সাম্প্রতিক গবেষণায় খুবই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। মশার নাকি পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না। ঘুমের অভাবে 'অসুস্থ' মশার দল নাকি 'রক্তের স্বাদ' পর্যন্ত ভুলে গিয়েছে। নতুন এক গবেষণার রিপোর্টে এমনই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ঘুমের অভাবে শুধু মানুষই কষ্ট পায় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তা কিন্তু নয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব কীটপতঙ্গের উপরও প্রভাব ফেলে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মশা থেকে মাছির নানা সমস্যা ধরা পড়েছে পবেণায়। যেমন, মৌমাছির উড়তে সমস্যা হয়, মাছির স্মৃতিশক্তিও ক্ষীণ হতে থাকে।
ঘুমের অভাবজনিত সমস্যায় মশার স্বাদ হারানো নিয়ে করা এই গবেষণাটি সম্প্রতি জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। সিনসিনাটি ইউনিভার্সিটির রোগ বাস্তু বিশেষজ্ঞ ওলুওয়াসুনে আজেই বলেন, আমরা সবাই জানি মশা কতটা রক্ত পছন্দ করে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি তারা ঘুমোতে পছন্দ করে।
বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে মশার সার্কাডিয়ান ছন্দ অধ্যয়ন করতে চেয়েছিলেন। এর অর্থ হল শরীরের অভ্যন্তরে উপস্থিত অভ্যন্তরীণ ঘড়ি যা মশার ঘুম এবং জেগে থাকার সময় নির্ধারণ করে। এর থেকেই জানা যায় যে মশা কখন জেগে থাকে বা কতটা রক্ত পান করছে অথবা রোগ-জীবানু কতটা ছড়াচ্ছে।
সার্কাডিয়ান ছন্দের মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা ম্যালেরিয়ার মতো অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারেন। কারণ, রাতে জেগে থাকা মশার থেকেই এসব রোগ হয়। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, মশারা এখন দিনেও এমন রোগ ছড়াচ্ছে, যা তারা রাতে ছড়াত। অর্থাৎ, তাদের ঘুম থেকে ওঠার টাইম টেবিলের অবনতি হয়েছে।
গবেষণাগারে এই রক্তপান শয়তানদের ঘুমের চক্র পড়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। কারণ খাবার অর্থাৎ রক্তের উপস্থিতিতে মশারা পুরোপুরি ঘুমাতে পারে না। গবেষকদের দাবি, মশারা অর্ধেক ঘুমিয়ে থাকে, অর্ধেক জেগে থাকে।
কারণ, রক্তের গন্ধ মশাদের ঘুমাতে দেয় না। মশারা যখন ঘুমায়, তখনও তাদের দেখতে বাকি জেগে থাকা মশার মতোই দেখায়। এই সময় তারা মূলত তাদের শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা করে।
ইন্ডিয়ানার নটর ড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কাডিয়ান জীববিজ্ঞানী স্যামুয়েল রুন্ড বলেন, পোকামাকড়ের সার্কাডিয়ান চক্র অধ্যয়ন করা খুবই কঠিন কাজ। কৃমি ঘুমাচ্ছে কি না তা জানা খুব কঠিন। রোগ বাস্তুবিদ ওলুভাসুন আজেই এবং তার সহকর্মীরা ঘুমন্ত মশা পর্যবেক্ষণ করেছেন। দলটি তিন প্রজাতির মশা নিয়ে গবেষণা করেছে।
প্রথম প্রজাতির নাম এডিস ইজিপ্টি। তারা সারাদিন সক্রিয় থাকে। দ্বিতীয়- Culex pipiens, তারা সন্ধ্যায় সক্রিয়। তৃতীয় - অ্যানোফিলিস স্টিফেনসি, এটি রাতে রক্ত পান করতে পছন্দ করে। Oluvasune azei এই প্রজাতিগুলোকে খুব ছোট কাঁচের পাত্রে বন্দী করে রেখেছে। যার ভিতরে ক্যামেরা এবং ইনফ্রারেড সেন্সর লাগানো ছিল, যাতে মশাদের ওপর নজর রাখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ঘণ্টা পর মশারা ঘুমাতে শুরু করে। তবে ল্যাবে রাখা মানুষের রক্তের গন্ধ তাদের আকর্ষণ করেনি। ল্যাবে দুই ধরনের মশা ছিল। প্রথমে যাদের ঘুম সম্পূর্ণ ছিল। অন্যরা যারা ঘুমাতে পারেনি। তারা যেভাবে ঘুমিয়েছিল, তারা মানুষের পায়ে আক্রমণ করেছিল। অথচ যারা পর্যাপ্ত ঘুম পাননি। সে চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকে। রক্তের গন্ধও তাকে উত্তেজিত করতে পারেনি।