
কালীপুজোর রাতে বোলপুর থানায় বক্স বাজিয়ে নাচানাচি ও হুল্লোড়ের ঘটনায় বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, থানার আইসি লিটন দাসকে এই ঘটনায় শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্তও। সূত্রের দাবি, সেই রাতের নাচগানের ভিডিও ইতিমধ্যেই প্রশাসনের হাতে পৌঁছেছে। ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরেই পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গিয়েছে, বুধবার রাত বারোটা পর্যন্ত থানার ভিতরেই তারস্বরে বক্স বাজিয়ে চলে নাচগান ও হইহুল্লোড়। এতে ক্ষুব্ধ হন এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, যেখানে সাধারণ মানুষ ডেসিবলের সীমা লঙ্ঘন করলে পুলিশের তরফে আইনি পদক্ষেপ করা হয়, সেখানে থানার মধ্যেই আইন ভাঙার এই অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেই।
বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, 'আমরা পুজো বা উৎসব পালনের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু থানাগুলিতে যেভাবে এই ধরনের কাণ্ড ঘটছে, তা বলা দায়।' এ নিয়ে পুলিশ সুপারের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও, এই খবর লেখা পর্যন্ত তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। পুলিশের তরফেও এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি মন্তব্য করা হয়নি।
রাজ্যের যেকোনও জায়গায় তারস্বরে ডিজে বক্স বাজানো একেবারেই নিষিদ্ধ। কোর্টের নির্দেশ মত জোরে মাইক বাজিয়ে রাত দশটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করা যাবে। তারপর থেকে মাইক বাজানো যাবে না। কিন্তু কোর্টের এই নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিকে দিকে বাজছে DJ, মাইক। পরিবেশ দূষণের তোয়াক্কার বালাই নেই। রাজ্য সরকারও এই নিয়ে নোটিফিকেশন জারি করেছিল। কিন্তু তাতেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আর হবেটাও বা কী করে। পুলিশই যদি এই ভুলটা করে তাহলে কেমন হয়? মানে রাতভর তারস্বরে DJ বাজিয়ে যদি অনুষ্ঠানে মত্ত থাকে, তাহলে অন্যদের মানা করবে কী করে? সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে। থানার মধ্যেই ডিজের তাণ্ডবে অতিষ্ট হয়ে উঠল এলাকাবাসীরা। থানায় কালীপুজোর রাতে হুল্লোড় অনুষ্ঠানে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইনকানুন সর্বনেশে— এই প্রবাদটাই যেন বাস্তব হয়ে উঠল। কালীপুজোর রাতে আইন রক্ষাকারী সংস্থার ঘেরাটোপেই বেজে উঠল ডিজের তুমুল হুল্লোড়। আর তাতেই ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে বোলপুর থানার প্রাঙ্গণেই কালীপুজো উপলক্ষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সন্ধ্যা থেকেই গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা রূপ নেয় এক উন্মত্ত উৎসবে। থানার মধ্যেই ছয় থেকে আটটি বড় ডিজে বক্স বাজিয়ে তারস্বরে গান চলছিল। মঞ্চে গান গাইছিলেন পুরুষ ও মহিলা শিল্পীরা, আর নীচে গানের তালে চলছিল উদ্দাম নাচ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত প্রায় দু’টো পর্যন্ত এই ডিজের তাণ্ডব চলে। আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা এই অত্যাচারের জেরে কার্যত অতিষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু, থানার মধ্যেই যখন এই আয়োজন, তখন অভিযোগ করবে কে? তাই প্রবাদবাক্যের মতোই বাঘে ধান খেলে তাড়ায় কে!— এমনটাই বলছেন এলাকাবাসীরা।
অভিযোগ, সেখানা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই থানার সঙ্গে যুক্ত বা আমন্ত্রিত ব্যক্তি। যদিও তাঁরা বেশিরভাগই ছিলেন সাদা পোশাকে, তাই পুলিশকর্মী না সাধারণ আমন্ত্রিত, তা স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, এবছর কালীপুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে রাজ্যজুড়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন বিশেষ তৎপরতা নিয়েছিল। রাজ্য পুলিশ থেকে পরিবেশকর্মীরা সক্রিয় ছিলেন বেআইনি শব্দবাজি রুখতে। এমনকি, কন্ট্রোল রুম ও টোল ফ্রি নম্বর চালু করে অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থাও করা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শব্দবাজি ও ডিজের বিরুদ্ধে অভিযোগও জমা পড়ে। কিন্তু সেই আবহেই খোদ থানার মধ্যেই ডিজের তাণ্ডব, প্রশাসনের ভাবমূর্তিতে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং এই ঘটনায় বলেন- প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানাকে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। তাঁদের মতে পুলিশ বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।