বাঙালির কৈশোরের উচ্ছ্বাস, যৌবনের প্রেম, বার্ধক্যের শান্তি লুকিয়ে রয়েছে তাঁর সৃষ্টিতে। তিনি চিরনতুন, চিরসবুজ, সর্বকালের আধুনিক। তিনি বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)। আজ তাঁর জন্মদিন (Rabindranath Tagore Birthday 25 Se Baisakh)। তবে শুধু এই বিশেষ দিনেই নয়, বছরের ৩৬৫ দিনই বাঙালির মনের আকাশজুড়ে তাঁর বিরাজ। তাঁর কাজ ও সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, একটা গোটা জীবনও যেন কম বলে মনে হয়।
সঙ্গীতের হাতেখড়ি
ঠাকুর পরিবারে সংস্কৃতিমুখর পরিবেশে ছোট থেকেই গানবাজনার মধ্যে বেড়ে উঠতে থাকেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতের হাতেখড়িও হয় বিষ্ণু চক্রবর্তীর কাছে। যদিও বিষ্ণু চক্রবর্তীর কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের নিয়মমাফিক তালিম নেননি তিনি। বিষ্ণু চক্রবর্তীর শিক্ষা পদ্ধতি ছিল অভিনব, যা শিক্ষার্থীদের মনে সঙ্গীতের প্রতি আলাদা অনুরাগ তৈরি করতো।
গান রচনার জন্য বাবার কাছে পুরস্কৃত
কবির বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোট থেকেই তাঁকে সঙ্গীত শিক্ষা ও গান রচনার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতেন। দেবেন্দ্রনাথ বলতেন, 'রবি আমাদের বাংলাদেশের বুলবুল'। একবার মাঘোৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ কতগুলি গান রচনা করেছিলেন। খবর পেয়ে ছেলেকে ডেকে সবক'টি গান শুনলেন দেবেন্দ্রনাথ। তারমধ্যে 'রয়েছ নয়নে নয়নে' গানটি শুনে ছেলের হাতে ৫০০ টাকার চেক পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন তিনি।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বসে গান লেখা
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতচর্চায় যে মানুষটির অন্যতম ভূমিকা ছিল, তিনি হলেন তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নিজেও সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। একটা সময় ছিল, যখন নিয়মিতভাবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পিয়ানোতে নানাবিধ সুর বাজাতেন এবং অক্ষয়চন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ তাঁর পাশে কাগজ-পেন্সিল নিয়ে বসে, সেই সুরে কথা সাজিয়ে গান রচনা করতেন। এইভাবেই তৈরি হয়েছিল 'আমি চিনিগো চিনি তোমারে', 'পুরানো সেই দিনের কথা', 'ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে'র মতো গানগুলি।
অভিনেতা রবীন্দ্রনাথ
শুধুমাত্র গান গাওয়া, গান রচনা বা কবিতা লেখার মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি রবীন্দ্রনাথ। একটা সময় নাটকে গায়ক-অভিনেতারূপেও অবতীর্ণ হন তিনি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'এমন কর্ম আর করব না' প্রহসনটিতে 'অলীকবাবু'র ভূমিকায় প্রথম মঞ্চাবতরণ ও মঞ্চে গান পরিবেশন রবীন্দ্রনাথের। তারপর 'কালমৃগয়া', 'বাল্মিকী প্রতিভা', 'প্রায়শ্চিত্ত', 'নটীর পূজা'-সহ বিভিন্ন নাটকে গায়ক ও অভিনেতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে।
বিশ্বভারতীর আচার্য রবীন্দ্রনাথ
কবিগুরুর আলোচনায় শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর প্রসঙ্গ আসা খুবই স্বাভাবিক। ১৯১৮-র ডিসেম্বর মাসে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার জন্য মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ১৯১৯-এর জুলাই মাসে প্রাচ্য বিদ্যানুশীলনের ব্যবস্থা করা হয় বিশ্বভারতীতে। ১৯২১ সালের (বাংলার ১৩২৮-এর ৮ই পৌষ) ডিসেম্বর মাসে বিশ্বভারতীকে সর্বসাধারণের জন্য উৎসর্গ করেন রবীন্দ্রনাথ। জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ নিজেই ছিলেন বিশ্বভারতীর আচার্য। তাঁর প্রয়াণের পর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সরোজিনী নাইডুর মতো ব্যক্তিত্বরাও বিশ্বভারতীর আচার্যের পদ সামলেছেন।
আরও পড়ুন - পেয়ারা পাতার চা ওজন কমায়? জানুন আসল তথ্য