Offbeat Weekend Destination, Banabithi Eco Resort: বছরের এই সময়টায় প্রায় সবারই মন ‘উড়ু উড়ু’ করে। সপ্তাহান্তে একদিন বা বড়জোড় দু’দিন— সুযোগ পেলেই ইচ্ছে করে কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসতে, কিছুটা নিখাদ অবসর কাটিয়ে আসতে।
তাড়াহুড়োয় ব্যাগ গুছিয়ে এক বেলা বা এক রাত্রি কোথাও মন ভরে ছুটি কাটাতে চাইলে কলকাতার আশেপাশেই এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে সারা সপ্তাহের ব্যাস্ততা ভুলে অনায়াসে ঘুরে আসা যায়। আজ তেমনই একটা ছুটির ঠিকানার হদিস রইল এই প্রতিবেদনে। কলকাতার অদূরেই এক টুকরো ‘রঙিন অবসর’-এর মন মাতানো ঠিকানা বনবীথি ইকো রিসোর্ট।
আরও পড়ুন: কলকাতার কাছেই ছবির মতো সাজানো ‘উইকএন্ড ডেস্টিনেশন’ মনচাষা
বনবীথি ইকো রিসর্টের অবস্থান:
নামের মতোই চমৎকার সুন্দর এই ‘উইকএন্ড ডেস্টিনেশন’টি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর থানার এলাকার চাম্পাহাটির ঘটক পুকুর রোডে অবস্থিত। সবুজে ঘেরা এই ছুটির ঠিকানাটি নানা রকম বাহারী ফুল গাছ, পাতাবাহার গাছের বাগান আর বড় গাছের নীচে বসার বাঁধানো জায়গায় যেন এক শান্ত-মনমুগ্ধকর আশ্রমিক প্রশান্তিতে মন ভরে দেবে, জুড়াবে চোখের তৃষ্ণাও। বড়-বুড়োদের জন্য রয়েছে খড়ের ছাউনি দেওয়া চা খাওয়ার ও বিশ্রামের জায়গা। আর বাচ্চাদের খেলার জন্য রয়েছে তিন তিনটে মাঠ, দোলনা ও আরও অনেক কিছু।
এখানে ঢুকলেই চোখে পড়বে চারটে মাড হাউস, যেগুলির প্রত্যেকটির সামনে রয়েছে একটি করে ছোট্ট ফুলের বাগান। এর সামনেই একটা রেস্ট রুম রয়েছে, তার ডান পাশেই আছে ট্রি হাউজ। এই ট্রি হাউজ সাধারনত ব্যবহার হয় এখানে আসা অতিথিদের কমনরুম হিসেবে। এখানে বই পরে সময় কাটানোর জন্য একটি ছোট লাইব্রেরিও আছে। আর সকলের খেলার জন্য আছে একটা ক্যারম বোর্ড। এই ট্রি হাউজের নীচে একটা নার্সারী আছে, সেখান থেকে চাইলে নিজের পছন্দ মতো গাছ কিনেও নিয়ে যেতে পারেন। এই নার্সারীর পাশেই রয়েছে নানা রকম পাখিতে ভরা দুটি খাঁচা। পাখির কিচিরমিচিরে মন এমনিতেই সব ব্যাস্ততা ভুলে যাবে। এছাড়াও এখানে রয়েছে বোটিংয়ের ব্যবস্থা, রয়েছে সুইমিং পুলও।
পেটপুজোর পঞ্চব্যাঞ্জন:
লাঞ্চে বাসমতি চালের ভাত, শুক্তো, ঝুরঝুরে আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, মটরশুঁটি দেওয়া মুগের ডাল, ফুল কপির ডালনা, কাতলা মাছের কালিয়া, গরম গরম খাসির মাংস, চাটনি, পাপড় ভাজা, রসগোল্লা। যারা রাতে থাকবেন, তাদের জন্য ডিনারেও মিলবে নানা মুখরোচক পঞ্চব্যাঞ্জন। রিসর্টের একপাশে বনভোজন দোতলা ইটের বাড়ি। এখানে বিশেষ দিন লাঞ্চ ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়। মোটামুটি সাজানো সুন্দর জায়গা। এর কিছুটা দূরেই একটা পুকুর আছে, যার মাঝখানে যাওয়ার জন্য বাঁশের মাচা করা আছে, তার মাঝে একটা ছাউনি করে দেওয়া আছে আড্ডা-বিশ্রামের জন্য।
চেক-ইন ও চেক-আউট টাইম:
এখানে যারা অন্তত একরাত কাটাবেন বলে ভাবছেন, তাদের বনবীথি ইকো রিসর্টের চেক-ইন ও চেক-আউট টাইম জেনে নেওয়া দরকার। এখানে সকাল সাড়ে ১১টায় চেক-ইন আর পরের দিন সকাল ১০টায় চেক-আউট করতে হবে অতিথিদের।
ঘর-টেন্ট ভাড়া:
বনবীথি রিসর্টে দুটো টেন্থ হাউজ বা তাবু রয়েছে। তবে এই দুটো টেন্ট হাউসের জন্য একটা কমন বাথরুম রয়েছে টেন্টের বাইরে। টেন্টের দুটি বেডের ভাড়া ২০০০ টাকা, দুজনের বেশি অতিরিক্ত ব্যক্তির ভাড়া মাথাপিছু ৬০০ টাকা। এখানের ট্রি হাউজ আর অন্যান্য ঘর ভাড়া মোটামুটি ৩০০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঘরগুলিতে অন্তত ৫-৬ জন অনায়াসে থাকতে পারবেন।
খাবার খরচ:
বনবীথি রিসর্টে খাবার খরচ মূলত দুই রকমের। এখানে ঘর ভাড়া নিলে এক রকম দাম, ঘর ভাড়া না নিলে খাবার দাম আরও কিছুটা বেশি। যেমন, এখানে ঘর ভাড়া নিলে ভেজ থালির দাম পড়বে ৪২৫ টাকা আর ঘর ভাড়া না নিলে এর দাম ৫২৫ টাকা। একই ভাবে, মাছের থালি ৫৪০ টাকা থেকে ৬৬৫ টাকা, চিকেন থালির দাম ৫৯০ টাকা থেকে ৭১৫ টাকা আর মাটন থালি ৬৯০ টাকা থেকে ৮১৫ টাকা।
কীভাবে যাবেন বনবিথি রিসোর্ট:
কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসে সায়েন্স সিটি পর্যন্ত চলে আসুন। সায়েন্সসিটি থেকে বাস বদলে ঘটকপুকুরগামী যে কোনও বাসে উঠে ঘটকপুকুর বাজারে নামতে হবে। সময় লাগবে মোটামুটি দেড় ঘন্টা। বাস ভাড়া লাগবে ২০ টাকার মধ্যে। ঘটকপুকুর বাজার থেকে টোটো বা ভ্যান নিয়ে মাত্র ১০-১৫ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন বনবিথি ইকো রিসর্টে।