ইতালির খ্যাতনামা শিল্পী মাউরিজিও ক্যাটেলান আবারও চমকে দিলেন গোটা বিশ্বকে। তিনি তৈরি করলেন এমন এক টয়লেট, যার প্রতিটি অংশ ১৮ ক্যারেট খাঁটি সোনায় মোড়া। শিল্পমহলে কেউ বলছেন ‘অসাধারণ নিদর্শন’, কেউ বলছেন ‘অযৌক্তিক বিলাসের ব্যঙ্গচিত্র’। কিন্তু তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই শিল্পকর্মকে ঘিরে কৌতূহল থামছেই না।
শিল্পী ক্যাটেলান এর আগেও খবরের শিরোনামে এসেছিলেন, দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলাকে শিল্পকর্ম হিসেবে তুলে ধরে। তাঁর সেই বিতর্কিত কাজের পর এবার এই সোনার টয়লেট নিয়ে শুরু হয়েছে আরও জোরালো আলোচনা। শিল্পী টয়লেটটির নাম দিয়েছেন ‘আমেরিকা’। জ্বলজ্বলে সোনার বোল, সিট থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কাঠামো, দেখতে যেন প্রকৃতির বাইরে কোনও ভাস্কর্য।
এই টয়লেট তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে প্রায় ১০১ কেজিরও বেশি ১৮ ক্যারেট সোনা। বর্তমান বাজারদরে শুধু সোনার দামই প্রায় দশ মিলিয়ন ডলার ছুঁই-ছুঁই। তবে সোনার মূল্য ছাপিয়ে যায় এর শিল্পমূল্য। Sotheby’s–এর নিলামঘরে টয়লেটটি শেষ পর্যন্ত ১২.১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। যা ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১০১ কোটি টাকার সমান।
পুরো টয়লেটটির ওজন ২২৩ পাউন্ড, অর্থাৎ প্রায় ১০১ কেজি। আশ্চর্যজনকভাবে, এটি শুধু প্রদর্শনীর জন্য তৈরি কোনও নিষ্ক্রিয় ভাস্কর্য নয়। এটি কার্যকর একটি টয়লেট, plumbing-সহ ইনস্টল করা হলে ব্যবহার করা যায়। তাই শিল্পমহল যেমন উত্তেজিত, সাধারণ মানুষের কাছেও এটি এক বিরল অভিজ্ঞতা।
এই টয়লেটটি আপাতত রয়েছে Ripley’s Believe It or Not-এর সংগ্রহে। বিশ্বের অদ্ভুত ও বিস্ময়কর সব জিনিস নিয়ে যাদের প্রদর্শনী সাজানো, সেখানে এই সোনার টয়লেট যুক্ত হওয়ায় সংস্থাটি বলছে, এটাই তাদের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সংগ্রহ।
শিল্পী ক্যাটেলান জানিয়েছেন, সমাজে বৈষম্য, সম্পদের অসম বণ্টন এবং শিল্পের দাম যে কী ভাবে মাঝে মাঝে বাস্তবতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে। এই টয়লেট সেই ব্যঙ্গাত্মক বার্তাই বহন করে। তাঁর বক্তব্য, বিলাসিতা এবং সাধারণ জীবনের সংঘাতকে তিনি শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
টয়লেটটির অপর একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের ব্লেনহাইম প্যালেস থেকে চুরি হয়ে যায়। সন্দেহ করা হয়, সেটি সম্ভবত গলিয়ে ফেলা হয়েছিল। অন্যদিকে নিউ ইয়র্কের গুগেনহাইম মিউজিয়ামে প্রদর্শনের সময় মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শুধু ‘বিশ্বের সবচেয়ে দামী টয়লেট’ ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা নিতে।