প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিলেন আরেক স্প্যানিশ কোচ সের্জিও লোবেরা (Sergio Lobera)। কিন্তু বহু টানাপোড়েনের পরেও তাঁকে সই করাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু কর্তারা বসে না থেকে, তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত বদলে পুরোপুরি ঝাঁপান কার্লোস কুয়াদ্রাতের (carles cuadrat) জন্য। শেষপর্যন্ত দুই বছরের চুক্তিতে লাল হলুদ শিবির পেল নতুন কোচ। ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী সংস্থা ইমামির (Emami) তরফ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
বার্সেলোনায় কেরিয়ার শুরু
এই খবর শোনার পর হাসি ফুটল সমর্থকদের মুখেও। আর এই স্প্যানিশ কোচের পরিসংখ্যানও নেহাত খারাপ নয়। কার্লোস কুয়াদ্রাত তাঁর ফুটবল জীবন শুরু করেন বার্সেলোনার (Barcelona) লা-মাসিয়া (La Masia) অ্যাকাদেমি থেকে। মাত্র ১০ বছর বয়সে, ১৯৭৮ সালে তিনি যোগ দেন লা-মাসিয়াতে। বার্সেলোনা যুব দলের হয়ে লেফট ব্যাক পজিশনে চুটিয়ে ফুটবল খেলেন। শুধু তাই নয়, অনূর্ধ্ব-১৯ বার্সেলোনা দলের হয়ে স্প্যানিশ কাপ (Spanish Cup) জেতেন ১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালে। এমনকী বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে, সিনিয়র দলের জার্সি গায়েও কয়েকটি ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি। এছাড়াও ১৪ বার, অনূর্ধ্ব-১৫ এবং অনূর্ধ্ব-১৮ স্পেন জাতীয় দলের (Spain National Team) জার্সি গায়েও খেলেছেন কার্লোস কুয়াদ্রাত। সেইসঙ্গে, ১৯৮৫ সালে তিনি উয়েফা ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ (UEFA European U-16 Championship) দলের সদস্যও ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলের কোচ সেই কুয়াদ্রাত, 'বাংলা.আজতক.ইন' প্রথম জানিয়েছিল
কুয়াদ্রাতের কোচিংয়েই ফেড কাপ জিতেছিল বেঙ্গালুরু
বার্সেলোনা ছাড়াও তিনি খেলেছেন, দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব এফসি গাভা (FC Gava) এবং সিই সাবাদেলের (CE Sabadell) হয়েও। কিন্তু ১৯৯৮ সালে, মাত্র ৩০ বছর বয়সে চোটের কবলে পড়েন তিনি। ফলে, ফুটবলার হিসেবে আর বেশিদূর এগোতে পারেননি। পরবর্তীতে কুয়াদ্রাত বার্সেলোনা ইউথ অ্যাকাদেমির (Barcelona Youth Academy) দায়িত্বে আসেন। এছাড়াও, এফসি গাভা যুব দলের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। অন্যদিকে ২০০৯ সালে, তুরস্কের দল গ্যালাটাস্যারের (Galatasaray FC) টেকনিক্যাল স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি পাড়ি দেন ভারতে এবং দায়িত্ব নেন বেঙ্গালুরু এফসি (Bengaluru FC) ফুটবল দলের। কুয়াদ্রাত সেইসময় অ্যালবার্ট রোকার (Albert Roca) সহকারী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। তাঁরই কোচিং-এ ২০১৭ সালে ফেডারেশন কাপ জেতে বেঙ্গালুরু।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলে দুই তারকা ফুটবলার আসছে, খুব খুশি কুয়াদ্রাত
ISL ট্রফি জিতেছিলেন সুনীলরা
কার্লোস কুয়াদ্রাতের তক্তাবধানে ২০১৮-১৯ মরশুমে আইএসএল (ISL) ট্রফি জেতেন সুনীলরা। সর্বোপরি এই টুর্নামেন্টে, ৬টি জয় সহ টানা ১১টি ম্যাচ অপরাজিত ছিল বেঙ্গালুরু এফসি। তাঁর কোচিং-এ এএফসি কাপ কোয়ালিফায়ারের (AFC Cup Qualifier) ম্যাচে, ৯-১ ব্যবধানে বেঙ্গালুরু এফসি হারায় পারো এফসি-কে (Paro FC)। কিন্তু বেঙ্গালুরু এফসি ছাড়ার পর, ২০২০-২১ মরশুমে কুয়াদ্রাত যোগ দেন সাইপ্রাসের (Cyprus) ক্লাব অ্যারিস লিমাসলে (Aris Limassol)। প্রথম ডিভিশন (First Division) এবং প্লে-অফে (Play-Off) এই দলটির ওঠার ক্ষেত্রে, সহকারী কোচ (Assistant Coach) হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। এছাড়াও, দানিশ সুপারলিগাতে (Danish Superliga) ডেনমার্কের (Denmark) ক্লাব এফসি মিডটিজিল্যান্ডের (FC Midtjylland) দায়িত্বেও ছিলেন কার্লোস কুয়াদ্রাত। সেই অধ্যায় শেষ করে, আবারও ভারতে ফিরলেন এই স্প্যানিশ কোচ (Spanish Coach)। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, ক্যারিয়ার গ্রাফ এককথায় দুর্দান্ত এই ৫৪ বছর বয়সী প্রশিক্ষকের।
আর কোচ হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর কুয়াদ্রাত জানিয়েছেন, ‘আমি খুব গর্বিত। ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে আমাকে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ফুটবলে এই ক্লাবের অনেক ইতিহাস রয়েছে এবং তাঁরা অনেক ট্রফি জিতেছে। ভারতীয় ফুটবল আমাকে সুযোগ দিয়েছে, এই ক্লাবকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই আমি ভীষণ উত্তেজিত।‘
কুয়াদ্রাত আরও যোগ করেছেন, ‘আমি ভারতে ফিরে আসতে পেরে আনন্দিত। এমন একটি দেশ যাকে আমি খুব ভালোবাসি এবং এখানে আমার অনেক খুশির মুহূর্ত রয়েছে। আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব এবং আরও অনেক নতুন আনন্দের মুহূর্ত তৈরি করব সমর্থকদের সঙ্গে।‘
সবমিলিয়ে লাল হলুদ ব্রিগেড পেয়ে গেল তাঁদের নতুন কোচ। এখন দেখার বিষয় এটিই যে, দলগঠনের দিক দিয়ে ইস্টবেঙ্গল এবার কি সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিবেদক: শুভঙ্কর দাস