ইউটিউবার রোদ্দুর রায় গ্রেফতার। দুপুরেই এই খবর প্রকাশ্যে চলে আসে। জানা যায় গোয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইউটিউবারকে। হেয়ার স্ট্রিট থানায় দায়ের হওয়া মামলায় রোদ্দুর রায়কে গ্রেফতার করে লালবাজারের সাইবার ক্রাইম, গুন্ডাদমন শাখা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রোদ্দুর রায়ের অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ। আর তাতেই একাধিক থানায় ইউটিউবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের। বুধবার রোদ্দুর রায়কে নিয়ে আসা হচ্ছে কলকাতায়। রোদ্দুরের গ্রেফতারির পর তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চার শেষ নেই।
বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগেও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। তাঁকে ইন্টারনেট সেনসেশন বলাই যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় রোদ্দুর রায় নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম অনির্বাণ রায়। নয়ডার এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার আইটি কর্মী হিসেবে কাজও করেছেন রোদ্দুর।
ভূত বর্তমান আর ভবিষ্যতের 'পুরো প্রতিবাদী ভাবমূর্তি' রোদ্দুর রায় নিজেকে বলেন 'মোকসা'। তিনি একধারে ইউটিউবার, এন্যদিকে কবি- লেখক-গায়ক-সাবঅল্টার্ন ভয়েস।
রোদ্দুর হলেন কলকাতার লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের পরিচিত একটি মুখ। 'মোক্সা গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট', 'মোকসা রেডিয়ো' ইত্যাদির সঙ্গেও জড়িত তিনি। বিকৃত করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গান। কবিতাও লেখেন।
নিজেকে ‘বিশ্যোকোবি’বলে দাবি করে থাকেন তিনি। কিন্তু নিন্দুকেরা বলেন, তিনি পাগল। অনেকে আবার এমনটাও বলে থাকেন যে, রবীন্দ্র সংগীত বিকৃতির দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা অবধি করে দেওয়া উচিত। তবে এ সবের তিনি ধার ধারেন না। কে কী বলল তাঁর কিসসু যায় আসে না।
নেটপাড়ার তিনি পরিচিত মুখ। ফেসবুকে ও ইউটিউবে উদ্ভট সব ভিডিয়ো তিনি বানিয়ে থাকেন। কখনও রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে কাটাছেঁড়া তো কখনও আবার অন্য কারও। সাম্প্রতিক অতীতের নানান সমস্যা যেমন CAA, NRC এমন নানান বিষয় নিয়েও বাণী শোনাতে কুণ্ঠা বোধ করেন না তিনি।
মুখে অশ্রাব্য ভাষা ছুটলেও রোদ্দুর রায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। রামনগর কলেজ থেকে তিনি স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন। গিটার বাজাতে পারদর্শী রোদ্দুর কিছু দিন ডিজে হিসাবেও কাজ করেছেন।
রোদ্দুর রায় গবেষক হিসাবেও কাজ করেছেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু চেতনা বিজ্ঞান। অনেকের মত, তিনি যে ভাষা প্রয়োগ করেন এবং যে ধরনের গানবাজনা করেন, তা তাঁর গবেষণার অঙ্গ। মনোবিজ্ঞানের উপর একটি বইও লিখেছেন রোদ্দুর রায়। সেই বইয়ের নাম ‘অ্যান্ড স্টেলা টার্নস এ মম’। শোনা যায়, বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী থাঙ্কমণি কুট্টির সঙ্গেও গবেষণায় কাজ করেছেন রোদ্দুর রায়।
রোদ্দুর রায়ের নামে গত ৩ জুন চিৎপুর থানায় এফআইআর করেন তৃণমূল নেতা ঋজু দত্ত। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে বিভিন্ন বিশিষ্টজনের সমালোচনা করেন রোদ্দুর রায়। সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। লাইভে মুখ্যমন্ত্রীকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন রোদ্দুর রায়। অশ্রাব্য শব্দ প্রয়োগ করা হয় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সারাধণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও। আবার গত মাসে রাজ্য সরকারের তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া নিয়েও কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন এই ইউটিউবার। মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানহানির দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাটুলি থানায় সেবার এফআইআর (FIR) দায়ের করেছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য অরিত্র সাহা। অশালীন ভাষার প্রয়োগ বারবারই সমালোচিত হয়েছেন রোদ্দুর রায়। এবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হল।
এর আগে ২০২০ সালে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত উৎসবে রবীন্দ্র সংগীতের মধ্যে ‘অশ্লীল শব্দ’ ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল রোদ্দুর রায়কে। সেই সময় তার বিরুদ্ধে বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। সেবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসে ‘বসন্ত উৎসব’ ঘিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত কিছু তরুণ-তরুণীর ছবি ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথার সঙ্গে ‘অশ্লীল শব্দ’ পিঠে লিখে বসন্ত উৎসবে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওই ছবি সবার সামনে আসার পর ঘটনার নিন্দায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এর আগে ওইসব ‘অশ্লীল শব্দ’ যোগ করে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে ভাইরাল হন রোদ্দুর রায়।