Advertisement

দেদার ভাঙে গাছের ডাল, বসন্ত উৎসব কি পলাশ ধ্বংসের উৎসবে পরিণত হচ্ছে?

বসন্ত উৎসবের (Basanta Utsav) রীতি মেনে অনুষ্ঠান করার সময় ছাত্রীরা পলাশ (Palash) শোভিত হতেন। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) সময় থেকে এই প্রথা সুবিদিত। তবে প্রথা যে প্রকৃতির কাছে অত্যাচার হয়ে দাঁড়াবে তিনি বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। প্রকৃতির কোলে শিক্ষা এবং শান্তির নীড়ে এমন অশান্তি খোদ প্রকৃতির উপর, তা সত্যিই কষ্টদায়ক।

বসন্ত উৎসব কি পলাশ ধ্বংসের উৎসবে পরিণত হচ্ছে? (ছবি: রজত কর্মকার)
রজত কর্মকার / সৌমিতা চৌধুরী
  • কলকাতা,
  • 10 Mar 2021,
  • अपडेटेड 3:45 PM IST
  • বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বসন্ত উৎসবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ট্যুরিস্টরা ভীড় জমান।
  • শান্তিনিকেতনে গেলেই চোখে পড়বে রাস্তার পাশে পলাশ ফুল নিয়ে বিক্রি করছেন অনেকে।
  • পলাশ ধ্বংসের এই ঘটনাকে আটকাতে অনেকবার অনেক রকম চেষ্টা হয়েছে অতীতে।

'আজি দখিন দুয়ার খোলা... এসো হে এসো হে এসো হে... আমার বসন্ত এসো...'

দখিন দুয়াল খুলে যায় ঠিকই। কিন্তু সেই খোলা দুয়ার প্রতি বছর নিয়ম করে পলাশ (Palash) ধ্বংসের বার্তা বয়ে আনে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Viswabharati University) আয়োজিত বসন্ত উৎসব (Basanta Utsav)  দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ট্যুরিস্ট একত্রিত হন। বসন্ত উৎসবের রীতি মেনে অনুষ্ঠান করার সময় ছাত্রীরা পলাশ শোভিত হতেন। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) সময় থেকে এই প্রথা সুবিদিত। তবে প্রথা যে প্রকৃতির কাছে অত্যাচার হয়ে দাঁড়াবে তিনি বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। প্রকৃতির কোলে শিক্ষা এবং শান্তির নীড়ে এমন অশান্তি খোদ প্রকৃতির উপর, তা সত্যিই কষ্টদায়ক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা এ বিষয়ে বার বার আওয়াজ তুলেছেন। তাতে সামিল হয়েছেন স্থানীয় মানুষজনও। কিন্তু ট্যুরিস্টদের অত্যাচার থেকে রেহাই মেলেনি পলাশের। বসন্ত উৎসবের ক' দিন আগে থেকে শান্তিনিকেতনে (Santiniketan) গেলেই চোখে পড়বে রাস্তার পাশে পলাশ ফুল নিয়ে বিক্রি করছেন অনেকে। কোথাও পলাশ গাছের ডাল স্তূপাকৃতি হয়ে রয়েছে। প্রায় নিয়ম করে প্রতি বছর এ দৃশ্য এখন পরিচিত।

প্রাক্তন এক ছাত্রীর কথায়, 'বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গনে বসন্ত উৎসবে সামিল হয়ে অনেকেই বার্তা দেন, তাঁরা যথেষ্ট সংস্কৃতি মনস্ক। দেদার ছবিও আপলোড করেন সোশ্যাল মাধ্যমে। কিন্তু যাঁরা এই জিনিসটি করেন করেন তাঁরা কতটা সংস্কৃতি মনস্ক তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সংস্কৃতি কখনই প্রকৃতিকে ধ্বংস করার কথা বলে না। তাঁরা গুরুদেবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে তাঁকে এবং সর্বোপরি তাঁর আদর্শকে বারবার কালিমালিপ্ত করে যান। কী লাভ হয় তাতে জানি না!'

আরও পড়ুন: ১০০ বছর আগে আজ ৫ জন পড়ুয়া নিয়ে বিশ্বভারতী চালু করেছিলেন রবি ঠাকুর 

Advertisement

পলাশ ধ্বংসের এই ঘটনাকে আটকাতে অনেকবার অনেক রকম চেষ্টা হয়েছে অতীতে। ২০১৩ সালে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা রুখতে পরিদর্শক দলও গঠন করে। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন ২০১৭ সালে বসন্ত উৎসবে বিভিন্ন প্রবেশ পথ দিয়ে যাঁরা এসেছিলেন, পলাশ মাথায় থাকলেই তাঁদের সেটি খুলে বাইরে রেখে তার পর ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে ২০১৮ সালে পলাশের ব্যবহার অনেক কম চোখে পড়েছিল। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানুষ পলাশ ছাড়াই বসন্ত উৎসবে মেতেছিলেন। ২০১৯ সালেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। তবে আদপে কি সে প্রবণতা কমেছে?

খোয়াইয়ের হাটে একবার চোখে রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। সেখানে পলাশ ফুলের পসরা দেখার মতো। কেউ হাতে পলাশ ফুলের মালা গেঁথে ফেরিও করেন। পর্যটকরা তা দেদার কেনেন। জিজ্ঞাসা করলেই জবাব আসে, 'হাটে বিক্রি হচ্ছিল কিনেছি।' এ প্রবণতা বাড়ার আরও একটি কারণ রয়েছে, এমনটাই মত হাটের পুরনো দোকানিদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, বহু পর্যটক দোকানি এবং আশপাশের ছেলে ছোকড়াদের আগাম টাকা দিয়ে বায়না করে যান, যাতে ঠিক সময়মতো হোটেলে পোঁছে যায় পলাশের ডালি। এটা বাড়তে বাড়তে এখন পলাশ ধ্বংসের উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বা  প্রশাসনের পক্ষে চারদিকে নজর রাখা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে একমাত্র সাধারণ মানুষের শুভবুদ্ধির উপর ভরসা রাখা ছাড়া কোনও গতি নেই।

আরও পড়ুন: রবি ঠাকুরের সুরেই রচিত হয়েছিল আজ়াদ হিন্দ সরকারের জাতীয় সঙ্গীত

বাঙালির সংস্কৃতি এবং গুরুদেবের সময় থেকে চলে আসা প্রথাকে সম্মান দেখানো খুবই ভালো। তবে কখনই প্রকৃতি ধ্বংস করে নয়। অন্তত এটুকু বুঝলে বসন্তের ঘোষণা খোদ প্রকৃতিই করতে পারবে, পলাশ-কৃষ্ণচূড়া-শিমুলের রঙিণ আহ্বানে।

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement