১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট গোটা দেশ তখন স্বাধীনতার আনন্দে উত্তাল। সব জায়গায় ব্রিটিশের ইউনিয়ন জ্যাক চিরকালের মতো যখন নেমে গিয়েছে, দেশে তখন সব জায়গায় উড়ছে তেরঙা জাতীয় পতাকা। কিন্তু ভারতেরই অনেক জায়গায় তখন পাকিস্তানের পতাকা উড়েছিল। উত্তরবঙ্গের কিছু অংশেও একইভাবে উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা। আসলে তখনও স্পষ্ট হয়নি, কোন এলাকা কোন দেশের সঙ্গে জুড়ছে। মনে করা হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়েছে এই এলাকা।
আরও পড়ুনঃ Krishna Janmashtami 2022 Date: ১৮ না ১৯? কবে জন্মাষ্টমী, রইল শুভ মুহূর্ত ও সৌভাগ্যযোগ
কবে ভুল ভাঙল?
১৭ অগাস্ট জন র্যাডক্লিফের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। তাঁর চূড়ান্ত রিপোর্ট জানার পর, তখন এলাকাগুলি থেকে পাকিস্তানের পতাকা খুলে, অবশেষে ওড়ানো হয় ভারতের জাতীয় পতাকা।
দার্জিলিংয় চেয়েছিল পাকিস্তান
ইতিহাসবিদদের মতে, দেশ ভাগের আলোচনার সময় দার্জিলিং জেলা নিজেদের দেশের অংশ করতে চায় পাকিস্তান। দার্জিলিংয়ের বনাঞ্চল থেকে প্রচুর কাঠ পাওয়া যাবে বলে তারা নৌকা। প্রাথমিক পর্যায়ে সে সম্মতিও মেলে। মুসলিম লিগ ১৯৪৭ এর ১৫ অগাস্ট পাকিস্তানের পতাকা তুলে দেয় দার্জিলিংয়ে। সে পতাকা দু’দিন পর্যন্ত ওড়ে। জলপাইগুড়ি আদিবাসী আর রাজবংশী প্রধান ছিল। তাঁরাও পাকিস্তানের পক্ষে ছিল।
জলপাইগুড়ি ও বালুরঘাটেও ওড়ে পাকিস্তানের পতাকা
জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির নবাব মোশারফ হোসেন ছিলেন মুসলিম লিগে। তিনিও চেষ্টা করেন, জলপাইগুড়ি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক। তাই জলপাইগুড়িরও কিছু জায়গায় ১৫ অগাস্ট উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা। বালুরঘাট নিয়েও ছিল কনফিউশন। ফলে, ১৫ অগাস্ট এখানে সরকারিভাবে কোনও পতাকা ওড়েনি। তবে মহিলা কংগ্রেসের নেতৃত্বে বালুরঘাটের কংগ্রেস পাড়ায় জাতীয় পতাকা তোলা হয়। ১৮ অগাস্ট বালুরঘাটের সঙ্গে রায়গঞ্জ, গোয়ালপোখর ভারতভুক্ত হয়। ১৮ অগস্ট মহকুমাশাসকের দফতরে ভারতের জাতীয় পতাকা ওঠে। মালদহ ও মুর্শিদাবাদেরও মুসলিম আধিক্যের জন্য পাকিস্তানভুক্তির কথা ছিল। তাই সেখানেও পাকিস্তানের পতাকা উড়েছিল।
মুসলিম লিগ পাক পতাকা তোলে নাগরাকাটাতেও
ডুয়ার্সের নাগরাকাটার সুলকাপাড়াতে মুসলিম লিগ দাপট ছিল বেশি। তারা তাড়াতাড়ি স্বাধীনতার দিন পাকিস্তানের পতাকা তুলে দেয়। দুদিন পর অবশ্য বিষয়টি জানা যায়, এটি পাকিস্তান নয় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তারপর পাকিস্তানের পতাকা খুলে ফেলা হয়। ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল।