ভারত-পাকিস্তান নিয়ে টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার সেই কূটনৈতিক ঠেলাঠেলি এসে ঢুকেছে মিষ্টির দোকানে! কীভাবে? রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে এখন চলছে এক আজব ট্রেন্ড। ‘পাক’ শব্দ শুনলেই মানুষের যেন গায়ে জ্বালা ধরছে। আর সেই জ্বালার আঁচে গলে যাচ্ছে ‘মোতি পাক’, ‘গাজর পাক’, ‘গোঁদ পাক’, এমনকী 'ম্যসুর পাক'-এর মতো নামি দামি মিষ্টির নামও। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন—এই ‘পাক’ শব্দটাকেই এখন বদলে দেওয়া হচ্ছে ‘শ্রী’ কিংবা ‘ভারত’ দিয়ে!
‘মোতি পাক’ এখন ‘মোতি শ্রী’, ‘গাজর পাক’ হয়েছে ‘গাজর ভারত’, ‘ম্যসুর পাক’ হয়ে গেছে ‘ম্যসুর শ্রী’। যাঁরা মিষ্টির দোকানে গিয়ে “একটা গোঁদ পাক দেবেন” বলতেন, তাঁরাও এখন গম্ভীর গলায় বলছেন, “গোঁদ শ্রী আছে?” দোকানদাররাও গর্বভরে উত্তর দিচ্ছেন—“আছে, দেশি সংস্করণ!”
এই নাম বদলের পিছনে কারণ? দেশভক্তি, স্যর! একদিকে যখন সীমান্তে উত্তেজনা, অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ‘বয়কট পাকিস্তান’ ট্রেন্ড, তখন মিষ্টির দোকানগুলোও পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। দোকানদারদের কথায়, “আমাদের কাছে কাস্টমাররা এসে বলছিল, ভাই, এই 'পাক' শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবলাম, নামটাই পাল্টে দিই।”
এখানেই শেষ নয়। জয়পুরের ‘স্বর্ণ ভস্ম পাক’ এখন ‘স্বর্ণ ভস্ম শ্রী’। এমনকি ‘চাঁদিভস্ম পাক’-এর জায়গায় এখন ‘চাঁদিভস্ম শ্রী’। সব মিষ্টির গায়ে যেন নতুন করে লেগেছে ‘দেশপ্রেমের ছোঁয়া’। মিষ্টি এখন শুধু জিভে জল আনে না, মনে দেশাত্মবোধও জাগায়!
তবে বিষয়টা একেবারে হালকাভাবে নেওয়ার মতো নয়। কারণ, এই পরিবর্তন এসেছে সাধারণ মানুষের আবেগ থেকেই। দোকানদাররা বলছেন, 'এটা কোনও মার্কেটিং স্টান্ট নয়। আমরা তো ভাবতেই পারিনি, মিষ্টির নাম নিয়েও কেউ এত আবেগপ্রবণ হতে পারে। কিন্তু এখন দেখি, ক্রেতারা নিজে থেকেই চাইছেন এমন নাম।'
এতদিন যে ‘পাক’ মানে ছিল ‘পাকানো’ বা রান্না করা—সেটা এখন অনেকের কানে পাকিস্তান মনে করিয়ে দেয়। সুতরাং, সেই শব্দই এখন ঘৃণার বস্তু হয়ে উঠেছে। এবং তার জেরে দেশের সবচেয়ে প্রিয় খাবার—মিষ্টির নামেও আসছে পরিবর্তন।
জয়পুরের বিখ্যাত এক মিষ্টিওয়ালা বলছেন, “আমরা শুধু মিষ্টি বিক্রি করি না, মানুষের মনও ভাল রাখার চেষ্টা করি। যখন দেখি, নাম শুনে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের দায়িত্ব কিছু একটা করার।”
খবর ছড়াতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে ঝড়। কেউ বলছেন, “দেশপ্রেমের এমন মিষ্টি স্বাদ আগে কখনও পাইনি।” কেউ লিখছেন, “জয়পুরের ‘ম্যসুর শ্রী’ খেয়ে বুঝলাম, সত্যিই নাম বদলে গেলে মনের তৃপ্তি বেড়ে যায়।”
তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, 'এতটা বাড়াবাড়ি দরকার ছিল?' উত্তরে মিষ্টির দোকানদারদের বক্তব্য, 'দেশের জন্য যদি মিষ্টির নামও বদলাতে হয়, তাহলেও রাজি আছি!' তাই বলাই যায়, রাজনীতি, কূটনীতি, সীমান্ত—এসব তো আছেই, কিন্তু এবার ‘মিষ্টির প্লেট’-এও ঢুকে পড়েছে জাতীয়তাবাদ!
আর সেই জাতীয়তাবাদ যখন ‘মোতি শ্রী’ কিংবা ‘গাজর ভারত’-এর মতো মিষ্টিতে মিশে যায়, তখন তাতে আপত্তি করার চাইতে একটুখানি চেখে দেখাই ভালো, তাই না? খেয়াল রাখবেন, দেশপ্রেমে এখন ক্যালরি বাড়লেও, কনফিউশন কমছে!