Bagbazar: উত্তর কলকাতার অন্যতম প্রাচীন অঞ্চল বাগবাজার (Bagbazar)। এর গা বেয়ে বয়ে গেছে হুগলি নদী (Hooghly River)। বাগবাজার বলতেই আমরা যা বুঝি তা হল, বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসব। যে ডাকের সাজের টানে মাকে দেখতে দেশ, বিদেশ থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। দশমীর সিঁদুর খেলায় দেখা যায় মেয়ে-বউদের ভিড়। এই বাগবাজারে রয়েছে জনপ্রিয় নীলাচলের মাছের কচুরি, সুরেন্দ্রনাথ ঘোষের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান। বাগবাজারের তেলেভাজার সুনামও রয়েছে কলকাতাজুড়ে। হালফিলে গজিয়ে ওঠা ক্যাফে, রেস্তোরাঁর মধ্যেও 'ওল্ড চ্যাপ্টার' খানাপিনার দোকানগুলি একেবারেই হারিয়ে যায়নি।
বাগবাজারের ওলি-গলিতে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। সমগ্র ভারতীয় ভাষার মধ্যে প্রথম কোষগ্রন্থ বা এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে চিহ্নিত ‘বিশ্বকোষ’ গ্রন্থের প্রণেতা নগেন্দ্রনাথ বসু, নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষও বাগবাজারেরই বাসিন্দা। এখানকার নাটকের দল ‘বাগবাজার অ্যামেচার থিয়েটার’ই ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ নামে আত্মপ্রকাশ করে ১৮৭২-এ।
বাগবাজার বলতে আরও যা যা আমরা বুঝি তা হল বাগবাজার ঘাট, মায়ের ঘাট। এই বাগবাজার ঘাটে বেলা পড়লেই জমাটি আড্ডা বসে কলেজ পড়ুয়াদের। একহাতে বাগবাজার রেল স্টেশন অন্যহাতে ফেরি ঘাট। সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যমণ্ডিত এই বাগবাজারের নাম 'বাগ বাজার' কীকরে হল জানেন?
বাগবাজার নামকরণের ইতিহাস
কেউ কেউ বলেন, ফার্সি শব্দ ‘বাগ’ অর্থাৎ বাগান এবং আরবি শব্দ ‘বাজার’ অর্থাৎ জিনিসপত্র বিক্রির জায়গা থেকেই ‘বাগবাজার’ নামটি এসেছে। তার মানে এখানে এককালে, বাগানও ছিল, বাজারও ছিল। আবার কেউ বলেন, হুগলি নদীর বাঁক থেকেই, এর নাম অপভ্ৰংশ হয়ে হয়েছে বাগবাজার। হুগলি নদীর বাঁক ধরে বসত বাজার।
তবে বাগান থেকে বাগবাজার হওয়ার ইতিহাসের একটি ব্যাখ্যা আছে। জানা যায়, এখানে একটি সুবিশাল বাগান ছিল। মালিক ক্যাপ্টেন পেরিনের নামানুসারে লোকে বলত ‘পেরিন সাহেবের বাগান’। সেই বাগান বিস্তৃত ছিল হুগলি নদী পর্যন্ত। ঋণের দায়ে একসময় পেরিন সাহেবের বাগান নিলামে ওঠে। এরপর ১৭৫২ সালে এই বাগানটি নাকি ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়। এরপর এই জায়গাটি বিক্রির হাতবদল হতে হতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির হাতে গিয়ে পড়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হুগলি নদীকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বাণিজ্য করার কারণে এই এলাকাতেও বাজার তৈরি হয়। উল্লেখ্য, আপজন-এর ম্যাপে ওল্ড পাউডার মিল বাজার নামে একটি বাজারের উল্লেখ রয়েছে। পেরিন সাহেবের বাগান আর পরে কোম্পানির বাজার নিয়েই হয়তো নামকরণ হয় বাগবাজারের।
এ তো গেল বাগবাজারের নামকরণের ইতিহাস। তবে বাগবাজারের ইতিহাস কয়েক শব্দে শেষ হওয়ার নয়। ইতিহাস বাগবাজারের পরতে পরতে। আস্ত একখান বই রচনা হয়ে যায় বাগবাজারকে কেন্দ্র করে।