শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়তেই শুরু হয়েছে একের পর এক পদত্যাগপর্ব। বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সেদিন রাতেই খবর পাওয়া যায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দল ছেড়েছেন। শুক্রবারও সেই ধারা অব্যাহত। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলেছেন তাঁর একের পর এক অনুগামী। এদিন বারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত ছাড়াও শুভেন্দু অনুগামী হিসাবে পরিচিত পুরুলিয়ার আরও দুই নেতার তৃণমূল ছাড়ার খবর সামনে এসেছে। আর এই আবহেই দিপালী বিশ্বাসের ভবিষ্যত নিয়ে ক্রমেই জল্পনা বাড়ছে। একসময় সিপিএম ছেড়ে শুভেন্দুর হাত ধরেই তৃণমূলে প্রবেশ করেছিলেন দীপালি। সেখান থেকে গাজলের বিধায়িকা। কিন্তু কালের নিয়মে দীপালিকে একসময় তৃণমূলে নিয়ে আসা শুভেন্দুই আজ দলত্যাগী। তাই শুভেন্দু অনুগামী হিসাবে পরিচিত দীপালি কী করবেন তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই শুরু হয়ে গিয়েছে জোর জল্পনা।
দীপালির তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার সম্ভাবনাকে আরও উস্কে দিয়েছে তাঁর স্বামী রঞ্জিত বিশ্বাসের পদত্যাগ। মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন রঞ্জিতবাবু। ইতিমধ্যে লিখিত পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন তিনি। তাই দীপালিও এবার শুভেন্দুর পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন এমন জল্পনা ক্রমেই বাড়ছে। যদিও নিজের দলত্যাগ নিয়ে একেবারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন দীপালি।
২০১৬ সালে দলবদল করে তৃণমূলে এসেছিলেন দীপালি। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে নয়, ভোটপর্ব মিটতে। প্রবল তৃণমূল হাওয়ার মধ্যেও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মালদহে ১২টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জয়ী হয়েছিল বিরোধী বাম-কংগ্রেস। তৃণমূল গনি খান চৌধুরীর জেলায় খাতাই খুলতে পারেনি। মালদহে আসন না পেলেও বিরোধী বিধায়ক শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন মালদহ জেলার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হাত ধরেই কলকাতায় ২১ জুলাই মঞ্চে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন গাজলের বাম বিধায়িকা দীপালি। তিনিই মালদহে দলবদলের তালিকায় ছিলেন প্রথম। এখন শুভেন্দু দল ছাড়তে তাই তাঁর অনুগামী হিসাবে পরিচিত দীপালিও সেই পথে হাঁটবেন বলে ক্রমেই জল্পনা বাড়ছে।
সূত্রের খবর, দলবদলের সময় দীপালিকে রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। গাজল পুরসভা, মহিলা কলেজ, দমকল কেন্দ্র, বাসস্ট্যান্ড এবং গাজল–কলকাতা বাস পরিষেবার চালুর কথাও বলা হয়েছিল হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় এমনিতেই ঘনিষ্ঠ মহলে দলের উপর ক্ষোভও উগড়ে দিয়েছেন দীপালি। বর্তমানে গাজলের বিধায়িকা ও তাঁর স্বামী রঞ্জিত বিশ্বা দু'জনেই কলকাতায় রয়েছেন বলে খবর। এদিন নিজের পদত্যাগের কথা রঞ্জিত বিশ্বাস স্বীকার করলেও দীপালি কিছুতেই ফোন তোলেননি। আর তাতেই আরও বেড়েছে রহস্য। মালদহ জেলার রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিধায়িকা দিপালী বিশ্বাস এবং তার স্বামী রঞ্জিত বিশ্বাসের এবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আগামী কাল অমিত শাহ আসছেন রাজ্যে। এ দিনই তাঁরা বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন বলে খবর। এ ব্যাপারে মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সুমালা আগরওয়ালা জানিয়েছেন, আমাদের কাছেও এ সংক্রান্ত খবর আছে। দল পুরো বিষয়টির ওপর নজর রাখছে। দলের তরফে ইতিমধ্যেই দীপালি ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। দীপালির ক্ষোভের কথআও স্বীকার করে নিয়েছেন সুমালা। জানিয়েছেন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে, আশা রাখি আলোচনার মাধ্যমে সমস্তটা সমাধান হয়ে যাবে।
এদিকে খবর রটেছে আপাতত ১০ বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার অমিত শাহের সভাতেও উপস্থিত থাকতে পারেন তিনি। শুভেন্দুর সেই ১০ বিধায়কের তালিকায় দীপালিও আছেন কিনা, তার উত্তর এখন সময়ই দেবে।