ছোট খোকা বলে অ আ, শেখেনি সে কথা কওয়া বা হ্রস্ব ই দীর্ঘ ঈ, বসে খায় ক্ষীর খই। শৈশবের এই শিক্ষা নিশ্চয় সবারই মনে আছে। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর রচনা সহজ পাঠের (Sahaj Path) অংশ ছিল এই লাইনগুলি। আর এই লাইনগুলি মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বেশকিছু ছবিও, যেগুলি ফুটে উঠেছিল প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর তুলির টানে। আজ সেই নন্দলাল বসুরই (Nandalal Bose) জন্মদিন।
১৮৮৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিহারের মুঙ্গেরে জন্ম নন্দলাল বসুর। ছোটবেলায় পড়াশোনার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ না থাকলেও চিত্রকলার প্রতি ছিল তাঁর গভীর উৎসাহ। এমনকি পড়াশোনার অমনোযোগিতার কারণে পরপর দুবার এফএ পরীক্ষায় অকৃতকার্যও হন তিনি। তবে সেই অল্প বয়সেই দেবদেবীর মূর্তি বা পুতুল গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন নন্দলাল। পরবর্তী সময় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Abanindranath Tagore) সহযোগিতায় কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। আর সেখান থেকেই জীবনের মোড় পুরোপুরি ঘুরে যায় তাঁর।
শিল্পীর বিখ্যাত কিছু সৃষ্টি
কলকাতা আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীনই কর্ণের সূর্যস্তব, গরুড়স্তম্ভতলে শ্রীচৈতন্য, শিবমতি, নৌবিহারের মতো ছবি এঁকে শিল্পপ্রেমীদের প্রশংসা অর্জন করেন নন্দলাল বসু। পরবর্তী সময়ে ভগিনী নিবেদিতার হিন্দু-বৌদ্ধ পুরাকাহিনি বইটির অঙ্গসজ্জা, হরিপুরা পট ও বাঘ গুহার নষ্ট হয়ে যাওয়া চিত্রগুলির পুনরুদ্ধারের মতো কাজ করেন তিনি। বরোদার মহারাজের কীর্তিমন্দির অলঙ্কৃত করা দায়িত্বও পান নন্দলাল। তবে শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের দেওয়াল চিত্র নন্দলাল বসুকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। একটা সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) প্রতিষ্ঠিত বিচিত্রা সংঘের শিল্পকলার শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ভারতের সংবিধানের সচিত্র সংস্করণও তিনিই অলঙ্কৃত করেন। শিল্পীর আরও বেশকিছু বিখ্যাত সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম হল অন্নপূর্ণা, সতী, দার্জিলিং-এর মতো ছবিগুলি।
ঝুলিতে বহু সম্মান
দীর্ঘ শিল্পচর্চা নন্দলাল বসুকে এনে দিয়েছে বহু সম্মান। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে পদ্ম পুরস্কার ও দেশিকোত্তমের মতো উপাধি। এছাড়া ললিত কলা একাডেমির দ্বিতীয় ফেলও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ১৬ এপ্রিল শান্তিনিকেতনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নন্দলাল বসু। তবে এককথায় বলতে গেলে তাঁর তুলির টান অনুসরণ করেই এগিয়ে চলেছে শিল্পীদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
আরও পড়ুন - উপহাস করেছিলেন আত্মীয়-বন্ধুরা, ৩০ কেজি ওজন কমালেন গৃহবধূ, কীভাবে?