অবশেষে সপ্তাহের শুরুতেই সুখবর। গোটা রাজ্য থেকে বিদায় নিল বর্ষা। সোমবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর এই ঘোষণা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সিকিম, ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকেও বর্ষা বিদায় নিয়েছে। ওড়িশা এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের একাংশ থেকেও বর্ষা এ দিন বিদায় নিয়েছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছিল, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সারা পূর্ব ভারতে বর্ষাকাল আর থাকবে না। নতুন করে দুই বঙ্গেই বৃষ্টির জোরালো সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ অক্টোবরের মধ্যে মৌসুমি বায়ু সম্পূর্ণরূপে বাংলা ছেড়ে যেতে পারে। এর ফলে উত্তর দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস রাজ্যে অবাধে প্রবাহিত হতে পারে, যার ফলে তাপমাত্রার পারদ নেমে আসবে।
অক্টোবর মাস শুরু হতেই আবহাওয়ায় পরিবর্তন স্পষ্ট
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে নতুন করে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তেমন প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা আর নেই। মোটের ওপর দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় আবহাওয়া আজ থেকেই শুষ্ক হতে শুরু করবে। আপাতত কয়েকদিন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকবে।
শীত পড়বে কবে?
হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে। এমনিতেই এখন ভোরের দিকে আর সন্ধ্যের পর থেকে বাড়ির বাইরে বেরোলে মৃদু শীতের অনুভূতি শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে নিম্নমুখী রাজ্যের তাপমাত্রা। সারাদিনে তা বিশেষ বোঝা না গেলেও, ভোরের দিকে শীতের আগমনের ইঙ্গিত স্পষ্ট। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সময় যত এগোবে এই শীতের শিরশিরানি ততই বাড়বে। এমনিতেই নভেম্বর মাসের শুরু থেকে শীতের শিরশিরানি বঙ্গে অনুভূত হতে শুরু করে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। উত্তর দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস অবাধে রাজ্যে প্রবেশ করবে। এর ফলে দিনের সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হ্রাস পাবে।
চলতি সপ্তাহে প্রতিটি জেলার আবহাওয়া কেমন থাকবে?
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, আপাতত ভারী বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই উত্তরবঙ্গে (। তবে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের মতো পার্বত্য এলাকাগুলিতে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। সকালের দিকে থাকতে পারে হালকা কুয়াশার সম্ভাবনা। তবে মালদা, দুই দিনাজপুরে শুষ্ক আবহাওয়াই থাকবে। অন্যদিকে, দক্ষিণবঙ্গে চলতি সপ্তাহে বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া থাকবে বলেই পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের। বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি হতে পারে।
বৃষ্টি থেকে পুরোপুরি মুক্তি?
বর্ষাকাল বিদায় নেওয়া মানে, বৃষ্টি থেকে পুরোপুরি মুক্তি কিন্তু নয়। সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে, বর্ষা বিদায়ের পরেও দুর্যোগ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বর্ষা বিদায় নেওয়ার পর অক্টোবর-নভেম্বর, এই দুটি মাস বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হিসেবে পরিচিত। এইসময়ে দুটি সমুদ্রে কোনও নিম্নচাপ তৈরি হলে তা শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আপাতত ২৩ অক্টোবর কালীপুজো-ভাইফোঁটা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব উপকূল লাগোয়া রাজ্যগুলিতে সেরকম কোনও আশঙ্কা নেই। জানিয়েছে IMD। ওইসময়ের মধ্যে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ তৈরি হবে। তবে যে জায়গায় নিম্নচাপ দুটি তৈরি হবে, তার প্রভাবে বৃষ্টি বাড়বে মূলত দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকে ও কিছুটা পশ্চিম ভারতে। প্রথম দুটি নিম্নচাপের কোনোটি থেকে ঘূর্ণিঝড় হবে কি না সেই ব্যাপারে আবহাওয়া দথতর এখনও কিছু জানায়নি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ পূর্ব উপকূলে এরপরও থাকবে। মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। কারণ নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পর বঙ্গোপসাগরে কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে সেটির দক্ষিণ অন্ধ্র বা তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ঘূর্ণিঝড় না-হলে পুবালি বাতাসের সক্রিয়তা বৃদ্ধি, পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব প্রভৃতি কারণে বর্ষা বিদায়ের পর রাজ্যে অসময়ের বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রসঙ্গত, অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অসময়ের বৃষ্টি চাষআবাদের ভীষণ ক্ষতি করে। কারণ সেইসময় পাকা ধান আর শীতের সবজিতে মাঠ ভরা থাকে।
কলকাতার আবহাওয়া
কলকাতায় আজ মূলত পরিষ্কার আকাশ থাকবে, কখনও আংশিক মেঘলা। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ৩১.৬ ডিগ্রি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৬ থেকে ৯১ শতাংশের মধ্যে থাকবে। মঙ্গলবার থেকে শহরে শুষ্ক আবহাওয়া স্থায়ী হতে শুরু করবে।