আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর....মহালয়ার দিন ভোর পাঁচ টায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে এই চণ্ডীপাঠ আজও যেন নস্টালজিক বাঙালির মনের মনিকোঠায়। বর্তমান টেলিভিশন এবং সোশ্যাল সাইটে গল্পের ছন্দে মহালয়ার দিন বিভিন্ন প্রোগ্রাম সম্প্রচার করা হলেও বাঙালির মনে এদিনটিতে এখন রাজ করছে সেই রেডিও। তাই আজও রেডিওতেই সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠের চণ্ডীপাঠের অপেক্ষায় আপামর বাঙালি। তাই বর্তমানে স্মার্টফোনের যুগেও তাল মিলিয়ে নিজের রূপ রং ও আয়তন পাল্টে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে রেডিও।
বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন। এরপরই গোটা রাজ্যের মানুষ মেতে উঠবে শারদীয় উৎসবের আনন্দে। মঙ্গলবার রাত পার হলেই বুধবার মহালয়া। এইদিন পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। মহালয়ার দিন থেকে পুজোর আনন্দ শুরু হয় এ রাজ্যের আপামর বাঙালির মনে। তবে মহালয়ার দিন সকালে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠের চণ্ডীপাঠ সেই আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি উন্নয়নে সারাবছর রেডিও তেমন ভাবে দেখতে না পাওয়া গেলেও মহালয়ার দিন আজও নস্টালজিক বাঙালির ঘরে ভোরবেলা বেজে ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠ। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মাধ্যমে বেশকিছু প্রোগ্রাম সম্প্রচার করা হলেও বাঙালির মনে আজও তেমন জায়গা করে নিতে পারেনি এই নতুন যুগের মহালয়ার অনুষ্ঠান। তাই আজও এ রাজ্যের আপামর বাঙালি অধীর অপেক্ষায় থাকে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠের। তাই সারাবছর রেডিও ঘরে থাকলেও মহালয়ার আগে রেডিওকে একবার সার্ভিসিং করিয়ে নেন সকলেই। ফলে মহালয়ার আগে প্রতিবছরই চাপ বাড়ে রেডিও সারাইয়ের দোকান গুলিতে।
শিলিগুড়ির রেডিও ব্যবসায়ী তথা সার্ভিস সেন্টারের কর্মী সুমিত চক্রবর্তী বলেন, আমরা সারা বছরই রেডিও বিক্রি করি এবং মেরামত করি তবে মহালয়ার আগে রেডিও মেরামতের চাপ বাড়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর থেকে বোঝা যায় রেডিওতে মহালয়ার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চণ্ডীপাঠের কদর আজও রয়েছে। অন্যদিকে তিনি আরো বলেন বর্তমান যুবসমাজের কাছে রেডিওর আকর্ষণ বাড়াতে রেডিওতে অনেক নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকশতক আগে তড়িৎচুম্বক তরঙ্গকে হাতিয়ার করে আবিষ্কার হয় রেডিওর। প্রথমদিকে এই রেডিওর ছিল কাঠের তৈরি এবং আয়তনে অনেকটাই বড়। তবে সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নয়নে আয়তনে ছোট হয়েছে রেডিওর। সেই সময় টিউনিং সুইচ ঘুরিয়ে সেন্টার খুঁজতে হতো। তবে আজকের দিনে প্রযুক্তির উন্নয়নে রেডিও হয়েছে আধুনিক। এখন সুইচ টিপলে পাল্টে যাচ্ছে সেন্টার। এছাড়াও বর্তমান যুব সমাজের রেডিওর প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে রেডিওতে যুক্ত হয়েছে USB প্রযুক্তি। এর ফলে যেকোনো সময় শ্রোতা নিজের পছন্দমত গান বাজাতে পারবেন রেডিওতে। তাই স্মার্টফোনের যুগে কৌলিন্য হারালেও আজও নিজের অস্তিত্বকে ধরে রেখেছে প্রাচীন এই রেডিও।
শিলিগুড়ির প্রাক্তন আকাশবাণী কর্মী নির্মেলেন্দু ভদ্র বলেন ১৯৩২ সালে প্রথম আকাশবাণী কলকাতা থেকে বসন্তস্বরি নামে দিয়ে প্রথম মহালয়ার অনুষ্ঠান সম্প্রসারিত হয় ।পরবর্তীতে বিবর্তনের ফলে ১৯৩৬ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। তবে আজও বাঙালির মনে সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ গেথে রয়েছে। এখন মহালয়ার দিন দেখা যায় এযুগের ছেলে মেয়েদের দূরদর্শনে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানকে স্বচক্ষে চাক্ষুষ করতে। পাশাপাশি রেডিওতে মহালয় সোনার প্রবণতা আজও দেখা যায়।
এদিকে ট্যুইটের মাধ্যমে মহালয়ার কথা মনে করিয়ে দিল অল ইন্ডিয়া রেডিও (All India Radio)। রাত পোহালেই বাঙালির রেডিও পুজো। বুধবার ৬ অক্টোবর ভোর চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটায় অল ইন্ডিয়া রেডিও, এফএম গোল্ড, আকাশবানী কলকাতায় শোনা যাবে মহালয়ার বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান "মহিষাসুরমর্দিনী" (‘Mahishasuramardini’)। সঙ্গে AIR Live News 24x7-এর ইউ টিউব চ্যানেলেও শোনা যাবে।