টয়ট্রেনে ফিরছে বিসর্জন, দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী নৃপেন্দ্রনারায়ণ বেঙ্গলি হলের পুজো এবার ১১১ বছরে পা দিল। ফিরছে চমক।
এক সময়ের রাজকীয় ঐতিহ্যকে ফের জাগিয়ে তুলতে উদ্যোগী হলেন দার্জিলিংয়ের নৃপেন্দ্রনারায়ণ বেঙ্গলি হিন্দু হলের পুজো উদ্যোক্তারা। এবছর ১১১তম বর্ষে পড়েছে শহরের অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপুজো। সেই উপলক্ষেই ফিরছে এক ঐতিহাসিক রীতি টয়ট্রেনে প্রতিমা বিসর্জন।
রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি এই পুজোর উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিংয়ের জেলা শাসক প্রীতি গোয়েল, পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ এবং আরও অনেকে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পাহাড় ও সমতলে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে এখনও মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমা আনা বাকি। পূর্ণ উদ্যমে চলছে প্রস্তুতি। দার্জিলিংয়ের বাঙালিদের পাশাপাশি এই পুজোয় অংশ নেন নেপালি, আদিবাসী সহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই সঙ্গে প্রতিবছর এই পুজো দেখতে ভিড় করেন প্রচুর পর্যটকও।
এবারের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ মহিলা ঢাকি। কাকদ্বীপ থেকে আসছেন দুই মহিলা ঢাকি, যাঁরা মহালয়ার বাদ্য থেকে বিসর্জনের ঢাক পর্যন্ত নানা সুরে মাতাবেন দর্শকদের। শুধু তাই নয়, পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকছে নকশালবাড়ির আদিবাসী সম্প্রদায়ের নৃত্য পরিবেশনা।
এই পুজোর সূচনা হয়েছিল মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের হাতে। প্রথম দিকে রাজপরিবারের সদস্যরাই পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। যদিও এখন এই পুজোর হাল ধরেছেন দার্জিলিংয়ের বাঙালি বাসিন্দারা। ইতিহাসের পাতায় এই পুজো শুধু ধর্মীয় নয়, এক সাংস্কৃতিক পরিচয়ের দিকপাল হিসেবেও চিহ্নিত।
পুজো কমিটির সম্পাদক শুভাশিস সেনগুপ্ত জানালেন, “আমরা দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েকে (DHR) চিঠি দিয়েছি। কথাবার্তা প্রায় চূড়ান্ত। যদি সব ঠিকঠাক চলে, তাহলে এবছর বিসর্জনের দিন প্রতিমা টয়ট্রেনে চাপিয়ে সোনাদা হয়ে রংবুলে নিয়ে যাওয়া হবে।”
এই পুজোর আর এক বিশেষ দিক হল এর সর্বজনীনতা। রেঞ্জ অফিসের কর্মী, মাহুত, গাইড, বনকর্মী থেকে শুরু করে ডাবরি, মেন্দাবাড়ি, চিলাপাতা বিটের বস্তিবাসীরা সকলে মিলেমিশে এই পুজোয় সামিল হন। সামাজিক মেলবন্ধনের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই আয়োজন।
শুধু টয়ট্রেন নয়, নিরাপত্তা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণেও নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পুজো মণ্ডপ এবং বিসর্জনের দিন পর্যাপ্ত সংখ্যক বাহিনী মোতায়েন থাকবে। উইনার্স ফোর্স থেকে শুরু করে সমস্ত থানার পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।
ঐতিহ্য, ইতিহাস, আর আধুনিকতার সমন্বয়ে সাজানো এই পুজো এবছর আরও একবার প্রমাণ করতে চলেছে, দার্জিলিং শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর নয়, এটি সংস্কৃতিরও রাজধানী।