বুনো প্রাণীর হামলার থেকে বাঁচতে রাত পেরিয়ে ভোর হলেই পুজো দেখে গ্রামে ফেরেন এই গ্রামের মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে কখনও নৌকায় চেপে আবার কখনও নদীপার করে পুজো দেখতে আসেন এ গ্রামের মানুষ।
পুজো দেখে বাড়ি ফেরার পথে মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে বক্সার দাঁতালদের। হাতির হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে অনেক সময় শিশু, সন্তানদের নিয়ে ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে হয় এ গ্রামের বাসিন্দাদের।
এই গ্রামটির তিনদিক দিয়ে বক্সার গভীর জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। নৌকা দিয়ে রায়ডাক নদী টপকে এই গ্রামে প্রবেশের একমাত্র উপায়। যখন নদীতে নৌকা থাকে না তখন নদী সাঁতরেও অনেকে এই গ্রামে প্রবেশ করে।
এছাড়াও এই গ্রামে প্রবেশের আরেকটি পথ খোলা রয়েছে। যে পথে এই গ্রামে প্রবেশ করতে হলে প্রতি পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি। তা হলো দুর্ভেদ্য বক্সার ঘন জঙ্গল টপকে।
আলিপুরদুয়ার জেলা শহর থেকে এই গ্রামটির দুরত্ব মাত্র ২৬ কিলোমিটার। এই গ্রামে দুর্গা পুজো হওয়া অনেক বড় ব্যপার এই গ্রামে আজ পর্যন্ত ঢাকের আওয়াজ পর্যন্ত শোনা যায়নি।
আলিপুরদুয়ার দুই নম্বর ব্লকে অবস্থিত এই গ্রামটির নাম খড়িয়াবস্তি।এ গ্রামের সমস্ত মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এই গ্রামের সকলেই দিনমজুর।এই গ্রামে প্রতিনিয়ত চলে হাতি, বাইসন, বুনো শুয়োর, চিতাবাঘের হামলা।
একদিকে অর্থের অনটন অন্যদিকে লাগাতার বন্যপ্রাণির হামলা। তাই এ গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের মা উমার পুজো করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় কিন্তু নেই।
তাই এ গ্রামের সহজ সরল আদিবাসী মানুষরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুজো দেখতে চলে আসেন শামুকতলা বাজারে। পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে আর সকলের থেকে অনেকটাই বেশি মুখিয়ে থাকেন সরল আদিবাসী মানুষগুলো।
এই গ্রামের কিছু দূরে নতুন বাজার ও শামুকতলা , সেখানে দুর্গাপুজো হয় মহা ধুমধাম করে। এই গ্রামের সকলেই প্রতি বছর হাজির হন সেখানে পুজো দেখতে।
রাতে ফেরার পথে বেশিরভাগ সময়ই হাতি সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মুখোমুখি হতে হয় খড়িয়াবস্তির মানুষদের। তাই অনেক সময়ই জঙ্গলে লুকিয়ে আবার কখনও সমবেত প্রতিরোধ গড়ে বন্যপ্রাণীর হাত থেকে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করে নিরাপদে বাড়ি ফেরেন সকলে।
আবার কখনও পরিবারের শিশু সন্তানদের পুজোর নিয়ে রাতে পুজো দেখে ফেরার পথে নৌকা না থাকলে বাচ্চাদের কাঁধে নিয়ে নদীও পার করতে হয় খড়িয়াবস্তির আদিবাসী মানুষগুলোকে।
গ্রামের বীণা খড়িয়া, মিলন খড়িয়া জানান আমাদের এটাই পুজোর আনন্দ। যুগযুগ ধরে এই ভাবেই আমরা দেবী দর্শন করি। তবে মা দুর্গার কৃপায় আজ পর্যন্ত দেবী দর্শন করে ফেরার পথে আমাদের কোন বিপদ হয়নি।
খুব বেশি কিছু আশা নেই তাঁদের। তবে রাতে নৌকা থাকলে সুবিধা হয়। এটুকুই দাবি। এই সাইবার যুগে এমন দাবি বিরল শুধু নয় মর্মস্পর্শী।
প্রতিবন্ধকতা আছে। তা বলে পুজো দেখবেন না, বা পুজোয় অংশ নেবেন না, তা একবারও কল্পনাতেও আনেন না তাঁরা। মা তো সবার।
তবে শুধু পুজো তো উপলক্ষ মাত্র। তাঁদের তো এভাবেই সারা বছর যাতায়াত, জীবনযাপন করতে হয়। সুতরাং আলাদা করে কোনও ক্ষোভ নেই। মায়ের আশীর্বাদ সঙ্গে রয়েছে জানালেন একজন।