পানাগড়কাণ্ড নিয়ে এখনও চর্চা অব্যাহত। এরই মাঝে ধৃত বাবলু যাদবকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল পুলিশ। কয়েকদিন আগে পানাগড় বাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় জানে শেষ হয়ে যান হুগলির চন্দননগড়ের মেয়ে তথা নৃত্যশিল্পী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের। ঘটনার পর সুতন্দ্রার সহযাত্রীরা অভিযোগ করেন, মেয়েটিকে লক্ষ্য করে একটি সাদা রঙের গাড়ি থেকে ৫ জন যুবক নোংরা কথা বলেন, খারাপ অঙ্গভঙ্গিও করা হয়। এই সবেরই মাঝে ঘটে যায় অঘটন। ঘটনাস্থলেই জানে শেষ হয়ে যান সুতন্দ্রা। মেয়েটির সহযাত্রীরা আরও দাবি করেন যে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, কারণ সেই সময় জাতীয় সড়কে কোনওরকম পুলিশের নজরদারি ছিল না। ফলে ভয় পেয়ে ভুল পথে ঢুকে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় তাঁদের। ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। বিভিন্নমহল মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকেই অপর গাড়ির চালক তথা পানাগড়ের বাসিন্দা বাবলু যাদব ও তাঁর সঙ্গীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। যদিও পরে কাঁকসা থানার পুলিশ বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দাবি করে রেষারেষির কারণেই ঘটেছে দুর্ঘটনা। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অপর গাড়ির মালিক বাবলু যাদবকে ধরতে নানাভাবে ছক কষে তদন্তকারী দল। অবশেষে বৃহস্পতিবার তাঁকে পাকড়াও করে কাঁকসা থানায় আনা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজতে নিয়ে শনিবার কাঁকসা থানার পুলিশ বাবলু যাদবকে ঘটনার পুননির্মাণ করে।
পানাগড় বাজারে প্রবেশের মুখে অর্থাৎ জাতীয় সড়ক ছেড়ে পুরনো জাতীয় সড়কে ঢোকার মুখে দু'টি গাড়ির মধ্যে ঠিক কী হয়েছিল তা তদন্তকারীদের রাস্তায় নেমে দেখান বাবলু যাদব। এরপর সেখান থেকে বাবলু যাদবকে দুর্ঘটনস্থলে নিয়ে আসলে পুলিশের দুটি গাড়িকে পাশাপাশি রেখে বাবলু যাদবের কথা মতো দুর্ঘটনার পুননির্মাণ করা হয়। এরপর তাঁর গাড়ির সঙ্গে সুতন্দ্রার গাড়ির কোথায় সংঘর্ষ হয় তাও পুলিশকে দেখান ধৃত বাবলু যাদব। শনিবার দুর্ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর সময় রেষারেষির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সুতন্দ্রার গাড়ির চালক বাবলু যাদবের গাড়িতে ধাক্কা মেরে রাইস মিল রোডে ঢুকে একটি চায়ের দোকানের বাসের খুটিতে ধাক্কা মারে। সেখানেই গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকা সুতন্দ্রার মাথা গিয়ে লাগে বাঁশের খুঁটিতে। ঘটনাস্থলে জানে শেষ হয়ে যান সুতন্দ্রা।
এরপর সুতন্দ্রার গাড়ি সামনের একটি শৌচালয়ের দেওয়াল ভেঙে রাস্তার মাঝে উল্টে যায়। অন্যদিকে এরই মাঝে সুতন্দ্রার চালক বয়ান বদলে সংবাদমাধ্যমে জানায়, ঘটনার দিন সুতন্দ্রা তাঁকে বাবলু যাদবের গাড়ি ধাওয়া করতে বলে। তাঁর কথা মেনেই ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের উপরে গাড়ির গতিবেগ রেখে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ছেড়ে পুরনো জাতীয় সড়ক ধরে পানাগড় বাজারের দিকে যাওয়া বাবলু যাদবের গাড়িকে ধাওয়া করেন তিনি। রাইস মিল রোডে ঢোকার মুখে সুতন্দ্রার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে। অন্তত দুর্ঘটনার সময়কার হাড়হিম করা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সেটাই প্রমাণিত হয়। তবে প্রশ্ন উঠছে দুর্ঘটনার পর সুতন্দ্রার সহযাত্রীরা কেন অন্য কথা বলেছিলেন? তবে কি নিজেদের দোষ ঢাকতেই মিথ্যা গল্প সাজিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন তাঁরা?
এদিকে রেষারেষির কারণেই এই দুর্ঘটনা, এমনটা দাবি করে, সেই সূত্র ধরেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার যে ফরেন্সিক দল কাঁকসায় এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়, তাদের তদন্ত রিপোর্ট সামনে আসলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন পুলিশ অধিকারিকরা।
রিপোর্টার-অনিল গিরি