিমার সন্ধ্যায় হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া ও বুড়ির ঘর করা হয়। হোলিকা দহনের পরদিন সকালে খেলা হয় দোল বা হোলি।
দোলের গুরুত্ব
দোল উৎসবটি মন্দের উপর ভালোর জয়ের প্রতীক হিসাবে উদযাপিত হয়। রঙের উৎসব দোল বা হোলিতে মানুষ একে অপরকে আবির দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, হোলি হল ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধার মধ্যে ঐশ্বরিক প্রেমের উদযাপন। এই কারণেই এই উৎসবটি মথুরা এবং বৃন্দাবনে জমকালোভাবে পালিত করা হয়।
ভেষজ আবীর দিয়েই খেলা হয় দোল
রঙের উৎসবে মেতে উঠতে সকলে বাজারের সস্তা রঙের চেয়ে এখন ভেষজ আবীরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি এই আবীরের রঙ যেমন সুন্দর তেমনি মন মাতানো তার সুবাস। বেশ কিছু বছর ধরে এই ভেষজ আবীর রঙের মার্কেট দখল করেছে। অনেকেই ত্বকের কথা ভেবে এই ভেষজ আবীর দিয়েই বসন্ত উৎসবে মেতে ওঠেন। তবে এর পাশাপাশি বেলুন, পিচকিরি এইসব দিয়েও রঙ খেলা হয়ে থাকে।