প্রতি বছর ২ জুন পালিত হয় সেক্স ওয়ার্কার্স ডে (International Whores' Day) বা বিশ্ব যৌনকর্মী দিবস। আজ অর্থাত্ সোমবারই সেই দিন।
এই দিনের উদ্দেশ্য হল যৌনকর্মীদের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া, তাঁদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের বৈষম্য তুলে ধরা এবং তাঁদের পেশাকে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া।
এই দিন এলেই ফের একবার সামনে আসে একটি পুরনো প্রশ্ন,যৌনকর্ম কি সত্যিই পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পেশা? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ভারত ও আমেরিকার মতো দেশে এই পেশার আইনি অবস্থান ঠিক কী?
ভারতে যৌনপেশা সরাসরি অবৈধ নয়। কিন্তু এই পেশা ঘিরে আইনি কাঠামো খুবই জটিল এবং সীমিত। ‘ইমোরাল ট্র্যাফিকিং (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুযায়ী প্রকাশ্য স্থানে যৌন কাজ করা, দালালের মাধ্যমে খদ্দের জোগাড় করা বা কোনও যৌনপল্লি চালানো আইনবিরুদ্ধ। তবে, কোনও নারী যদি নিজের ইচ্ছায় কোনও ব্যক্তিগত জায়গায় এই পেশায় যুক্ত থাকেন, তবে তা অপরাধ নয়।
যৌনপেশার প্রচার করা। দালালের মাধ্যমে খদ্দের খোঁজা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে খদ্দের ডাকাডাকি (solicitation)। স্কুল বা ধর্মীয় স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে যৌনপেশা চালানো
এইসব বিধিনিষেধের ফলে যৌনকর্মীরা মাঝেমধ্যেই পুলিশি হয়রানি ও সামাজিক অপমানের শিকার হন, যদিও তাঁদের কাজ পুরোপুরি বেআইনি নয়।
আমেরিকার বেশিরভাগ রাজ্যেই যৌনপেশা পুরোপুরি অবৈধ। শুধুমাত্র নেভাডা রাজ্যের কিছু নির্দিষ্ট কাউন্টিতে তা কঠোর শর্তসাপেক্ষে বৈধ।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় নীতি অনুযায়ী, যৌনকর্মকে মানব পাচার, মাদক কারবার ও হিংসাত্মক অপরাধের সঙ্গে জুড়ে দেখা হয়।
যৌনকর্মী এবং খদ্দের উভয়ের জন্যই জেল বা জরিমানা। দালাল বা পাচারকারীদের জন্য কঠোর সাজা। কিছু রাজ্যে পুনরাবৃত্ত অপরাধে লম্বা মেয়াদের কারাদণ্ড
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মেসোপটেমিয়া, প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় যৌনপেশার অস্তিত্ব ছিল। ‘কামসূত্র’, ‘মহাভারত’, এমনকি প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে ‘নগরবধূ’, ‘দেবদাসী’ প্রথার উল্লেখ রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যখন থেকে সমাজে সম্পত্তি, ধন ও শ্রেণি বিভাজন এসেছে, তখন থেকেই যৌনপেশা এক ধরনের জীবিকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। জর্জ বার্নার্ড শ’ ও থমাস কার্লাইল-এর মতো চিন্তাবিদরাও যৌনপেশাকে "the oldest profession" বলেই উল্লেখ করেছেন।
বর্তমান সময়ে যৌনপেশা ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে—এটা কি সম্পূর্ণ বৈধ করা উচিত? যৌনকর্মীদের মতে, যদি তাঁরা স্বেচ্ছায় এই পেশায় যুক্ত হন, তাহলে তাঁদেরও স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ও আইনগত সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার থাকা উচিত।
অন্যদিকে, বিরোধীরা মনে করেন, যৌনপেশাকে বৈধতা দিলে মানব পাচার ও নারী নির্যাতন আরও বাড়বে।