চাকরিজীবীদের জন্য দারুণ সুখবর এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য কর্মচারী ভবিষ্য নিধি বা EPF-এ ৮.২৫% সুদের হার সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন দেশের ৭ কোটিরও বেশি বেতনভোগী মানুষ।
কারণ একটাই—EPF-এ পাওয়া এই সুদ অন্য যেকোনও ব্যাঙ্ক বা সঞ্চয় প্রকল্পের থেকে অনেক বেশি। তার মানে, যাঁরা নিয়মিত PF-এর মাধ্যমে সঞ্চয় করছেন, তাঁদের টাকা সুরক্ষিতও থাকছে, আর ভাল রকম লাভও হচ্ছে।
প্রতি বছর EPF-এ কত সুদ দেওয়া হবে, তা ঠিক করে EPFO-র কেন্দ্রীয় ট্রাস্টি বোর্ড (CBT)। তারপর কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অনুমোদনের পর সেই হার কার্যকর হয়। এ বছর সেই হার ৮.২৫% করার সুপারিশ আগেই করেছিল CBT, আর এখন অর্থ মন্ত্রকও তাতে সিলমোহর দিয়েছে। ফলে এই হার এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হল।
একটা বিষয় খুব স্পষ্ট, টানা দ্বিতীয় বছর EPF-এ এই ৮.২৫% সুদ মিলছে। ২০২২-২৩ সালে সুদের হার ছিল ৮.১৫%। অর্থাৎ সেখান থেকেও এবার কিছুটা বেশি। ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট বা পোস্ট অফিস স্কিমের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এত বেশি সুদ এখন আর মেলে না। তাই PF-এর মতো দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্পে এই হার নিঃসন্দেহে বড় প্রাপ্তি।
ধরুন, কারও মাসিক বেতন ৩০,০০০ টাকা। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, কর্মচারী ও মালিকপক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৫,৯৫০ টাকা PF-এ জমা পড়ে প্রতি মাসে। বছর শেষে এই টাকায় ৮.২৫% হারে সুদ জমে যায়। এটা শুধু বার্ষিক নয়, প্রতি মাসে সুদ যোগ হয়—যাকে বলে মাসিক চক্রবৃদ্ধি। ফলে ২০-২৫ বছর ধরে PF-এ সঞ্চয় করলে যে পরিমাণ টাকা জমে, সেটা অনেককে অবসর নেওয়ার সময় একটি বড় ভরসা দিতে পারে।
EPF শুধু বেশি সুদ দেয় বলেই লাভজনক নয়। এটাতে কর ছাড়ও পাওয়া যায়। PF-এ জমা টাকায় কর লাগে না। এমনকি, যেটুকু সুদ আপনি পান, তাতেও কর দিতে হয় না (কিছু নির্দিষ্ট শর্তে)। ফলে PF-এ সঞ্চয় এক ধরনের ‘EEE’ বেনিফিট দেয়—মানে, আপনি যা জমাচ্ছেন, তা করমুক্ত, যে সুদ পাচ্ছেন, তাও করমুক্ত, আর অবসর নেওয়ার সময় যখন টাকা তুলে নিচ্ছেন, তখনও কোনও কর লাগছে না।
ভারতের মতো দেশে যেখানে মূল্যবৃদ্ধির হার মাঝেমধ্যে অনেক বেড়ে যায়, সেখানে PF-এর এই সুদের হার সাধারণত তার উপরে থাকে। ফলে আপনি যা সঞ্চয় করছেন, তার ক্রয়ক্ষমতা কমে না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বাড়ে। মানে, আপনি শুধু টাকা জমাচ্ছেন না, বরং প্রকৃত লাভও করছেন।
EPFO এখন পরিষেবাও ডিজিটাল করছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত, তারা রেকর্ড ২.১৬ কোটি দাবি (claims) প্রসেস করেছে। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৯.৫ লক্ষ। অর্থাৎ এখন অনেক দ্রুত PF-এর টাকা পাওয়া যাচ্ছে, যদি কেউ তা তোলার প্রয়োজন হয়।
খুব সহজেই এখন নিজের PF ব্যালান্স জানা যায়। আপনি UMANG অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, অথবা সরাসরি EPFO-র ওয়েবসাইটে (epfindia.gov.in) গিয়ে দেখতে পারেন। এমনকি, আপনার রেজিস্টার্ড নম্বর থেকে 011-22901406-এ মিসড কল দিলেও আপনার ব্যালান্স এসএমএসে-এ চলে আসবে।
EPF-এ ৮.২৫% সুদের এই ঘোষণা সাধারণ চাকরিজীবীদের জন্য বড় স্বস্তি। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে, এমন একটি সুরক্ষিত ও লাভজনক সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখলে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে।
যাঁরা PF-এ টাকা জমাচ্ছেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে সময়ের সঙ্গে একটা শক্তিশালী আর্থিক ভিত তৈরি করছেন।
২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ইপিএফের সুদের হার ছিল চার দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। ওই আর্থিক বছরে ৮.১ শতাংশ হারে সুদ দিয়েছিল কেন্দ্র। এর আগে ১৯৭৭-’৭৮ আর্থিক বছরে সুদের হার ৮ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। তবে ২০২০-’২১ আর্থিক বছরে সেটা বেড়ে ৮.৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়।