বিদেশিনী স্ত্রীর সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় না। প্লেনে চড়ার মত সামর্থ্য নেই। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাটা কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারেননি। অনেক কষ্টে পয়সা জমিয়ে একটি সাইকেল কিনেছিলেন। সেই সাইকেলে চেপেই স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ভারত থেকে ইউরোপে পাড়ি এক ব্যক্তির। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। মানে বাস্তবে এমনটা ঘটেছে। আর এই কাহিনী আমার-আপনার নয়। ডঃ প্রদ্যুম্না কুমার মহানন্দিয়ার। তিনি পেশায় একজন আর্টিস্ট। দিল্লির এক আর্ট কলেজে পড়াশোনা। সম্প্রতি এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের সেই প্রেমকাহিনীর কথা জানিয়েছেন মহানন্দিয়া। 1975 সালে প্রেম শুরু। সেই সময় মহানন্দিয়া আর্ট কলেজে পড়াশোনা করছিলেন। একেবারে নিন্ম-মধবিত্ত পরিবারে জন্ম তার। সংসারে খুবই অভাব ছিল। আর সেসবের মধ্যেই চিত্রশিল্পী হিসেবে একটু একটু করে নিজেতে তৈরি করছিলেন মহানন্দিয়া। উঠতি শিল্পী হিসেবে একটু একটু নাম-ডাকও হচ্ছিল। মহানন্দিয়ার আঁকার কথা সাত সাগর আর তেরো নদীর পারে কোনওভাবে পৌঁছে গিয়েছিল। নামে সুইডেনে। মহানন্দিয়ার কথা জানতে পেরে একটি পোর্ট্রেট বানানোর জন্য ভারতে এসেছিলেন শার্লট নামে এক বিদেশিনী। সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের প্রেমকাহিনী। জানা যায় বাল্টিক সাগরের তীরঘেঁষা সুইডেনের শহরে সাইকেল চালিয়ে গিয়েছিলেন প্রদ্যুম্ন কুমার মহানন্দিয়া। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে প্রায় 6 হাজার কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছিলেন ওডিশার প্রত্যন্ত গ্রামের সেদিনের তরুণ। ছবির হাত ধরে আলাপ, তারপর বন্ধুত্ব, সবশেষে গভীর প্রেম। যখন শার্লটের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছিল, তখনই দু'জনে ঠিক করেন, তারা বিয়ে করবেন। মহানন্দিয়ার বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেন শার্লট। তারপর শুভ দিনক্ষণে সমস্ত রীতি মেনে বিয়ে হয় তাঁদের। বিয়ের ঠিক পরেই সুইডেনে ফিরে যান শার্লট। কিন্তু মহানন্দিয়া পড়াশোনা শেষ না করে বিদেশে যাবেন না বলেই ঠিক করেন। কয়েক বছরের মধ্যে কোর্স শেষ হয় শিল্পীর। এবার স্ত্রী'র কাছে পৌঁছনোর পালা। কিন্তু বিমানের টিকিট কাটার মতো সামর্থ্য নেই। অবশেষে সাইকেল চালিয়েই স্ত্রী'র শহরে পৌঁছবেন বলে ঠিক করেন। 1977 সালে এপ্রিলে যাত্রা শুরু হয়। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক পেরিয়ে চার মাস পর সুইডেনে পৌঁছন তিনি। প্রতিদিন 70 কিলোমিটার সাইকেল চালাতেন। শত বাধা পেরিয়ে ভালবাসার মানুষের কাছে পৌঁছনোর সেই স্মৃতি সম্প্রতি ভাগ করে নিয়েছেন শিল্পী। সুইডেনেই এখন তাদের সুখের সংসার। দুই সন্তান রয়েছে মহানন্দিয়া ও শার্লটের।