মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) কাঠিয়াওয়াড় এলাকায় এক বিশেষ প্রজাতির আমকে আমের ‘মহারানী’ বলা যায়। আসল নাম নূরজাহান। গুজরাত সংলগ্ন মধ্যপ্রদেশের কাঠিয়াওয়াড় অঞ্চলের আলিরাজপুর জেলায় জন্মায় এই আম, যার একেকটির ওজন প্রায় আড়াই কিলো, দাম ১,০০০ টাকা!
তবে আমের ‘মহারানী’ মধ্যপ্রদেশে থাকলেও আমের রাজা থাকে এই বাংলায়। নাম, দাম, স্বাদ— সবেতেই অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে বিশ্বের যে কোনও আমকে। বনেদি গয়না বা আসবাবের মতো এই আমের নিলামও হয়। নিলামে এক একটির দর ১৫০০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়! নাম, কহিতুর। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম!
আম-বাঙালি মাত্রেই ল্যাংড়া-হিমসাগরের ‘নাড়ি-লক্ষত্রের’ খবর জানেন। কিন্তু এই নবাবি আমটি তেমন একটা প্রচার পায়নি কখনও। ইদানীং, আম-উৎসবের মধ্যে দিয়ে পরিচিতি বাড়ছে এই বিশেষ আমটির। এটি আমের দুনিয়ায় এক কথায় ‘অ্যান্টিক’!
মুর্শিদাবাদের বাগানে কহিতুর আম গাছের দেখা মিললেও এর আদি নিবাস জাপান। শোনা যায়, অষ্টাদশ শতকে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ আমলে এই গাছ বিদেশ থেকে আনিয়ে লাগানো হয়েছিল নবাবী বাগানে। মাইনে করা অভিজ্ঞ লোক থাকত এই আম গাছের দেখভালের জন্য।
বাংলার নবাবী আমলে খাস অতিথিদের আপ্যায়নে কহিতুর কেটে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হলেও এর আঁটিগুলি ফুটো করে (নষ্ট করে) ফেলে দেওয়ার নির্দেশ ছিল নবাবের। কহিতুরের আঁটি নষ্ট করে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, এই বিশেষ প্রজাতির গাছের উপর একচেটিয়া নবাবী অধিকার কায়েম রাখা। অন্য কোথাও এই গাছ যাতে কেউ লাগাতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
শোনা যায়, নবাব সিরাজউদ্দৌলা আমের পাকা ‘জহুরি’ ছিলেন! তাঁর আমলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা ধরণের আম গাছের চারা সংগ্রহ করে এনে সেগুলিকে মুর্শিদাবাদে লালন পালন করতেন, তদারকি করতেন সিরাজ।
সিরাজের পরবর্তী নবাব হুমায়ুন জাহ, যাঁর আমলে ১৮৩৭ সালে হাজারদুয়ারি তৈরি হয়েছিল, শোনা যায় তিনিও এই আম বাগানের প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন। এই কোহিতুর ছিল এই নবাব বংশের খাস সম্পদ।
মুর্শিদাবাদের চাষিরা জানান, এখন আর তেমন কোহিতুর আমের ফলন হয় না, গাছের সংখ্যা হাতে গোনা। বছর দুয়েক আগের হিসাব অনুযায়ী, লালবাগের কাছে আট-দশটা, জিয়াগঞ্জে তিন-চারটে... সব মিলিয়ে গোটা মুর্শিদাবাদে এই দুষ্প্রাপ্য আম গাছের সংখ্যা পঞ্চাশও হবে কিনা সন্দেহ!
হিরের দুনিয়ায় যেমন কোহিনুর, তেমনই আমের বাজারে ঐতিহ্য, কৌলিন্যের বিচারে সেরা কোহিতুরই। বর্তমানে কলকাতার কোনও কোনও বাজারের বড় ফল ব্যবসায়ীর ফলের ঝুড়িতে তুলোর মোড়কে অতি যত্নে বিকোয় বাংলার নবাবী আমলের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত কোহিতুর। প্রায় ৩০০ বছর পেরিয়ে নবাবী আপ্যায়ন আজও জুটে যায় কোনও কোনও ভাগ্যবানের কপালে!