৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) জিততে পারে আর্জেন্টিনা (Argentina)। ২০১৪ সালেও সুযোগ এসে গিয়েছিল লিওনেল মেসির (Lionel Messi) সামনে, তবে জার্মানির কাছে হেরে যেতে হয়। লিওনেল মেসিকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্টিনা। বিশ্ব ফুটবলের আইকন প্রচুর ট্রফি জিতে ফেলেছেন, তবে বিশ্বকাপ জয় অধরাই থেকে গিয়েছে। নিজের শেষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন মেসি?
ফুটবল বিশ্বকাপের সব খবরের জন্য় এখানে ক্লিক করুন
আর্জেন্টিনার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই দেশটি সবসময়ই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে। ১৯৮৩ সালে আর্জেন্টিনায় যথাযথ গণতন্ত্র এসেছিল, এর আগে প্রায় ৬ বার সরকার গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে। ১৯৮৩ সালে আর্জেন্টিনায় গণতন্ত্র আসে, যা অক্ষত ছিল।
আরও পড়ুন: ৩০০ কোটির ফেরারি, ৩২ কোটির পাগানি জোন্ডা রোডস্টার, ছবিতে মেসির গাড়ির বহর
ছোট থেকেই শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়েছে
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন রোজারিওতে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি মানে লিওনেল মেসি (Lioniel Messi)। যাকে বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার বলে ডাকে বিশ্ব। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেসি কীভাবে ফুটবল বিশ্বে নিজের ছাপ ফেলেছেন তার একটা চমকপ্রদ গল্প রয়েছে।
লিওনেল মেসির বাবা একটি কারখানায় কাজ করতেন। আর তাঁর মা ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। তবে বাবা একটি ক্লাবে কোচিং করায় বাড়িতে ফুটবলের পরিবেশ ছিল। লিওনেল মেসি নিজেই মাএ ৫ বছর বয়সে একটি ক্লাবে যোগ দেন। যেখানে তিনি ফুটবলের প্রাথমিক পাঠ নেন। ৮ বছর বয়সে, মেসি তাঁর ক্লাব পরিবর্তন করেন এবং নেয়েল ওল্ড বয়েজ ক্লাবে যোগ দেন। কিন্তু কিছুদিন পর এমন ঘটনা ঘটে, যা দেখে সকলেই অবাক।
লিওনেল মেসি ১১ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি নামক রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগটি যদি মেসিকে কাবু করে ফেলত, তাহলে হয়তো বিশ্ব একজন মহান ফুটবলারের দেখা পেত না। এই রোগে যে কোনো মানুষের অগ্রগতি থেমে যায়। তখন পরিবারের কাছে টাকাও খুব বেশি ছিল না। ফলে মেসির চিকিৎসা করানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের। সেই সময় রিভার প্লেট থেকে মেসিকে খেলার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারাও এই চিকিৎসার খরচ চালাতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এই সময়ই মেসির ভাগ্য বদলে যায়। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা তখন নজর রাখছিল ছোট বাচ্চাদের উপর, গোটা বিশ্বে যারা দারুণ ফুটবল খেলছে তাদের দিকে নজর রাখছিল তারা। ট্যালেন্ট হান্টের জন্য ছোট শহর, স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন ক্লাবে নতুন প্রতিভার সন্ধান করতে থাকেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনার ফাইনাল মিলিয়েছেন, জিতবে কে? ভবিষ্যদ্বাণী আধুনিক নস্ট্রাদামুসের
বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর কার্লেস রেজ্যাক, লিওনেল মেসির বিষয়ে জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাব তাঁকে সই করায়। সেই সঙ্গে রোগের ওষুধ ও চিকিৎসার পুরো খরচ দেওয়ার কথা বলা হয়। শর্ত একটাই ছিল যে মেসিকে আর্জেন্টিনা ছেড়ে বার্সেলোনায় যেতে হবে। এই শর্ত স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নেন মেসির পরিবারের সদস্যরা। এর পরেই লিওনেল মেসির পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়।
২০০১-২০০২ সালে বার্সেলোনা-বি দলে নির্বাচিত হন মেসি। সেই সময়ে তিনি প্রায় প্রতিটি ম্যাচে অন্তত একটি গোল করেছিলেন। এমন একটি মরশুমে ৩০টি ম্যাচে মোট ৩৫টি গোল করেন। ১৪ বছর বয়সে, লিওনেল মেসি, বার্সেলোনা বি দলে যোগ দেন এবং এগিয়ে যেতে থাকেন। মেসি ছোট ছোট লিগে নিজের নাম তৈরি করছিলেন এবং ভালো হয়ে উঠছিলেন।
১৭ বছর বয়সে, লিওনেল মেসির, বার্সেলোনা ক্লাবের হয়ে অভিষেক হয়। তিনি বার্সেলোনার হয়ে ফুটবল খেলা তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হন। লিওনেল মেসি ১ মে ২০০৫-এ সিনিয়র দলের হয়ে তার প্রথম গোল করেন। লিওনেল মেসি ২৪ জুন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসাবে বার্সেলোনার সঙ্গে তাঁর চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং তার পরে যা ঘটে তা ইতিহাস।
মেসি থাকলে বিশ্বকাপ জয় সম্ভব
রোববার ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলে পেলে, দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় মেসির নামও উঠে যাবে। ম্যারাডোনা ও মেসির মধ্যে কে সেরা তা নিয়েও বিতর্কের অবসান ঘটবে। দেশের হয়ে শিরোপা না জেতার প্রতিটি ক্ষতও মেসির হয়ে যাবে।
সাতবার ব্যালন ডি'অর, ছয়বার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন জুতার রেকর্ড, বার্সেলোনার হয়ে রেকর্ড ৩৫টি শিরোপা, লা লিগায় ৪৭৪ গোল, এক ক্লাবের (বার্সেলোনা) হয়ে ৬৭২ গোল, বিশ্বকাপ না জেতার জন্য মেসি বরাবরই ব্যথিত। তিনি জানেন যে এটি তার শেষ সুযোগ এবং এটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি কোনও কসরত ছাড়তে চান না।