আচ্ছা দুনিয়ায় দুর্লভ রক্তের নাম কী? উত্তর, সোনার রক্ত। আজ্ঞে হ্যাঁ, এই রক্তকে গোল্ডেন ব্লাড বলেন বিজ্ঞানীরা। কতটা দুর্লভ তা একটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হবে। দুনিয়ায় ৫০ জনের কম শরীরে পাওয়া যায় এই রক্ত। ফলে এই ধরনের মানুষের দরকারে রক্ত জোগাড় করাটা কষ্টসাধ্য।
গোল্ডেন ব্লাড কী? স্বর্ণ রক্ত সেই সমস্ত ব্যক্তির শরীরে থাকে যাঁদের আরএইচ (Rh) ফ্যাক্টর নাল (Null)। অর্থাৎ Rh-null। এই ধরনের আরএইচের রক্তে ৫১টি অ্যান্টিজেন কম পরিমাণে থাকে। ফলে অত্যন্ত সাবধানে চলতে হয় মানুষকে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দুনিয়ায় ৪৩ জনের শরীরে রয়েছে গোল্ডেন ব্লাড। ১৯৬১ সালে প্রথম এই ধরনের রক্তের খোঁজ মেলে অস্ট্রেলিয়ান এক গর্ভবতী মহিলার রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল। ডাক্তাররা। Rh-null থাকায় মহিলার গর্ভেই সন্তানের মৃত্যু হয়।
আগে রক্তের প্রকারভেদ নিয়ে কেউ জানতেন না। কয়েক হাজার বছর ধরেই এ ব্যাপারে মানুষ অজ্ঞ ছিল। ১৯০১ সালে অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ডস্টিনর রক্তের শ্রেণি বণ্টন শুরু করেন। ১৯০৯ সালে তিনি জানান, রক্ত A, B, AB ও 0 প্রকারের মেলে। ১৯৩০ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
যে কোনও প্রাণীর রক্তে সাধারণত চারটি জিনিস পাওয়া যায়। রক্তকণিকা যা পুরো শরীরে অক্সিজেনের সঞ্চার করে, কার্বন ডাই অক্সাইডকে বাইরে বের করে দেয়। সাদা রক্তকণিকা- যা শরীরে অভ্যন্তরীণ সংক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। প্লেটলেটস রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এবং প্লাজমা। যা এনজাইমকে প্রবাহিত করে।
রক্তে অ্যান্টিজেন প্রোটিন থাকে। যা নানান কাজে লাগে। বহিরাগত শত্রুদের ব্যাপারে শরীরকে সজাগ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। অ্যান্টিজেন না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। এ শ্রেণির রক্ত থাকা শরীরে বি শ্রেণির রক্ত প্রবেশ করালে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শত্রু ভেবে RBC-কে আক্রমণ করবে। ফলে শরীরে ভিতরেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ।
A, B, AB আর O শ্রেণির রক্ত পরে পজিটিভ ও নেগেটিভ ভাগ করা হয়। O নেগেটিভ রক্ত সকলেই গ্রহণ করতে পারেন। কারণ এই রক্তের RBC-তে A, B ও RhD অ্যান্টিজেন মেলে না।
আট প্রকারের রক্ত হয়। কিন্তু অ্যান্টিজেনের হিসেবে দেখলে প্রকার আরও বাড়ে। আগে RhD প্রোটিনকে Rh ব্যবস্থার ৬১টি অ্যান্টিজেনের মধ্যে অন্যতম ধরা হত।কিন্তু যে রক্তে ৬১ অ্যান্টিজেনই নেই সেটিকে Rh-null বা গোল্ডেন ব্লাড বলা হয়। তাই কারও শরীরে এই রক্ত কাজে লাগে না। এমনকি অন্য রক্তও গ্রহণ করতে পারে না।
গোল্ডেন ব্লাড নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। কারণ রক্তের দরকার পড়লে সহজে দাতা মেলে না। ফলে এই রক্তের ব্যক্তিরা রক্তদান করতে থাকেন। তা নির্দিষ্ট ব্লাডব্য়াঙ্কে জমা থাকে। দরকার হলে সেখান থেকে নেওয়া হয়।