Russia-Ukraine War: খোঁজ মিলছে না ইউক্রেনের ডাক্তারি পড়ুয়া ছেলের। ধ্বংসস্তুপ কিয়েভে বাঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল কিয়েভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম হামিদ পারভেজ। খাওয়া নেই, জল নেই। শেষ যোগাযোগ হলে বাবা মাকে জানিয়েছিলেন বাঙ্কারে লুকিয়ে আছে, খাবার শেষ। বাইরে অনবরত গোলা বর্ষণ আর সাইরেনের আওয়াজ। এর পরেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
টানা কয়েকদিন ধরে ছেলের আর খোঁজখবর পাননি
টানা কয়েকদিন ধরে নিজের ছেলের আর খোঁজখবর পান নি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের মিটনা হাইস্কুলের শিক্ষক মহম্মদ মোমিনুদ্দিন। ছেলের খোঁজ না পেয়ে চরম উৎকন্ঠায় আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। আতঙ্কের ছাপ গোটা বাড়ি জুড়ে। যখন বিভিন্ন জায়গায় একে একে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ুয়াদের ঘরে ফেরার খবর মিলছে তখন মাসুম হামিদ পারভেজের কোনও খবর নেই। সরকারি ভাবেও কোনও তথ্য মেলেনি। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলছেন বাবা মোমিনুদ্দিন।
আরও পড়ুন ঃ স্ত্রীকে বিবাহবার্ষিকীতে চাঁদে জমি কিনে দিলেন যুবক, প্রতি বিঘা মাত্র ৮৬ টাকা
ছেলের পথ চেয়ে থাকা
মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পাড়া মসজিদপাড়ার বাসিন্দা মাসুম হামিদ পারভেজ। এই মুহূর্তে যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে রয়েছেন। মাসুম এমবিবিএসের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাবা মহম্মদ মোমিনউদ্দিন স্থানীয় একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। মা হামেদা খাতুন গৃহবধূ। মাসুমের ২ দিদি রয়েছে। বিবাহিত এবং এক ছোট ভাই রয়েছে। মাসুমের জন্য এখন দুশ্চিন্তায় সকলেই। তাদের বাড়ির ছেলে যাতে ঠিকমতো বাড়ি ফিরে আসে, সেই অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয়েছেন বাবা-মা।
যুদ্ধের পর কয়েকবার কথা, তারপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ফোনে এর আগে রোজ কথা হলেও কিছু দিন থেকে ঠিকঠাক কথা হচ্ছে না। ২৪ তারিখ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই মাসুম তার বন্ধুদের সাথে হোস্টেল থেকে গিয়ে আশ্রয় নেয় একটি বাঙ্কারে। খাবার-দাবার বলতে সাথে থাকা ফল এবং বিস্কুট। তাও শেষ হয়ে গেছে কয়দিনে। নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে কয়েকদিন ধরে মাসুমের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলতে পারছে না তার বাবা-মা। ফেরার জন্য সে কিছু ব্যবস্থা করতে পেরেছে কি না সেই বিষয়েও বুঝতে পারছে না বাড়ির লোক।
যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে, তাই আশঙ্কা
এদিকে দিন যত বাড়ছে ইউক্রেনের যুদ্ধ ততই ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। রুশ সেনার দখলে চলে যাচ্ছে ইউক্রেনের একের পর এক শহর। ভারত সরকার 'অপারেশন গঙ্গা' নামে একটি অভিযানের মধ্য দিয়ে দেশের ছেলে মেয়েদের দ্রুত ফেরাচ্ছে। বহু ভারতীয় ছাত্র পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী পশ্চিমি দেশগুলো থেকে বিমান ধরছে। এরকম অবস্থায় বাবা,মায়ের আর্জি তাদের ছেলে এবং প্রত্যেক ছাত্রই যাতে সঠিক ভাবে ফিরে যায় নিজের ঘরে।
খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল ছেলের
মাসুমের বাবা মোমিনুদ্দিন বলেন, ছেলের বছর চতুর্থ বর্ষ। ১৫ তারিখ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসত। কিন্তু তার মাঝেই যুদ্ধ বেধে গেল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ছেলে তার সঙ্গীদের সাথে বাংকারে থাকছে। খাওয়ার বলতে সাথে থাকা কিছু শুকনো খাওয়ার। ঠিক ভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমরাও ছেলের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলতে পারছি না। আমরা শুধু চাইছি আমার ছেলে এবং ওর বন্ধুরা সকলে যাতে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে যায়।"
পরীক্ষা দিয়ে ফিরবে বলেছিল
মাসুমের মা হামেদা খাতুন বলেন, ছেলে ভেবেছিল পরীক্ষাটা শেষ করে আসবে। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ বেধে গেল। এরকম অবস্থায় ওরা তো বেশিদিন থাকতে পারবে তো! তাই আমরা চাইছি সকলে দেশে ফিরে যাক। ছেলে না ফেরা পর্যন্ত প্রবল দুশ্চিন্তায় আছি। সঠিক ভাবেে কথা হচ্ছে না। মায়ের মন তাই ভারাক্রান্ত।