Advertisement

Maa Dhakeswari: দেশভাগে ছিন্নমূল, ঢাকা থেকে কলকাতায় উদ্বাস্তু হয়ে আসেন স্বয়ং ঢাকেশ্বরী

দেশভাগের সময়ে লক্ষ লক্ষ ভিটেমাটি হারা মানুষের মতো উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকার দেবী ঢাকেশ্বরীর মূর্তিও চলে আসে কলকাতায়। গোপনে এক বিশেষ বিমানে ঢাকেশ্বরী দেবীর আসল মূর্তি নিয়ে আসা হয়েছিল। এখানেই তৈরি হয় নতুন মন্দির। আজ কলকাতা শহরের কুমারটুলিতে তা ‘ঢাকেশ্বরী মায়ের মন্দির’ হিসেবে পরিচিত। আর এভাবেই ঢাকার ঢাকেশ্বরী হয়ে উঠলেন কুমোরটুলির ‘ঢাকেশ্বরী মাতা’।

কলকাতা থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে ঢাকার বুকে এখনও দাঁড়িয়ে আছে আদি মন্দিরটি
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 27 Oct 2021,
  • अपडेटेड 5:03 PM IST
  • বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কথা সকলেরই জানা
  • এটি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে
  • কিন্তু এই কলকাতা শহরের বুকেও রয়েছে 'ঢাকেশ্বরী মায়ের মন্দির'


 বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কথা সকলেরই জানা। এটি বাংলাদেশের  জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেইসঙ্গে এটি সতীপীঠও বটে। কিন্তু এই কলকাতা শহরের বুকেও রয়েছে  'ঢাকেশ্বরী মায়ের মন্দির'। আর সেই দেবী স্বয়ং এসেছিলেন ঢাকা থেকে। চলুন ফিরে দেখা যাক সেই ইতিহাস।

আরও পড়ুন: ভাইফোঁটা-কালীপুজোর আগেই বাংলাদেশ থেকে আসছে ইলিশ

জড়িয়ে রয়েছে দেশভাগের গল্প
দেশভাগের সময়ে লক্ষ লক্ষ ভিটেমাটি হারা মানুষের মতো উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকার দেবী ঢাকেশ্বরীর মূর্তিও চলে আসে কলকাতায়। গোপনে এক বিশেষ বিমানে ঢাকেশ্বরী দেবীর আসল মূর্তি নিয়ে আসা হয়েছিল। এখানেই তৈরি হয় নতুন মন্দির। আজ কলকাতা শহরের  কুমারটুলিতে তা  ‘ঢাকেশ্বরী মায়ের মন্দির’ হিসেবে পরিচিত। আর এভাবেই  ঢাকার ঢাকেশ্বরী হয়ে উঠলেন কুমোরটুলির ‘ঢাকেশ্বরী মাতা’। 

 

কুমোরটুলির ‘ঢাকেশ্বরী মাতা’

 

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কাহিনি প্রচলিত আছে। কবে দেবীমূর্তির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর মতভেদ। তবে একটি নাম সেইসব কাহিনির মধ্যে দিয়ে বারবার উঠে আসে। তিনি সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন। ঢাকায় স্থানীয় যে গল্পটি প্রচলিত রয়েছে, তার সঙ্গেই জুড়ে আছেন তিনি। রাজা বিজয় সেন তখন বাংলার মসনদে। একদিন রাজার স্ত্রী লাঙ্গলবন্দে যাচ্ছিলেন স্নান করতে। হঠাৎই ওঠে প্রসববেদনা। পথের মধ্যেই, এক জঙ্গলে  পুত্রসন্তানের জন্ম দেন  তিনি। পরবর্তীকালে সেই সন্তানই হয়ে ওঠেন বল্লাল সেন। কথিত আছে, রাজা হওয়ার পর সেই জঙ্গল থেকেই ঢাকেশ্বরী দেবীমূর্তি উদ্ধার করেন তিনি  এবং নিজের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁকে। ইতিহাস দেখলে সহজেই অনুমেয়, এই ঘটনা ৮০০ বছরেরও বেশি আগের। তখন থেকে ঢাকার বিখ্যাত ঢাকেশ্বরী মন্দিরই হয়ে উঠেছিল দেবীর আরাধ্য জায়গা। 

Advertisement
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির


 

বিমানে কলকাতায় আসেন ঢাকেশ্বরী
 ১৯৪৭-এর অগাস্ট মাসে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। আর স্বাধীনতা প্রাপ্তির সঙ্গেই দুই ভাগ হওয়া প্রদেশ পঞ্জাব ও  বাংলার দুই প্রান্তই ভরে উঠতে লাগল উদ্বাস্তুদের ভিড়ে। রাতারাতি ভিটেমাটি উজাড় হয়ে গেছে, কেউ আবার পরিবারকেই খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ল ঢাকেশ্বরী মন্দিরও। যতই ঢাকার ঐতিহ্য হোক না কেন, এমন উত্তপ্ত সময় যদি বিগ্রহকে রক্ষা করা না যায়! তৎপর হয়ে উঠলেন সেখানকার সেবাইতরা। ঠিক হল, ঢাকেশ্বরী মাতার জন্যই একটি বিশেষ বিমানের আয়োজন করা হবে। গন্তব্য কলকাতা। অত্যন্ত গোপনেই শুরু হল আয়োজন। ১৯৪৮ সাল,  তখনও শান্ত হয়নি চারপাশ। তার মধ্যেই বিমানে করে ঢাকেশ্বরী মাতার বিগ্রহটিকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়।

 

ঢাকার মন্দিরের ঢাকেশ্বরী মূর্তি

 

কলকাতায় মন্দির নির্মান
লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে দেবী ঢাকেশ্বরীও  উদ্বাস্তু হয়েছিলেন। এত বছরের পীঠস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছিল। এবার কোথায় জায়গা পাবেন? মূর্তিকে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন রাজেন্দ্র কিশোর তিওয়ারি এবং হরিহর চক্রবর্তী। কলকাতার ব্যবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরীর বাড়িতে প্রথমে  স্থান পান দেবী। ১৯৫০ সালে ব্যবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরী কুমারটুলি অঞ্চলে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। দেবীকে যেভাবে অলংকারহীন এবং প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় আনা হয়েছিল তার ছবিও এই মন্দিরে রয়েছে।

 

আরও পড়ুন: একান্ন সতীপীঠের অন্যতম বাংলাদেশের এই কালী মন্দির

কলকাতা থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে ঢাকার বুকে এখনও দাঁড়িয়ে আছে  আদি মন্দিরটি। সেখানে ঢাকেশ্বরী মাতার মতো একই রকমের অন্য একটি বিগ্রহ রেখে পুজো করা হচ্ছে।  আর ৮০০ বছরের প্রাচীন সেই মূর্তি রয়েছে  কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলের দুর্গাচরণ স্ট্রিটে। মন্দিরের মূর্তিটি উচ্চতায় দেড় ফুট এবং দেবী দশভূজা। দেবীর সামনের হাত দুটি বড় পেছনে হাত তুলনায় ছোট। কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী দূর্গা রূপে অবস্থান করছেন। ওপরে পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী। নীচের দুপাশে কার্তিক, গণেশ। বাহন রূপে পশুরাজ সিংহ দণ্ডায়মান। দেবী মহিষাসুরকে বধ করছেন। শোভাবাজার ছাড়িয়ে কুমোরটুলির এক অপরিসর গলিতে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে নীরবে নিভৃতে বিরাজমান এই মন্দিরখানি। কলকাতার   ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিচার করে মন্দির সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। নয়ত অচিরেই দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ইতিহাস শুধুমাত্র আমাদের নির্লিপ্ততায় হারিয়ে যেতে পারে। 

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement