
দিল্লিতে পোষা কুকুরের আক্রমণে গুরুতর জখম হল ছয় বছরের এক শিশু। রবিবার সন্ধ্যায় প্রেমনগরে বাড়ির সামনে খেলছিল সে। আচমকাই প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একটি 'পিটবুল'(Pitbull) প্রজাতির কুকুর। মুহূর্তের মধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুটির উপর। কামড়ে তার ডান কান ছিঁড়ে নেয় কুকুরটি। গোটা বিষয়টিতে থতমত খেয়ে যান কুকুরের মালিক। কোনওরমকে কুকুরের বকলেস ধরে টেনে নিয়ে যান মহিলা। তবে ততক্ষণে রক্তাক্ত অবস্থা শিশুটির। গোটা ঘটনাই সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, আক্রান্ত শিশুর বাবা কির্তিনগরের একটি কারখানায় কাজ করেন। ঘটনার সময় তিনি বাড়ি ছিলেন না। পাড়ার রাস্তায় খেলছিল শিশুটি। সেই সময়ই এই ঘটনা। প্রতিবেশীরাই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রথমে তাকে রোহিনির বিএসএ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন সে।
পিট বুলের মালিক রাজেশ পাল নামের এক স্থানীয় দর্জি। প্রতিবেশীদের দাবি, আসল মালিক রাজেশের ছেলে সচিন। বছর দেড়েক আগে তিনি শখ করে এই পিটবুলটি বাড়িতে এনেছিল। কিন্তু এখন সচিন জেলবন্দি। তাঁর খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে। স্থানীয়দের কথায়, কুকুরের আসল মালিক জেলে। এমতাবস্থায় কুকুরটিকে সারাক্ষণ বাড়িতে বেঁধে রেখে দেওয়া হয়। ঠিক করে 'সোশ্যালাইজ' করা হয়নি। নেই যত্ন-আত্তিও। ফলে ভয়ঙ্কর হিংস্র হয়ে উঠেছে কুকুরটি।
গুরুতর জখমের কথা জানিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন শিশুটির বাবা। মেডিক্যাল রিপোর্ট সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে কুকুরের মালিক রাজেশ পালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পিটবুল কি রাক্ষুসে কুকুর?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পিটবুলের চোয়াল অত্যন্ত শক্তিশালী। এদের কামড়ে মাসলের ডিপ টিস্যু পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মুখমণ্ডল বা গলায় কামড়ালে বিপদ আরও বাড়ে।
ডগ ট্রেনাররা বলছেন, কুকুর নানা ধরনের হয়। কিছু কুকুর ওয়ার্ক ডগ ধরনের। অর্থাৎ কাজ করার জন্যই এদের যুগ যুগ ধরে ব্রিড করা হয়েছে। এমন কুকুরের তালিকায় পিটবুল, ডোবারম্যান, রটওয়েলার, জার্মান শেফার্ড পড়ছে। এই ধরনের কুকুররা পাহারা দেওয়া, খেলা দেখানো, পুলিশের কাজের জন্য পারফেক্ট। এই জাতের কুকুরদের বুদ্ধি দারুণ। সঙ্গে প্রচুর এনার্জি। তাই ছোট থেকে প্রচুর লোকের সঙ্গে না মেশালে এদের মধ্যে একটি অতি সন্দেহ বাতিক স্বভাব জন্মায়। তাছাড়া রোজ এদের নিয়ে খেলা, দৌড়, পরিশ্রম না করালে এরা 'খেঁকুড়ে' হয়ে ওঠে।
তাই সাধারণ বাড়িতে এগুলি করানো সম্ভব না হলে এই জাতের কুকুর এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। মালিকেরও এগুলি সামলানোর মতো দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, বুদ্ধি ও গায়ের জোর প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় না। স্রেফ ভুল ধারণা ও শখের বসে অনেকে টাকা দিয়ে এই জাতের কুকুর ছানা কিনে আনেন। তারপরেই চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার খেসারত দিতে হয় কোনও নিষ্পাপ ব্যক্তিকে।