সাধারণ ভাবে সমতলে বিস্তীর্ণ এলাকায় খেতে আলু চাষ দেখেই অভ্যস্ত আম জনতা। সাধারণত আলু সমতলেই হয় ভাল।
বিঘার পর বিঘা খেতে আলু উৎপাদন করা হলে তাতে বাণিজ্যিকভাবে যে আলু ব্যাপক লাভজনক হয় তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তবে বিকল্প ভাবনাও যে ভাবা যেতে পারে, তা সম্প্রতি কিছু গবেষণায় প্রমাণ করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।
শুধু খাতায় কলমে নয়, হাতে কলমেও তার পরীক্ষামূলক চাষ করে বিকল্প ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁরা।
পাহাড়ের পাথুরে জমিতে আলুর চাষ করে তাঁরা তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পাথুরে জমির অগভীর মাটিতেও যে পরিচর্যা ও পরিকল্পনা করলে ভাল আলু চাষ হতে পারে তা প্রমাণ করেছেন তাঁরা।
শুধু এক আধ রকম নয়, একাধিক প্রজাতির আলু চাষ করে তাঁরা তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সাদা, লাল, হলুদ, বেগুনি আলুর চাষে সাফল্য লাভ করেছে।
কৃষি বিজ্ঞানী মেহফুজ আহমেদ পাহাড়ের পাথুরে জমিতে আলু চাষে উৎসাহ দিয়ে সাফল্য লাভ করছেন।
দার্জিলিং, কালিম্পং, লাভা, রিশপ এলাকায় চাষ হচ্ছে আলু। বিভিন্ন প্রজাতির এই আলু মানে ও স্বাদে সাধারণ আলুর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাল ও উপকারী।
ফার্মার্স ক্লাব গড়ে মেহফুজবাবু চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন স্থানীয়দের। পাহাড়ের পাথুরে জমিতেও যে আলুর এত প্রজাতি হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।
শুধু পরীক্ষামূলক নয়, পরিকল্পনা করে চাষ করলে স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য বাণিজ্যিকভাবেও চাষ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি দার্জিলিংয়ের হাই অল্টিটিউডে অবস্থিত রিম্বিক-এ সিআইপি প্রজাতির আলুর ক্লোন তৈরি করে তাঁরা সাফল্য লাভ করেছেন।
কে সুন্দরী, কে ললিত, কেসিএম, কে লিমা, কে লালিমা, নীলকণ্ঠ প্রজাতির আলু চাষ করে সম্প্রতি সাফল্য লাভ করেছেন তাঁরা।
এ ছাড়াও আরও পবহু প্রজাতি রয়েছে, যেগুলি এখনও নামকরণ হয়নি, নম্বর দিয়ে সেগুলি চিহ্নিত করা রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল পট্যাটো সেন্টার ও পশ্চিমবঙ্গ কৃষি দফতরের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহফুজবাবু।
পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় যেখানে সামান্য সমতল জায়গা পাওয়া যাবে, সেখানেই মাটি পরীক্ষা করে আলুর চাষ করা সম্ভব।
বছরে তিনবার এই আলুগুলি চাষ করা সম্ভব। সাড়ে ৬ থেকে সাত বর্গ মিটার জায়গা পেলে বা কম জমিতেও আলু চাষ করা যেতে পারে।
বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া হওয়ায় পরিচর্যা ও নজরদারির ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা নেই। তাই সহজেই আলু ভালো গুণমান লাভ করতে পারে।
তা ছাড়া আলু চাষে খুব একটা সারের প্রয়োজন হয় না। তবে শিলাবৃষ্টি হলে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে।
সে কারণে বেশ কিছু জায়গায় পলি হাউস তৈরি করেও আলুর চাষ করা হচ্ছে। তাতে মাথায় শেড থাকায় অতিবৃষ্টি কিংবা শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে ফসল।
পাহাড়ের মাত্র কয়েকটি জায়গাতে আপাতত আলুর চাষ হয়েছে। আরও বহু জায়গায় চাষের সুযোগ রয়েছে।
সে সমস্ত জায়গাগুলিকে চাষের আওতায় এনে বাণিজ্যিকভাবে চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
এখন যেগুলো উৎপাদন হচ্ছে সেগুলি সবই সামার পট্যাটো শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভাবনীয় আলু চাষে সাফল্য লাভ করে অত্যন্ত খুশি। তাঁরা ভাবতে পারেননি এভাবে বাড়ির কাছে আলু চাষ করা সম্ভব।
একবার সাফল্যের স্বাদ লাভ করে তাঁরা অবশ্য় বিভিন্ন প্রজাতির আলু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চান। খুব বেশি বাইরে পাঠাতে না পারলেও
পাহাড়ের বাজার কিংবা শিলিগুড়িতে ভালো আলু নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন এক্সক্লুসিভ আলু বিপণি করা যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানা গিয়েছে।
এই আলুগুলি সামান্য সার প্রয়োগ করা হলেও মূলত ভেষজ বা হার্বাল। তাই উপকারের দিক থেকেও গুণমান অনেকটাই বেশি।
তা ছাড়া শিলিগুড়িতে চার্চ রোডে প্রতি রবিবার একটি সানডে হাট বসে। যেখানে ভেষজ জিনিসের সম্ভার থাকে এবং বিক্রি হয়।
সেখানেও তাঁরা তাঁদের পণ্য় নিয়ে হাজির হতে পারেন। ফলে সুযোগ একটা থাকছে তাঁদের কাছে। যা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
এমনিতেই বিভিন্ন ধরণের শাক সব্জি, স্কোয়াশ, কমলালেবু, ভুট্টা, চা পাতার স্বগর্রাজ্য বলে পাহাড়কে চেনে মানুষ। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ও
সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রয়োগ রীতি ঠিক থাকলে মরুভূমিতেও যে ফুল থুড়ি আলু ফলতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটি।
আপাতত স্বল্প সংখ্যক মানুষ আলু চাষে ব্রতী হয়েছেন। আরও মানুষ এঁদের সাফল্যে অনুপ্রেরণা লাভ করলে কমিউনিটি কালটিভেশন করা সম্ভব হবে।
বিশেষ করে পাহাড় পাদদেশ এলাকা রোহিনী, সুকনা, দুধিয়া, পানিঘাটা, গারিধুরা এলাকায় আলু চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
সঠিক পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা থাকলে পাহাড়ের পাদদেশ এলাকাগুলিতে প্রচুর পরিমাণ উন্নত প্রজাতির আলু তৈরি হতে পারে।
সরকারে কাজ তাঁদের সাহায্য করার পাশাপাশি উৎসাহিত করা। যা তাদের আধিকারিকরা পুরোদস্তুর চালিয়ে যাচ্ছেন।