Antibiotics And Viral Fever: ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছে বয়স্ক ব্যক্তি থেকে শিশুরা। ভাইরাল জ্বর ফের আতঙ্ক বাড়িয়েছে বাংলায়। ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বাড়তেই চিকিৎসকদের দেওয়া প্রেসক্রিপশনে বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োগ, ঘরে ঘরে বেড়েছে এর ব্যবহার। মুখে ভাইরাল জ্বর বললেও ডাক্তারবাবুরা তাঁদের প্রেসক্রিপশনে কেন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দিচ্ছেন? অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে কি ভাইরাল জ্বর বা ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা যায়? উত্তর দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা...
ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কেন?
এই প্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ (চাইল্ড স্পেশালিস্ট) ডাঃ শমীক হাজরা (Dr Samik Hazra) বলেন, “ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও প্রমাণিত উপযোগিতা নেই। বরং, অকারণে অ্যান্টিবায়োটিকের অতি ব্যবহারে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। তবুও বহু প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রবণতা সন্দেহাতীতভাবে অযৌক্তিক। ভাইরাল জ্বরে কখনওই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুন: Exclusive: ভাইরাসের যে কোনও স্ট্রেন রুখতে ১০০% সফল, নতুন ওষুধ-থেরাপি আবিষ্কার বাঙালি বিজ্ঞানীর
কিন্তু তাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। অনেক ভাইরাস এখন খুব দ্রুত চরিত্র পরিবর্তন করছে। ফলে রোগের লক্ষণগুলিও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে না। ভাইরাল জ্বরের যে বিশেষ লক্ষণগুলি আমরা আগে দেখতে পেতাম, এখন সব সময় তা পাওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র রোগের লক্ষণ দেখে ভাইরাল না ব্যাকটেরিয়াল জ্বর, তা বোঝা ক্রমশ শক্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি রক্ত পরীক্ষা করেও অনেক সময় নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন, অ্যাডেনো ভাইরাসের সংক্রমণ যা গত কয়েক মাস ধরে এ রাজ্যে বহু মানুষকে অসুস্থ করেছে, তার লক্ষণগুলি এমনকি রক্ত পরীক্ষার ফলাফলও অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের মতো। এই সমস্ত পরিস্থিতিতে হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
কিন্তু তার বাইরে যে অগণিত ভাইরাল ইনফেকশন হয়, তাতে মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা অসমীচীন। মনে রাখতে হবে, যত জ্বর হয় তার ৯০ শতাংশেরও বেশি ভাইরাল। তাই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি যে এই বিশেষ ক্ষেত্রে জ্বরের নেপথ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। যদি কখনও সন্দেহের বশে শুরুতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়াও হয়, যেই মুহূর্তে এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে জ্বরটি ভাইরাল, তখনই অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দেওয়া উচিত। নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করাই উচিত। যে কোনও জ্বরের প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার দীর্ঘ মেয়াদে অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং বিপজ্জনক! অপ্রয়োজনে, অনুমানের উফর ভিত্তি করে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রথমে চিকিৎসকদেরই আরও সচেতন হতে হবে। কারণ, প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শের ক্ষেত্রে রোগীর কোনও ভূমিকা থাকে না।”
বিশেষজ্ঞ (মেডিসিন) চিকিৎসক ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস (Dr Arindam Biswas) বলেন, “ভাইরাল ফিভারে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত নয়। যদি চিকিৎসক জ্বর বা শারীরিক সমস্যার কারণ হিসাবে ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ অপ্রয়োজনীয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তোলার তাগিদ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আগে একাধিক পরীক্ষা করার প্রয়োজন, যা সময় এবং খরচ সাপেক্ষ। ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। তাছাড়া, চিকিৎসকদের হাতে সব ভাইরাসের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও নেই। ফলে পরিকাঠামো এবং ওষুধের অভাবে, রোগীকে সময় ও টাকা বাঁচিয়ে দ্রুত সারিয়ে তুলতে অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাল জ্বরের আনুষঙ্গিক স্বাস্থ্য সমস্যা কমাতে চিকিৎসকদের কাছে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। তবে চিকিৎসক যদি ভাইরাল ফিভার সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত থাকেন, সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের মতো ওষুধের উপর নির্ভর করে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা এবং তাঁর সেরে ওঠার জন্য অন্তত দিন তিনেক অপেক্ষা করে দেখাটা উচিত। তিন-চার দিনে জ্বর-সর্দি-কাশি না কমলে তখনও প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লেখার আগে রোগীকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া জরুরি।”
প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ডাঃ অমিতাভ নন্দী (Dr Amitabha Nandi) বলেন, “প্রথমেই বলি, অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাল জ্বরের ওষুধ নয়। তবে যথাযথ পরিকাঠামোর অভাব এবং প্রয়োজনীয় সব রকম ভাইরাসের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ না থাকায় রোগীকে সুস্থ করতে তাঁর সম্ভাব্য ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বা অসুস্থতা দ্রুত কমাতে প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসকরা। এতে ভাইরাল জ্বর না কমলেও এ সঙ্গে থাকা অস্বস্তিকর বেশ কিছু সমস্যা দ্রুত কমে যায়, রোগীর কষ্টও বেশ কিছুটা লাঘব হয়।
এর পরেও বলব, যদি জ্বরের কারণ ভাইরাস হয় এবং উপসর্গগুলিও ভাইরাল ফিভারের মতোই মনে হয়, সে ক্ষেত্রে দিন দুই তিনেকের পর্যবেক্ষণ এবং জ্বর গা-হাত-পা ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়াটাই সবচেয়ে উপযুক্ত পন্থা। অযথা অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়ার অভ্যাসটা চিকিৎসকদেরই গড়ে তুলতে হবে। আর যদি দিতেই হয়, সে ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লেখা উচিত।”